৩১ ডিসেম্বর থেকে পালন করতে হবে কঠোর বিধিনিষেধ, আগামী ফেব্রুয়ারীতে ত্রিপুরায় হবে নমুনা পরীক্ষা
আগরতলা, ২৪ ডিসেম্বর (হি. স.) : ওমিক্রনের ছায়া এখনো ত্রিপুরায় দেখা দেয়নি। কিন্ত, করোনার তান্ডব থেকে সুরক্ষিত থাকার লক্ষ্যে নিরাপত্তা অবলম্বন করাই একমাত্র উপায়। তাই, আগামী ৩১ ডিসেম্বর থেকে করোনাবিধি পালনে ত্রিপুরা সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে। আজ সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানালেন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী।
সাথে তিনি যোগ করেন, বর্তমানে ওমিক্রনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীতে ল্যাবে পাঠাতে হচ্ছে। তবে, আগামী ফেব্রুয়ারীর মধ্যে আগরতলায় জি বি হাসপাতালেই ওমিক্রনের নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হবে। সেই যন্ত্র ক্রয়ে ইতিমধ্যে ত্রিপুরা সরকার দরপত্র আহবান করেছে। আজ তিনি অভয় দিয়ে বলেন, বিদেশ থেকে আসা ৬৯ জনের মধ্যে ৩৩ জনের নমুনা কল্যাণীতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩১ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তাই, অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
এদিন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, ভারতে এখন পর্যন্ত ৩৫৮ জনের দেহে ওমিক্রনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তাই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্য সচিবদের ওমিক্রন নিয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সে মোতাবেক আজ মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্য সচিব সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন।
তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় ওমিক্রন নিয়ে এখনো চিন্তিত হওয়ার পরিস্থিতি আসেনি। তাই, সকলকে এখন থেকেই বাড়তি সতর্কতা মেনে চলা আবশ্যিক। তবেই, করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ত্রিপুরা সক্ষম হবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি ৬৯ জন বিদেশ থেকে ত্রিপুরায় এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। ৩১ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে এবং বাকি দুই জনের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে।
তাঁর কথায়, ওমিক্রনের নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা ত্রিপুরায় নেই। তাই, নমুনা সংগ্রহ করে পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীতে ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। তাতে, রিপোর্ট আসতে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগছে। তিনি বলেন, ওই পদ্ধতি মেনে নমুনা পরীক্ষায় মানুষের কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। তাই, আগামী ফেব্রুয়ারীর মধ্যে আগরতলায় জি বি হাসপাতালে ওমিক্রনের নমুনা পরীক্ষার যন্ত্র বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় ওমিক্রনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ইতিমধ্যেই দরপত্র আহবান করা হয়েছে।
এদিন তিনি বলেন, আগামীকাল যিশু ক্রিষ্টের জন্মদিন এবং কিছুদিন বাদেই আসছে ইংরেজি নববর্ষ। উত্সবের মরশুমে আমরা সবাই আনন্দে মেতে উঠব, তাতে অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে, করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে আমাদের সকলকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ, সুরক্ষিত থাকার জন্য নিরাপত্তাই একমাত্র মাধ্যম।
তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার ক্রিষ্টমাস এবং ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষ্যে নাইট কারফিউ দেওয়ার বিষয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে চিন্তাভাবনা করতে বলেছিল। কারণ, ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজ্য নাইট কারফিউর ঘোষণা দিয়েছে। কিন্ত, ত্রিপুরায় এখনো ওমিক্রনের সংক্রমণ মিলেনি, তাই এই মুহুর্তে নাইট কারফিউ জারির প্রয়োজনীয়তা মনে করছে না ত্রিপুরা সরকার।
তিনি বলেন, বিগত দিনে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে করোনাকে পরাজিত করেছি আমরা। তেমনি, আবারও আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে করোনার নতুন রূপকে পরাস্ত করতে হবে। কারণ, ওমিক্রন আগের সমস্ত ভেরিয়েন্ট-র তুলনায় অধিক দ্রুত ছড়াচ্ছে। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, করোনাবিধি পুণরায় আমাদের কঠোরভাবে পালন করতে হবে। কোনভাবেই বিধিনিষেধ উল্লঙ্ঘন করা চলবে না। তাই, ৩১ ডিসেম্বর থেকে করোনাবিধি পালনে ত্রিপুরা সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এদিকে, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ত্রিপুরা মিশন অধিকর্তা ডা: সিদ্ধার্থ শিব জৈসয়াল সকলকে টিকা নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার ৮২ শতাংশ ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। কিন্ত, ১৮ শতাংশ ত্রিপুরাবাসী এখনো করোনার দ্বিতীয় ডোজ নেননি। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৪.২০ লক্ষ মানুষ এখনো করোনার দ্বিতীয় ডোজ এখনো নেননি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তাঁদের মধ্যে ৩.৯১ লক্ষ মানুষের প্রথম ডোজ নেওয়ার ৬ সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়া সত্বেও দ্বিতীয় ডোজ নিচ্ছেন না। তাঁদের সকলকে অবিলম্বে টিকা নিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর আবেদন রাখেন ডা: জৈসয়াল।