বাসন্তী, ১৬ জুন (হি. স.) : বৃহস্পতিবার মনোনয়ন জমা শেষ হতেই বাসন্তীতে একের পর এক বিজেপি প্রার্থীদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বেধড়ক মারধর করা হয় প্রার্থীদের। বাড়িও ভাংচুর করা হয়েছে। রাতের অন্ধকারে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির। মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বিজেপি কর্মীদের। শুক্রবার সকালে সেই খবর পেয়েই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এদিন বিকেলে এসে পৌঁছন বাসন্তীতে।
সেখানে একে একে জ্যোতিষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হরেকৃষ্ণপুর, ঝড়খালির ত্রিদিবনগর ও চুনাখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের কোটরাখালি এলাকায় আক্রান্ত কর্মীদের দেখতে যান তিনি। এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আদালতে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন সুকান্ত। এদিন ঝড়খালি কোস্টাল থানাতে গিয়ে সেখানকার পুলিশকর্মীদের সাথে কথাও বলেন তিনি। পাশাপাশি এদিন বিকেলে সুকান্ত মজুমদার যখন থানায় যান তখন বিজেপি কর্মীরা থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করেন পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগে। সুকান্ত ছাড়াও এদিন ছিলেন জেলা ও রাজ্য বিজেপির অন্যান্য নেতৃত্ব।
বৃহস্পতিবার রাতে কোটরাখালিতে গোসাবা বিধানসভার ৪নং মন্ডলের বিজেপির সম্পাদক চিন্ময় দাসকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তিনি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বলেই তাঁর উপর হামলা হয়েছে বলে দাবি বিজেপির। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। পাল্টা তৃণমূলের দাবি বিজেপি একই আসনে দুজন প্রার্থী দিয়েছে, সেই প্রার্থীদের নিয়ে নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে, বাসন্তীর হরেকৃষ্ণপুর গ্রামে সন্টু হালদারের বাড়িতে ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তাঁর স্ত্রী অপর্ণা হালদার গ্রামসভায় প্রার্থী হয়েছেন এবার। সেই কারণেই বৃহস্পতিবার রাতে একদল দুষ্কৃতী বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলা চালায়। ঘরের আসবাব, বাসন, টিভি সবই ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ। পাশাপাশি লুটপাট করে এবং মনোনয়ন প্রত্যাহারের হুমকি তৃণমূলের তরফে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি বিজেপির। যদিও এই অভিযোগও অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি স্বপন পট্টনায়েক। তিনি বলেন, “ সন্টু একজন ঠিকাদার। এই এলাকা থেকে প্রচুর লোকজনকে বাইরে কাজের জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু ঠিকমতো টাকা দেয় না। পাওনাদাররাই ওঁর বাড়িতে চড়াও হয়েছিল। সেই কারণে এই ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। এই ঘটনায় তৃণমূল জড়িত নয়।” অন্যদিকে ত্রিদিব নগরে সেখানে বিজেপি প্রার্থী অমল মণ্ডলের বাড়িতেও রাতের অন্ধকারে তৃণমূলরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির। অমলের স্ত্রী শর্বাণী ভোটে দাঁড়িয়েছে বলেই তাঁদের উপর চড়াও হয় এলাকার তৃণমূল নেতা দিলিপ মন্ডলের লোকজন। বেধড়ক মারধর করা হয় ঐ দম্পতিকে, এমনটাই অভিযোগ বিজেপির। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দিলিপ। মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি তাঁর।
একের পর এক বিজেপি প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন জমা দেওয়ায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা সন্ত্রাস চালিয়েছে, পুলিশকে জানালেও কোন ব্যবস্থাই পুলিশ গ্রহণ করেনি বলে এদিন অভিযোগ করেন সুকান্ত। তিনি এদিন সমস্ত আক্রান্তদের বাড়িতেই যান। পাশে থাকার বার্তা দেন। যে কোন সমস্যায় দল পাশে থাকবে এবং এই সন্ত্রাসের মোকাবিলা আইনের পথেই চলবে বলে আশ্বাস দেন দলীয় কর্মীদের। সুকান্ত বলেন, “ দিলিপ মণ্ডলের মতো লোকজন তৃণমূলের সম্পদ। পার্থ, কেস্টর মতোই সম্পদ এঁরা। এঁদের মতো যত মাল আছে বিভিন্ন জেলায় জেলায় তাঁদের আগে কত সম্পত্তি ছিল আর পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান হওয়ার পর তাঁদের কত সম্পত্তি হয়েছে সেই হিসেব নিন। ফরেস্টের জমি বিক্রি করছে দিনের পর দিন। এঁদের বিরুদ্ধেও আমরা আদালতে যাচ্ছি। সব ব্যাটার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেব, প্রয়োজনে ইডি, সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হবো।” মনোনয়ন ঘিরে যে সন্ত্রাস বিভিন্ন জায়গায় চলছে সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান সুকান্ত। তিনি বলেন, “ আমি চিঠি দিয়েছি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীজিকে। আইনের শাসন নেই, এরকম চলতে পারে না। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।” পাশাপাশি এদিন ভাঙড়ে গিয়ে যেভাবে আইনের শাসনের কথা বলেছেন, সেই প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেন, “ রাজ্যপালের এই বক্তব্যের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে শুধু বললেই হবে না এটাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে।”