দুর্গাপুর, ১৬ জুন (হি. স.) মনোনয়নই দিতে পারেনি বিরোধী রাম বাম কোন দলই। আর তাতেই মনোনয়ন পর্ব মিটতেই কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় পান্ডবেশ্বর ও লাউদোহার একাধিক পঞ্চায়েত তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হল। এমনকি একাধিক আসনও জয়ী হয়েছে তৃণমূল। মনোনয়ন জমা দিতে বাধার অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। আবার সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব বিজেপি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৮ জুলাই রাজ্যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন। গতকালই মনোনয়ন পর্ব মিটেছে। এদিকে গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর রাজ্যে হিংসার ঘটনার নিরিখে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তার আগে রাজ্যে নতুন করে গেরুয়া ঝড় তুলতে মরিয়া বিজেপি জোর তৎপরতা শুরু করেছে। রাজ্যজুড়ে কয়লা কেলেঙ্কারী, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি সহ একাধিক কেলেঙ্কারীর ইস্যুকে সামনে রেখে প্রচারে ঝড় তুলেছে বিজেপি। জেলায় জেলায় দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদরা মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছে। একইরকম হারানো মাটি ফিরে পেতে মরিয়া বামফ্রন্টও। পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডাল, পান্ডবেশ্বর, দুর্গাপুর-ফরিদপুর (লাউদোহা), কাঁকসা ব্লকে মনোয়ন পর্ব মিটতেই বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় পঞ্চায়েত দখল করল তৃণমূল।
বিরোধীদের সব অভিযোগে কার্যত জল ঢেলে বীনা প্রতিদ্বন্দিতায় তিনটি পঞ্চায়েত দখল করল তৃণমূল। নির্বাচন কমিশন সুত্রে জানা গেছে, পান্ডবেশ্বর ব্লকে বৈদ্যনাথপুর পঞ্চায়েতের ২৬ আসনের মধ্যে ১৬ টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। ওই পঞ্চায়েতে কোন আসনে মনোনয়নই জমা দিতে পারেনি বিজেপি। আবার সিপিএম মাত্র ১০ টি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছে। ফলে তৃণমূল সংখ্যা গরিষ্ঠ পেয়েছে। আবার একইরকম ওই ব্লকের হরিপুর পঞ্চায়েতের ২০ টি আসনের মধ্যে ১১ টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছে তৃণমূল। সেখানে বিজেপি ৫ টি ও সিপিএম ৭ টি আসনে মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছে। এছাড়াও ওই ব্লকের কেন্দরা পঞ্চায়েতের ২১ টি আসনের মধ্যে ৯ টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। সংখ্যা গরিষ্ঠতার জন্য এখনও ২ আসন দরকার। একইরকমভাবে ওই পঞ্চাায়েতে বিজেপি ৬টি ও সিপিএম ৬ টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। আবার ছোড়া পঞ্চায়েতে ২৬ আসনের মধ্যে বিজেপি ৪ ও সিপিএম ১৩ টি মাত্র আসনে মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছে। ৮ টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তৃণমূল জয়ী হয়েছে। একইরকমভাবে বহুলা পঞ্চায়েতে ২৩ আসনের মধ্যে ৪ ও নবগ্রাম পঞ্চায়েতের ৩ আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হয়েছে। আবার দুর্গাপুর ফরিদপুর (লাউদোহা) ব্লকের গোগলা পঞ্চায়েতের ২২ আসনের মধ্যে ২১ টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হয়ে পঞ্চায়েত দখলে রাখল তৃণমূল। ওই পঞ্চাায়েত এলাকায় ৩ টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। এছাড়াও লাউদোহা পঞ্চায়েতে ২১ আসনের মধ্যে ৬ টি ও জেমুয়া পঞ্চায়েতের ১৭ টি আসনের মধ্যে ৩ টি, প্রতাপপুর পঞ্চায়েতের ১৬ টি আসনের মধ্যে ৩, ইছাপুর পঞ্চায়েতের ২৩ টি আসনের মধ্যে ৪ টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। ব্লকের ১১০ টি পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে মাত্র ৪৮ টি আসনে বিজেপি প্রার্থী দিতে পেরেছে। এবং সিপিএম ৭৩ আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। আবার অন্ডাল ব্লকের কাজোড়া পঞ্চায়েতের ২৫ টি আসনের মধ্যে ৬ টি, দক্ষিনখন্ড পঞ্চায়েতের ১৬ টির মধ্যে ৪ টি ও উখড়ার ২৭ আসনের মধ্যে ২ টি আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হয়েছে। এই ব্লকের ১৭০ টি পঞ্চায়েতের আসনের মধ্যে ১০৫ টি আসনে বিজেপি ও ১৬০ টি আসনে সিপিএম প্রার্থী দিতে পেরেছে। একইরকমভাবে পুর্ব বর্ধমানের গলসী-১ নং ব্লকে ৪ টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তৃণমূল জয়ী হয়েছে। আর এই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হতেই আনন্দ উচ্ছাস শুরু হয়েছে তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের মধ্যে। প্রশ্ন, রাজ্য জুড়ে নতুন করে ঝড় ওঠার মাঝেও সব আসনে কেন প্রার্থী দিতে পারল না বিজেপি? আবার ঘুরে দাঁড়াতে গিয়েও কেন সব আসনে প্রার্থী দিতে পারল না সিপিএম? বিজেপির পান্ডবেশ্বর বিধানসভার আহ্বায়ক রূপক পাঁজা বলেন,” ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর থেকেই সন্ত্রাস চলছে পান্ডবেশ্বরে। লাউদোহায় এক বিজেপি কর্মী খুনও হয়েছে ওইসময়। এখনও সন্ত্রাস চলছে। বিজেপি প্রার্থী, কর্মীদের বাড়ীতে গিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। গোগলা ও বৈদ্যনাথপুর অঞ্চলে বিজেপি কর্মী সমর্থক প্রচুর। অথচ ভয় দেখানো হচ্ছে তাদের। বহুলা অঞ্চলে গতকালই একটি ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিবিআই তদন্তের ভয়ে এখন হয়তো আমলারা সুরক্ষা দিতে বাধ্য। তবে বাকি আসনের নির্বাচন কতটা শান্তিপুর্ন হবে, সন্দেহ রয়েছে। ফলাফলেও গরমিল করবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।” আবার সিপিএম নেতা গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন,” মনোনয়ন জমা দিতে দেয়নি। বাধা দিয়েছে। বাড়ী বাড়ী হুমকি দিচ্ছে প্রার্থীদের। প্রার্থী হওয়ায় ইতিমধ্যে একজনে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই বলছি, নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে।” তৃণমূলের পান্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি কিরিটি মুখার্জী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,” মনোনয়নে কোনরকম বাধা দেওয়া হয়নি। রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ারে বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পায়নি।”