ক্যানিং, ১৫ জুলাই (হি. স.) : রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে এক তৃণমূল কর্মীকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল আইএসএফের বিরুদ্ধে। নিহতের নাম নান্টু গাজি ওরফে নানু গাজি(৩৩)। ক্যানিংয়ের ইটখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর রেদোখালি গাজি পাড়ার ঘটনা। শুক্রবার গভীর রাতের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ক্যানিং থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যেই চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নিহত নান্টু গাজি স্থানীয় ২৪২ নম্বর বুথের তৃণমূল সভাপতি। বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁকে নানা ভাবে খুনের হুমকি দিচ্ছিল এলাকার আইএসএফ কর্মী মতোহার গাজি, ইছা সর্দার, দিলু গাজি, জহির মোল্লারা। পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদন্ধিতায় এলাকায় তৃণমূলের জয়ের কারনে শুক্রবার সেখানে বিজয় মিছিল হয় নান্টুর নেতৃত্বে। সেই সময় থেকেই এলাকায় চাপা উত্তেজনা ছিল বলে দাবি স্থানীয়দের। রাতে এলাকায় আইএসএফরা বোমাবাজি করে বলেও অভিযোগ। এরপর রাত একটা নাগাদ নান্টুকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় জাহাঙ্গীর গাজি নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। অভিযোগ তখনই আচমকা অভিযুক্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপায় নান্টুকে। চিৎকার করতে করতে রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি লুটিয়ে পড়েন। চিৎকার শুনে পরিবার ও প্রতিবেশীরা ছুটে এলে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা। তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা কলকাতার চিত্তরঞ্জন ন্যাশানাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। সেখানেই চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় নান্টুর।
ঘটনার খবর এলাকায় এসে পৌঁছতেই সেখানে নেমে আসে শোকের ছায়া। কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের স্ত্রী খালেদা গাজি। খালেদা বলেন, “ বাড়িতে ঘুমচ্ছিলেন স্বামী। হটাত রাত্রি ১ টা নাগাদ ফোন করে ওকে ডেকে নিয়ে যায় জাহাঙ্গীর। তারপর তলোয়ার দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে। আইএসএফরাই এই খুন করেছে। ও তৃণমূল দল করতো বলেই খুন করেছে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দশ বছর আগে খালেদার বাবা জুলফিকার গাজিকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ রয়েছে। সেই ঘটনা এখনও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ঘটনায় অন্যতম সাক্ষী এই নান্টু। সেই শত্রুতার কারনও এই খুনের পিছনে রয়েছে বলে দাবি করেছেন খালেদা। ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস বলেন, “ এই ঘটনায় কতটা রাজনীতি রয়েছে জানিনা, পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। তবে আমার ধারনা জুলফিকরের খুনের সাক্ষীকে পথের কাটা হিসেবে সরিয়ে দিতেই এই খুন।” পুলিশ ও এই ঘটনায় রাজনীতির কথা মানতে চায়নি। পুরাতন শত্রুতার জেরেই এই খুন বলেই দাবি পুলিশের। এসডিপিও ক্যানিং দিবাকর দাস বলেন, “ দশ বছর আগের একটি খুনের ঘটনায় প্রধান সাক্ষী ছিল নান্টু। আগামি ১৯ তারিখ সেই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ রয়েছে। সেই কারনেই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে আমাদের প্রাথমিক অনুমান। এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ধারালো অস্ত্রটিকেও আমরা উদ্ধার করেছি। আপাতত চারজনকে এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে।”
পরিবার বা স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বর দাবি ধৃতরা সকলেই আইএসএফ কর্মী। রাজনৈতিক শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করলেও সেই অভিযোগ মানতে চাননি এলাকার আইএসএফ নেতৃত্ব। ক্যানিং ১ ব্লকের আইএসএফ সম্পাদক মোর্তজা খান বলেন, “ এটা সম্পূর্ণ পুরানো বিবাদের জেরে ঘটেছে। আইএসএফকে বদনাম করার জন্য আমাদের দলের নাম জড়ানো হচ্ছে।” এই ঘটনার জেরে শনিবার সকালে এলাকার উত্তেজিত তৃণমূল কর্মীরা অভিযুক্তদের বাড়ি ভাংচুর করে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।