কলম্বো, ৩ সেপ্টেম্বর ( হি.স.) : প্রবলের বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়েছিলেন। সাত সপ্তাহ পর শুক্রবার মধ্যরাতে দেশে ফেরেন শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। দেশে ফেরার ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই এবার গোতাবায়ার গ্রেফতারির দাবিতে সুর চড়াল বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং গণসংগঠনগুলি।
দেশে ফেরার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কলম্বোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর তাঁকে সে দেশের রাজনীতিকদের একাংশ যে ভাবে মালা পরিয়ে সংবর্ধিত করেন, তাতে তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই এবার গোতাবায়ার গ্রেফতারির দাবিতে সুর চড়াল বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং গণসংগঠনগুলি।
শনিবার সে দেশের শিক্ষক সংগঠনের অন্যতম শীর্ষনেতা জোসেফ স্ট্যালিন বলেন, “গোতাবায়া দেশে ফিরে এসেছেন, কারণ তাঁর আর লুকোনোর জন্য অন্য কোনও জায়গা নেই।” তিনি জানান, শ্রীলঙ্কার দু’কোটি মানুষের দুরবস্থার জন্য দায়ী গোতাবায়া। এই অপরাধের জন্য তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি তুলেছেন তিনি। গোতাবায়ার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও একই দাবিতে সরব হয়েছে। তাদের বক্তব্য, প্রেসিডেন্ট হিসাবে যে আইনি রক্ষাকবচ গোতাবায়া পেতেন, তিনি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর সেই রক্ষাকবচ আর পাবেন না। তাই তাঁকে গ্রেফতার করতে কোনও সমস্যা নেই বলে দাবি তাদের।
দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলির অভিযোগ, গোতাবায়ার শাসনকালে একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার সাংবাদিক লাসান্থা বিক্রমতুঙ্গেকে হত্যার ঘটনায় জড়িয়ে যায় গোতাবায়ার নাম। সে দেশের গৃহযুদ্ধের পর তামিল বন্দিদের উপর অমানবিক অত্যাচার চালানোর অভিযোগে আমেরিকার এক আদালতে গোতাবায়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এই সব অভিযোগ মিলিয়েই গোতাবায়াকে গ্রেফতার করার দাবিতে সুর চড়ছে শ্রীলঙ্কায়। আপাতত দেশের রাজধানীতেই বিক্রমসিঙ্ঘে প্রশাসনের দেওয়া বাসভবনে থাকছেন গোতাবায়া।
প্রসঙ্গত, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় দেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপক্ষের বিরুদ্ধে জনরোষ আছড়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে যে, তাঁর ভ্রান্ত নীতির কারণেই এত বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রটি। প্রবল গণবিক্ষোভ প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন অবধি পৌঁছে যায়। জুলাই মাসে সেনাবাহিনীর সশস্ত্র প্রহরায় দেশ ছাড়েন গোতাবায়। পৌঁছন সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকেই দেশের স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান গোতাবায়া। তাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি ছিলেন তিনি। গোতাবায়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন গোতাবায়ার ভাই, সে দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপক্ষে। গোতাবায়ার দলের সমর্থনে দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়া রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সম্মত হন।
-হিন্দুস্থান সমাচার / কাকলি