BRAKING NEWS

প্রয়াত দুবারের রাজ্যসভার সদস্য, অসমের বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য, মুখ্যমন্ত্রী সহ শোকার্ত বহুজন

শিলচর (অসম) , ২৩ ডিসেম্বর (হি.স.) : দুবারের রাজ্যসভার সদস্য (প্রাক্তন সাংসদ), শিলচরের প্রাক্তন বিধায়ক, কাছাড় তথা অসমের বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা সর্বজনপ্রিয় কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য। আজ শুক্রবার সকাল ৯:৪৪ মিনিটে নয়ডার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। রেখে গেছেন স্ত্রী, দুই মেয়ে জামাতা সহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণমুগ্ধ। বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন কৰ্ণেন্দুবাবু।

এদিকে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা, শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ ও বিধায়ক কর্ণেন্দু ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে শোকাহত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। কর্ণেন্দুবাবুর মৃত্যুসংবাদ শুনে নিজের অফিশিয়াল সামাজিক মাধ্যমে প্রয়াতের সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ ছবি সহ তিনি তাঁর শোক জ্ঞাপন করছেন। শোক জ্ঞাপনের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘অসমের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্ণেন্দু ভট্টাচার্যের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর সাথে আমার মেলামেশা ও অন্তরঙ্গতার কথা মনে পড়ে।’ শোকাহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন প্রয়াতের আত্মার চিরশান্তি কামনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

অভিজ্ঞ সংগঠক তথা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কাছাড় জেলার আড়াই দশকের বেশি প্রাক্তন সভাপতি, পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ কর্ণেন্দু ভট্টাচার্যের মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে।

টানা ২৬ বছর শিলচর জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য। সবার কাছে প্রিয় ছিলেন তিনি। তিনি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতিক অভিজ্ঞ ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব প্রয়াত জননেতা মইনুল হক চৌধুরীর আনুগত্য ছিলেন। তিনি ১৯৮৪ সালে শিলচর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। এছাড়া ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালে দু-বার রাজ্যসভার সদস্য পদে নিৰ্বাচিত হয়েছিলেন। বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন প্রাক্তন সাংসদ কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য। তাঁর মৃত্যুতে বরাকের রাজনৈতিক মহলে এক বর্ণময় ব্যক্তির মহাপ্রস্থান ঘটেছে।

কংগ্রেস রাজনীতিতে এক অনন্য নাম কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য। শিলচর কাছাড় কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার আগেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই শুরু তাঁর রাজনৈতিক অধ্যায়। ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। ছাত্র পরিষদের হয়ে ছাত্রদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন লড়াইও করেছেন। ১৯৭০ সালে তিনি কাছাড় জেলার যুব কংগ্রেস সভাপতি হন। ওই সময়ই বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সভা আয়োজিত হয়েছিল শিলচরে।

শিলচর জেলা কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে দুই দফায় দীর্ঘ ২৬ বছর দলকে একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ভট্টাচার্য। কংগ্রেসের দুর্দিনের সঙ্গী হিসেবেও পৃথক পরিচিতি ছিল তাঁর। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে কংগ্রেস দল বরাকের রাজনৈতিক পরিসরে একসময় সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছিল। পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৮৫ সালে তিনি শিলচরের বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন থেকেই তিনি শিলচরে কংগ্রেস দলের হাল ধরেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা ২৩ বছর শিলচর জেলা কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। এর মধ্যেই ১৯৯৬ এবং ২০০২ সালে রাজ্যসভায় সাংসদ হিসেবেও মনোনীত হন।

দীর্ঘ বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনে অনেক আসন অলঙ্কৃত করেছেন তিনি। শিলচর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির প্রথম চেয়ারম্যান কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য। তাঁর আমলেই শিলচরের ঘনিয়ালা, কনকপুর, মালিনীবিল এবং রামনগরে চারটি ডেভেলপমেন্ট কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে।

১৯৯১ সালে স্কুল বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছিলেন কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য। তখন কাছাড় জেলা তথা বরাক উপত্যকার অসংখ্য মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালে উত্তর-পূর্ব কংগ্রেসের এমপি কো-অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক মনোনীত হন তিনি। ২০০৪ সালে কংগ্রেসের পার্লামেন্টারি কমিটির সম্পাদক পদের নির্বাচনে হেভিওয়েট কংগ্রেস নেতা কপিল সিবালকে পরাজিত করেন।

বিদেশেও অনেক সুনাম অর্জন করেছিলেন বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা কর্ণেন্দু ভট্টাচার্য। কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি ডেলিগেট হিসেবে ইউকে এবং ফ্রান্সে তাঁর বক্তব্য অনেক দেশের প্রতিনিধিদের মুগ্ধ করেছিল। সেটা ২০০৫ সালের ঘটনা। আপাদমস্তক ভদ্রলোক কর্ণেন্দুবাবু কয়েকবছর থেকেই রাজনীতির বাইরে রয়েছেন। শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। মাস কয়েক ধরে নয়ডায় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন শিলচর জেলা কংগ্রেস সভাপতি তমালকান্তি বণিক এবং প্রশাসনিক সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার ভট্টাচার্য। কর্ণেন্দু ভট্টাচার্যের মৃত্যু দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *