কলকাতা, ১৫ ডিসেম্বর (হি. স.) : শৈশব থেকেই বাম পরিমন্ডলে বেড়ে উঠেছেন একগুঁয়ে দীপা। বাবা দিলীপ কাহালি ছিলেন সিটু নেতা। জ্যাঠা সুনীল কাহালি নিউ বারাকপুর মিউনিসিপালিটির কর্তা। তৃণমূলের ঘাঁটিতে ফিরহাদ হাকিমেয় ‘আশীর্বাদপুষ্ট’ ঘাসফুলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বামেয়া এবার ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছে ফরওয়ার্ড ব্লকের দীপা চক্রবর্তীকে।
নিউ বারাকপুর গার্লস এবং ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজের প্রাক্তনী দীপা বিয়ের পর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর যখন দেখলেন তাঁর স্বামী সঙ্কেত চক্রবর্তীকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে, নিজেকে ঠিক রাখতে পারলেন না। স্বামীর লড়াইয়ে তৃণমূলের মোকাবিলায় শামিল হলেন অন্যভাবে। ২০১৫-র পুরভোটে বিজেপি-র প্রার্থী হলেন ১১২ নম্বর ওয়ার্ডে।
হারজিত যা-ই হোক, বিনা যুদ্ধে সূচাগ্র মেদিনী ছাড়তে রাজি নন দীপা। মঙ্গলবার শেষ বিকেলে আলিপুর বডিগার্ড লাইনের একটি প্রবেশ পথের সামনে জটলা। কী হয়েছে? ভিতরের আবাসিক-ভোটদাতাদের কাছে প্রচারের জন্য বাম প্রার্থী ফরওয়ার্ড ব্লকের দীপা চক্রবর্তীকে পুলিশ ভিতরে ঢুকতে দেবে না। হার মানতে রাজি নন দীপাও। গুটিকয় সঙ্গী নিয়ে বসে পড়েছেন অবস্থানে। তাঁকে সরাতে এসে পড়েছে প্রচুর পুলিশ। কিন্তু দীপার সরাসরি প্রশ্ন, আমার আইনি এবং সাংবিধানিক অধিকারে এভাবে হস্তক্ষেপ করার সাহস আপনারা পেলেন কীভাবে?
শীতের সন্ধ্যা পরিণত হল রাতে। গোঁ ধরে বসে রইলেন দীপা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়। কথা বললেন লালবাজারের এক পুলিশকর্তার সঙ্গে। রফা হল, বৃহস্পতিবার দীপা ভিতরে গিয়ে প্রচার করতে পারবেন। এরপর নরেনবাবুর অনুরোধে ধর্না প্রত্যাহার করেন বাম প্রার্থী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ অফিসারদের প্রকাশ্যেই বললেন, “গতকাল যখন তৃণমূল প্রার্থী এসেছিলেন, তাঁকে তো ভিতরে যেতে বাধা দেননি? এক যাত্রায় পৃথক ফল কী করে হয়?“ উত্তর দিতে পারেননি সেই অফিসাররা।
আন্দোলনের মাঠেই দীপার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের তরুণ তূর্কি আলি ইমরান রামজের (ভিক্টর) সঙ্গে। ভিক্টর দলের তৎকালীন কর্ণধার অশোক ঘোষকে বললেন, এই মেয়ে আগুন। ওকে দলে আনুন। ‘১৫-র নভেম্বরে অশোকবাবুর ডাকেই দীপা যোগ দিলেন এই দলে। এখন অগ্রগামী মহিলা সমিতির কলকাতা জেলা সম্পাদক। এবার পুরভোটে কলকাতার আলিপুর এলাকায় ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী। এই প্রতিবেদককে জানালেন, “স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই-ই আমার মূল মন্ত্র“।
ভবানীপুর বিধানসভার আলিপুর এবং সংলগ্ন এলাকা নিয়ে কলকাতা পুরসভার ৯ নম্বর বরোর অধীন এই ৭৪ নম্বর ওয়ার্ড। ২০১১-র জনগণনায় লোকসংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ১৭৬। ২০০৫ থেকে পরপর তিনবার জিতেছে তৃণমূল। এবার মহিলা সংরক্ষিত এই ওয়ার্ডে আরও দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী বিদায়ী পুরমাতা তৃণমূলের দেবলীনা বিশ্বাস এবং বিজেপি-র পারমিতা দত্ত। রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির যাঁরা খোঁজ রাখেন তাঁরা সঙ্কেতকে একনামে চেনেন। স্বামীর পরিচয় প্রচারে আনছেন দীপাও। সঙ্কেতকে বদলি করা হয়েছে আলগাড়ায়। দূর্জনে বলে ‘পানিশমেন্ট পোস্টিং’, কালিম্পং থেকে সতেরো কিলোমিটার দূরে। বাংলা সিকিম সীমানায়, কুয়াশাঘেরা প্রত্যন্ত এক গ্রাম। সেখানেই রাজ্য সরকারের সমাজকল্যাণ দফতরের কর্মচারী। কর্মস্থল থেকে কয়েক পা দূরত্বে পশ্চিমবঙ্গের শেষ গ্রাম দামসাং। চারপাশে ঘন অরণ্য।
প্রচারে অংশ নিতে পারবেন? স্ত্রীর সপাট জবাব, “সঙ্কেত তো প্রচার করছে না। বাড়িতে বৃদ্ধ শ্বশুরমশাই, মেয়ে আছে। তাঁদেরই দেখভাল করছে। ও না এলে আমি প্রচার করতে পারতাম না।” আপাতত এক মাসের ছুটি নিয়েছেন সঙ্কেত। বামপন্থী কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা। প্রথমে রাইটার্সে চাকরি করতেন। বদলি হয়ে সল্টলেকের পঞ্চায়েত ভবনে। এখন হিমালয়ের কোলে। দীপার মেয়ে নেতাজিনগর গার্লস স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। করোনার সময় স্বামী শেষ বাড়ি এসেছিলেন। এবার স্ত্রীর ভোটে সহযোদ্ধা হিসাবে।