নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ জুলাই৷৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে সার্বিকভাবে প্রশাসন যতই রাজ্যকে বর্তমান তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে নেশামুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ার স্বপ্ণ দেখুক না কেন, সর্ষের মধ্যেই যখন ভূত লুকিয়ে থাকে তখন আদতে এই নেশা মুক্ত রাজ্য কিভাবে গঠন করা সম্ভব? এই প্রশ্ণটা কিন্তু দিনের পর দিন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে৷এবার তেলিয়ামুড়া রেল স্টেশন চত্বর থেকে উঠে আসা এক রোমহর্ষক ঘটনা৷ মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্য প্রশাসন যতই নেশার ভয়াবহতা থেকে যুব সমাজকে মুক্ত করতে উদ্যোগী হউক না কেন, একাংশ সরকারি কর্মী তথা দালালদের কারণে যুব সমাজ উচ্ছন্নে যেতে বসেছে৷
দীর্ঘদিন ধরেই খবর ভেসে বেড়াচ্ছিল রেল স্টেশনে কর্মরত রেল পুলিশ তথা জি.আর.পি পুলিশের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদতে বিভিন্ন রেলকে ব্যাবহার করে গাঁজা সহ বিভিন্ন প্রকার নেশা সামগ্রীর রমরমা পাচার চলছিল৷ শনিবার রাতের এক ঘটনার মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট তথ্য গুলোতে একপ্রকার সীলমোহর যে পড়লো বলতে দ্বিধা নেই৷
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, শনিবার দেওঘর এক্সপ্রেস করে আনা বিপুল পরিমাণে গাঁজা তেলিয়ামুড়া রেলস্টেশনে একাংশ গাঁজা পাচার কারীরা নামায়৷ পচা খাদ্যদ্রব্যের গন্ধে মম করে যেভাবে কাক, কুকুর সহ বিভিন্ন প্রকারের পশু পাখিরা ভিড় জমায়, ঠিক সেইভাবে গাঁজার প্যাকেট দেখে লোভ সামলাতে না পেরে সংশ্লিষ্ট রেলস্টেশন চত্বরে কর্মরত জিআরপি এবং রেল পুলিশ সম্মিলিতভাবে সেই গাঁজার প্যাকেট গুলোকে বাজেয়াপ্ত করে৷ এটুকু অবধি ঠিকঠাক৷ কিন্তু এরপর শুরু হয় অন্য খেলা অর্থাৎ চকচকে নোটের খেলা৷ জানা গেছে, বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সাথে সাথেই ঘটনার রফা করে নেওয়া হয় এবং সেই গাঁজা পাচারের সাথে যুক্ত এক মহিলা সহ যাদেরকে আটক করা হয়েছিল তাদেরকেও অতিথির মতো করে আপ্যায়ন শেষে ছেড়ে দেন সংশ্লিষ্ট আইনের রক্ষকরা৷
একাধিক শুভ চিন্তক মহলের মধ্য দিয়ে এই ঘটনার খবর পেয়ে রাতের বেলায় সাংবাদিকরা যখন রেল স্টেশন চত্বর সহ জি.আর.পি থানায় ছুটে যায়, তখন প্রথম অবস্থায় জি.আর.পি এবং রেল পুলিশের তরফ থেকে গাঁজা বাজেয়াপ্ত করা বা আটক করার ঘটনাকে পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়৷ যদিও পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের তথ্য ভিত্তিক প্রশ্ণ বানে জর্জরিত হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যাক্তিরা স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে গাঁজা আটক করা হয়েছে, তবে শুধু এক প্যাকেট! তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সাংবাদিকরা যাতে কোনভাবেই জি.আর.পি থানার ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে রীতিমতো বাইরের গেট তালা দিয়ে রাখা হয়৷প্রশ্ণ হচ্ছে এই জায়গায়, সাংবাদিকরা পেশাগত কাজের জন্য রেল পুলিশের আধিকারিকদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে কি কারনে গেইট তালা দেওয়া হয়েছিল? এর পেছনে কি রয়েছে রহস্য ? বিশ্বস্ত সূত্র মারফত খবর , বড়োসড়ো অঙ্কের রফার বিনিময়ের মধ্য দিয়ে শনিবার রেল পুলিশের এবং জি.আর.পির প্রত্যক্ষ মদতে তেলিয়ামুড়া রেলস্টেশন’’কে ব্যাবহার করে আরো একবার বড়সড়ো গাঁজা পাচার কার্য সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে৷ এখন প্রশ্ণ হচ্ছে ,এভাবে যদি আইনের রক্ষক বা প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিরা গাঁজা-পাচার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করে চলেন, তাহলে আদতে কি ত্রিপুরা রাজ্যকে বর্তমান সরকারের স্বপ্ণের নেশা মুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে? কে দেবে এই প্রশ্ণের উত্তর৷