BRAKING NEWS

Corona vaccine is completely safe Tripura : স্তন্যদায়ী মা ও গর্ভবতীদের জন্য করোনার টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ, গুজবে কান না দেওয়ার আবেদন চিকিৎসকদের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ জুলাই৷৷ করোনার টিকা নিয়ে ত্রিপুরায় অযথাই জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে৷ ওই টিকা গর্ভবতী মহিলা এবং স্তন্যদায়ী মায়েদের জন্য সম্পুর্ন নিরাপদ৷ করোনার টিকা নেওয়া মায়েদের দুগ্দ পান করে শিশুরা আরও বেশি উপকৃত হবে৷ তাই, গুজবে কান দেবেন না৷ মত ত্রিপুরার চার বিশেষজ্ঞ চিকিতকের৷
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার খোয়াই জেলায় তেলিয়ামুড়া মহকুমায় কৃষ্ণপুর এলাকায় ১১ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল৷ পরিবারের অভিযোগ করোনার টিকা নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মাতৃদুগ্দ পান করেছিল শিশুটি৷ এরপর থেকেই সে সাংঘাতিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরে এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়েছে৷ এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই জনমনে করোনার টিকা নিয়ে ভয়ানক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়৷


বিশেষ করে জনজাতিদের মনে ওই খবরে ভয় তৈরী হয়েছে৷ তাই আজ সাংবাদিক সম্মেলনে চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিতক দাবি করেন, স্তন্যদায়ী মা করোনার টিকা নেওয়ায় ১১ মাসের শিশুটির মৃত্যু হয়নি৷ কারণ, ওই টিকার কোন প্রভাব এত কম মাতৃদুগ্দে পরেনি৷ বরং টিকা নেওয়া মায়ের দুগ্দ পান করে শিশুরা উপকৃত হচ্ছে৷এ-বিষয়ে ত্রিপুরা রাজ্য টিকাকরণ আধিকারিক ডা: মৌসুমী সরকার বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর ১৯ মে থেকে স্তন্যদায়ী মা এবং ৭ জুলাই থেকে গর্ভবতী মহিলাদের করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে৷ গতকাল তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালে ১১ মাসের শিশু ডালিয়া দেববর্মার মৃত্যু হয়েছে৷


ওই শিশুটির মা ২৭ জুলাই করোনার টিকা নিয়েছিলেন৷ পরিবারের অভিযোগ টিকা নেওয়ায় ওই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে৷ কারণ শিশুটি মাতৃদুগ্দ পান করেছে৷ ডা: মৌসুমীর কথায়, খবর নিয়ে জানা গেছে শিশুটি কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিল৷ অথচ, হাসপাতালে নেওয়ার বদলে তাকে বাড়িতেই ঔষুধ খাওয়ানো হয়েছে৷ গতকাল অবস্থা গুরুতর হওয়ায় শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা৷ কিন্তু, চিকিতকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি৷ তিনি বলেন, করোনার টিকা নেওয়ায় মাতৃদুগ্দ পান করে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে এমন প্রমাণ এখনও পর্যন্ত কোথাও পাওয়া যায় নি৷ কারণ, করোনার টিকা সম্পুর্ন নিরাপদ৷


শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিতক ডা: সঞ্জীব দেববর্মাও একই দাবি করেছেন৷ তিনি বলেন, টিকাকরণ সম্পুর্ন নিরাপদ৷ কিন্ত, টিকাকরণের বিরুদ্ধে অযথা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে৷ তিনি জানান, করোনার টিকায় জীবন্ত ভাইরাস নেই৷ রয়েছে মৃত ভাইরাস, যা মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করছে৷ এ-ক্ষেত্রে ওই মৃত ভাইরাস মাতৃদুগ্দে মিশে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই৷ তাঁর আরও দাবি, যদি মা করোনার টিকা নেন, তাহলে মাতৃদুগ্দ পান করে সেই শিশু অনেকটা উপকৃত হবে৷ তাঁর দাবি, একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে করোনার টিকা নেওয়ার ফলে মাতৃদুগ্দে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়৷ শিশুরা সেই দুগ্দ পান করে উপকৃত হচ্ছে৷ তিনি স্পষ্ট বলেন, মায়ের করোনার টিকা নেওয়ার সাথে ওই শিশুর মৃত্যুর কোন যোগাযোগ নেই৷


জি বি হাসপাতালের প্রধান মাইক্রো বায়োলজিস্ট ডা: তপন মজুমদারও বলেন, মা টিকা নেওয়ার দুই দিনের মধ্যে মাতৃদুগ্দ পান করে শিশুর মৃত্যুর কোন সম্ভাবনা নেই৷ কারণ, টিকা নেওয়ার পর দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করতে ১৪ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়৷ সেক্ষেত্রে দুই দিনে দেহে কোনভাবেই ওই টিকা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারবে না৷ তিনি বলেন, ওই শিশু মৃত্যুর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ তবে, সঠিক সময়ে চিকিতা না হওয়ায় জ্বরে ভুগে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা৷ আজ ডা: সুব্রত বৈদ্যও সকলের উদ্দেশ্যে অনুরোধ জানান, গুজবে কান দিয়ে টিকাকরণ থেকে বিরত থাকবেন না৷ করোনার টিকা সম্পুর্ন নিরাপদ৷ সকলে নির্ভয়ে টিকা নিন৷


একশো শতাংশ টিকাকরণের মাধ্যমে করোনার তৃতীয় ঢেউকে আটকানো সম্ভব হবে৷ তাই, সমস্ত ভয়ভীতি কাটিয়ে নিদর্িধায় করোনার টিকা নিন৷ আজ এভাবেই ত্রিপুরাবাসীকে টিকাকরণে উদ্বুদ্ধ করলেন জি বি হাসপাতালের প্রধান মাইক্রো বায়োলজিস্ট ডা: তপন মজুমদার৷ সাথে তিনি যোগ করেন, করোনার সাথে লড়াইয়ে কঠিন রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন হতে ত্রিপুরার ৭০ শতাংশ নাগরিকের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর নিশ্চিত হওয়া যাবে৷


এদিন তিনি বলেন, ত্রিপুরা এখনও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কাটিয়ে উঠেনি৷ তবে, কঠিন লড়াই করা সম্ভব হচ্ছে একমাত্র টিকাকরণের জন্যই৷ তাঁর দাবি, আমরা এখনো বেঁচে আছি শুধুমাত্র টিকাকরণের জন্য৷ উদাহরণ টেনে তিনি স্প্যানিশ ফ্লু যখন হয়েছিল তখন টিকা ছিল না৷ তাই, মৃতের সংখ্যাও প্রচুর হয়েছিল৷
এদিন ডা: সুব্রত বৈদ্য বলেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ আরও মারাত্মক হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ তাই, সমস্ত জনগণ টিকাকরণে এগিয়ে আসুন৷ ডা: তপন মজুমদারের কথায়, ত্রিপুরায় মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের অধিক মানুষের দুইটি ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর নিশ্চিত হওয়া যাবে করোনার বিরুদ্ধে কঠিন রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হয়েছে৷ তাই তিনি দৃঢ়তার স্থান বলেন, ১০০ শতাংশ টিকাকরণের মাধ্যমে করোনার তৃতীয় ঢেউ আটকানো সম্ভব৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *