BRAKING NEWS

Sourav Ganguly:মসনদচ্যুত মহারাজ…’, সৌরভকে নিয়ে বিশ্বরূপের প্রতিবেদনে প্রতিক্রিয়া

কলকাতা, ১২ অক্টোবর (হি. স.) : সৌরভ গাঙ্গুলির জায়গায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি পদে বসেছেন ১৯৮৩-এর বিশ্বকাপজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রজার বিনি। এরপরই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। অমিত শাহের কথা মেনে সৌরভ গাঙ্গুলি বিজেপিতে যোগ দেননি বলেই তাঁকে ক্রিকেট বোর্ডের পদ থেকে সরানো হয়েছে বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের কিছু নেতা।

এই অবস্থায় সৌরভের দীর্ঘদিনের সতীর্থ, প্রাক্তন সিএবি কর্তা তথা অধুনা তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি বিশ্বরূপ দে সামাজিক মাধ্যমে অনেকটা তোপ দেগেছেন সৌরভের বিরুদ্ধেই। বুধবার সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাতটায় এই পোস্টে লাইক, মন্তব্য ও শেয়ারের সংখ্যা যথাক্রমে ৫৩০, ১৫৮ ও ১১৬। ‘মসনদচ্যুত মহারাজ…’ শিরোনামে বিশ্বরূপ লিখেছেন, “ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নতুন পদাধিকারীদের নাম সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে সকলের কাছে পৌঁছোচ্ছে । সেখানে গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম যে, বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে আমাদের বাংলার প্রতিনিধি, সৌরভ গাঙ্গুলির নাম নেই। অনেকেই জানতে চাইছেন, সৌরভ আর বোর্ড প্রেসিডেন্ট না থাকায় আমি খুশি নাকি অখুশি? আমার উত্তর খুব সহজ– বৃহত্তর প্রেক্ষাপট বিচারে আমি অখুশি। কারণ বাংলার কোনও প্রতিনিধি যখন প্রশাসন বা অন্য কোনও ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে সরে আসেন, বা তাঁকে যখন সরিয়ে দেওয়া হয়, সেটা একজন প্রকৃত বাঙালির কাছে সুখকর হতে পারে না। একজন বাঙালি হিসেবে যে ভাবে চক্রান্ত করে বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সৌরভকে সরিয়ে দেওয়া হল, তার নিন্দা করি আমি। একই সঙ্গে বলব, আমি অসম্ভব ব্যথিতও।

কিন্তু অনুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায় ফেলে দেখলে, এটা তো হওয়ারই ছিল। কারণ, বছর তিনেক আগে বিজেপির হাত ধরে, (পড়তে হবে অমিত শাহ-র হাত ধরে) ব্রিজেশ প্যাটেলকে হঠিয়ে, রাতারাতি বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন সৌরভ। অথচ প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ব্রিজেশের প্রেসিডেন্ট হওয়া নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ব্রিজেশের বদলে সৌরভকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট করা হয় শুধুমাত্র ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে।

ঠিক একই রকম ভাবে আমার গুরু শ্রদ্ধেয় জগমোহন ডালমিয়ার আকস্মিক প্রয়াণের বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে নবান্নে গিয়ে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়ে সিএবি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন সৌরভ। সিএবি নির্বাচন এড়িয়ে এ ভাবে ঘুরপথে তখন সংস্থার প্রেসিডেন্ট হয়ে যাওয়া সৌরভের মতো ব্যক্তিত্বের পক্ষে খুব মাননসই ছিল কি? অতীতে বাম আমলে সৌরভ গাঙ্গুলী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও অশোক ভট্টাচার্যের কতটা কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন সেটা সকলেরই জানা।

আসলে কোনও বাঙালি নতজানু হয়ে কোনও পদে আসীন হলে, সেটা সমগ্র বাঙালি জাতির কাছেই প্রবল লজ্জার হয়। সৌরভ যদি নিজের প্রশাসনিক যোগ্যতায় (ক্রিকেটার হিসেবে যাঁর যোগ্যতা তর্কাতীত ভাবে প্রণিধানযোগ্য) বিসিসিআই ও সিএবি প্রেসিডেন্ট হতেন, আজ এ ভাবে তাঁর অপসারণ ঘটত না বোর্ড থেকে। আসলে রাজনীতিবিদদের হাত ধরে ঘুরপথে ক্ষমতায় আসলে পরিণতি এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক।

সৌরভ গাঙ্গুলিকে পরামর্শ বা উপদেশ দেওয়ার মতো জায়গায় নেই আমি। শুধু কয়েকটা অনুরোধ করব। প্রথমত, ক্রিকেট প্রশাসনে থাকতে গেলে ব্যবসায়িক স্বার্থের যে বৃত্ত, তার বাইরে বেরোতে হবে। আর দুই, কিছু মোসাহেবের চোখ দিয়ে বাংলা বা ভারতীয় ক্রিকেটকে না দেখে কিছু পরিচ্ছন্ন প্রশাসককে খুঁজে নেওয়া দরকার। ক্রিকেটার হিসেবে রত্ন যে ভাবে চিনতেন সৌরভ, সেই ভাবে। আর এই দু’টো কাজ সৌরভ যত দ্রুত করতে পারবেন, তত বাংলা ক্রিকেটের মঙ্গলসাধন হবে। নইলে ঋদ্ধিমান সাহার মতো একের পর এক সফল ক্রিকেটার বাংলা ছেড়ে ভিন রাজ্যে চলে যাবেন, মুখ থুবড়ে পড়বে ভিশন টোয়েন্টি টোয়েন্টি প্রজেক্ট, রসাতলে যাবে বঙ্গ ক্রিকেট।আর যন্ত্রণাক্লিষ্ট হৃদয়ে দেখতে হবে তাঁর অপমানজনক অপসারণ।

একজন বাঙালি হিসেবে আগামীদিনে তোমাকে আইসিসি-র চেয়ারম্যান পদে দেখতে চাই। শুধু একটাই অনুরোধ আইসিসি চেয়ারম্যান হলে দয়াকরে গেঞ্জি,জাঙ্গিয়া, মোজা এসবের বিজ্ঞাপন করবেন না। এতে ক্রিকেটের ও প্রসাশক পদের গরিমা নষ্ট হয়। সৌরভ-ক্রিকেটের উন্নতি সাধনে ও ভালো কাজে সর্বদা তোমার পাশে আছি। কিন্তু…”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *