করোনাভাইরাসের জন্য যখন হতাশা ও অবসাদ দেশবাসীকে গ্রাস করেছে তখন জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আগত মনোরম বাতাস স্বস্তি দিচ্ছে। এই মনোরম বাতাস আভাস দিচ্ছে উপত্যকায় ভালো দিন ফিরে আসছে। জম্মু ও কাশ্মীরকে শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ তছনছ করে দিচ্ছিল। প্রতিদিনই রক্ত ঝরছিল। ভূস্বর্গে পর্যটকদের নিয়ে আসার জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। জাম্মু ও কাশ্মীরের অর্থনীতিও উন্নত হওয়া দরকার। করোনা-পরিস্থিতির কারণে হাতের উপর হাত রেখে বসে থাকা তো যায় না? দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ছুটি কাটানোর জন্য জম্মু ও কাশ্মীরে যদি আসেন, ছবির শুটিং যদি শুরু হয়, এর থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে না। আপনি যদি চলচ্চিত্র প্রেমী হন, তাহলে আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, পঞ্চাশ থেকে আশির দশকে কাশ্মীর উপত্যকায় বহু ছবির শুটিং হয়েছে। ১৯৬৪-র ‘কাশ্মীর কী কলী হু ম্যা’ থেকে সাম্প্রতিক সময়ের ‘বজরঙ্গি ভাইজান’, ‘ফিতুর’, ‘থ্রি ইডিয়টস’ প্রভৃতি ছবির শুটিং জম্মু ও কাশ্মীরেই হয়েছে।” অন্যান্য ভাষার ছবিরও শুটিং হয়েছে। নব্বইয়ের দশকের শুরু পর্যন্ত এমনটাই হয়েছে। এখনও জম্মু ও কাশ্মীরে শুটিং হয়, কিন্তু আগের মতো নয়। আতঙ্কের পরিবেশে ছবির শুটিং স্বাভাবিকভাবেই চ্যালেঞ্জিং। এই চ্যালেঞ্জ ও ভয়কে দূর করার জন্য কাশ্মীরে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কাশ্মীর নিশ্চিতভাবে শুটিংয়ের একটি অসাধারণ স্থান। বিশ্বের ছবি নির্মাতাদের এখানে শুটিং করার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সমগ্র বিশ্বের জন্য শুটিংয়ের সম্ভাবনা রয়েছে কাশ্মীরে। বলিউডের অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতা কাশ্মীরে আসতেও চাইছেন। জম্মু ও কাশ্মীরে যাতে হিন্দি ও অন্যান্য ভাষার শুটিং শুরু হয়, সেই লক্ষ্যে লাগাতার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা। চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে লাগাতার দেখা করছেন মনোজ সিনহা। রাজ্যের পর্যটন সেক্টরে গতি প্রদানের জন্য সম্প্রতি একটি সম্মেলনও করেছিলেন তিনি। কাশ্মীরের টিউলিপ উদ্যান একটি অনন্য পর্যটন কেন্দ্র, যেখানে অনেকগুলি বলিউড চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে, সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকদের আকর্ষণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রায় ৩০ হেক্টর এলাকা জুড়ে এশিয়ার বৃহত্তম টিউলিপ বাগান এটি। কাশ্মীর উপত্যকায় ফুল ও পর্যটন প্রচারের লক্ষ্যে এই উদ্যানটি ২০০৭ সালে উন্মুক্ত হয়েছিল। টিউলিপ উদ্যান দেখার জন্য সেরা সময় হল মার্চ মাসের শেষ থেকে এপ্রিলের শুরু।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
কানাডা, সুইজারল্যান্ডের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশের সঙ্গে কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তুলনা করা যেতেই পারে। কাশ্মীরেই দেখা যেতে পারে গোটা বিশ্বের সৌন্দর্য। জম্মু ও কাশ্মীরে দীর্ঘকাল ধরে বন্ধ থাকা সিনেমা হলগুলিও চালু করতে হবে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে করোনার কারণে বন্ধ ছিল সিনেমা হলগুলি। কিন্তু, শ্রীনগরে প্রায় তিন দশক ধরে সিনেমা হল তালাবন্ধ রয়েছে। ১৯৯০ সালেই কাশ্মীর উপত্যকায় সমস্ত সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে কিছু সময় আগে একটি সিনেমা হলকে মাল্টিপ্লেক্স করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। শ্রীনগরে ৩০ বছর আগে বন্ধ হওয়া ব্রডওয়ে সিনেমা হলের মালিক মাল্টিপ্লেক্স শুরু করার জন্য সরকারের অনুমতিও পেয়েছেন। যদি জম্মু ও কাশ্মীরে স্থানীয় ট্যুর অপারেটর, হোটেল ব্যবসায়ী, হাউসবোটের মালিক, পরিবহন সংস্থাগুলি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, তাহলে পর্যটন শিল্প আবারও উজ্জ্বল হতে পারে। তাঁরা সরকারের কাছ থেকে সম্ভাব্য সমস্ত ধরনের সহায়তা পাবেন। যেমন ধরুন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ এবং পরবর্তী উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পর্যটকদের আগমণও বেড়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে মনে করা হয়েছিল, জম্মু ও কাশ্মীর গরমের মরশুমে পর্যটকে ভরে যাবে। জম্মু ও কাশ্মীর সরকার নতুন গন্তব্যের একটি দীর্ঘ তালিকা তৈরি করছে, যা আরও বেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করার জন্য প্রদর্শিত করা হবে।
হিন্দু-মুসলিমদের তীর্থস্থল
কাশ্মীর উপত্যকায় দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের দেখার জন্য অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এখানে হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান রয়েছে। শ্রীনগরেই শঙ্করাচার্য পর্বত রয়েছে, যেখানে বিশিষ্ট হিন্দু ধর্মীয় সংস্কারক ও অদ্বৈত বেদান্তের প্রবর্তক আদি শঙ্করাচার্য সর্বস্বজ্ঞপীঠ আসনে বিরাজমান রয়েছেন। শ্রীনগর থেকে কিছুটা দূরে সূর্য মন্দির রয়েছে। আবার অনন্তনাগ জেলায় অমরনাথ মন্দির রয়েছে।
কাশ্মীরে গল্ফ পর্যটনকেও গতি দেওয়া আবশ্যিক। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, কাশ্মীরে ভারতের অন্যতম শীর্ষ এবং বিশ্বের অন্যতম প্রধান গল্ফ পর্যটন গন্তব্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর গ্রীষ্মের সময় (এপ্রিল থেকে নভেম্বর) গল্ফ খেলোয়াড়দের দুর্দান্ত সুযোগ প্রদান করে। জম্মু ও কাশ্মীরের গল্ফ সর্বদাই মনোরম এবং পর্যটকদের মধ্যে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। গল্ফ চ্যাম্পিয়নশিপ এখানে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে আসতে শুরু করবেন। শ্রীনগর যেমন ডাল লেকের জন্য বিখ্যাত, তেমনই কাশ্মীরি হস্তশিল্পের জন্যও বিখ্যাত। শ্রীনগরের ইতিহাস বহু পুরানো। শ্রীনগরের চতুর্দিকে পাঁচটি জেলা রয়েছে। শ্রীনগর ও এই শহরের আশেপাশের স্থানকে একটা সময় বিশ্বের মধ্যে সবথেকে সুন্দর পর্যটনস্থল মনে করা হত। যেমন-ডাল লেক, শালিমার ও নিশাত বাগ, গুলমার্গ, পহেলগাম প্রভৃতি। গুলমার্গ ভীষণ সুন্দর হিল স্টেশন। অপরূপ সৌন্দর্যের কারণেই ভূস্বর্গ বলা হয়। দেশের অন্যতম পর্যটনস্থলের মধ্যে অন্যতম হল গুলমার্গ, বারামুল্লা জেলায় অবস্থিত। অর্থাৎ জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটনকে উৎসাহ দেওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর যাতে ফের আনন্দের দিন ফিরে আসে সেই চেষ্টা করতে হবে সরকারকে।
(লেখক রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ)