আগরতলা, ২৭ জানুয়ারি (হি. স.) : চরমপন্থী আন্দোলনের আশঙ্কায় আজ ভোর থেকে আন্দোলনরত চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের গণ অবস্থান মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। সাথে প্রায় তিন শতাধিক আন্দোলনকারী চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাতেই রণক্ষেত্রের রূপ নেয় আগরতলায় প্যারেডাইস চৌমুহনী এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশাল পুলিশ বাহিনী নামানো হয়েছে। কিন্তু, চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও করার জন্য ছুটে যান। ফলে, বাধ্য হয়ে পুলিশ জল কামান এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে।
টানা ৫১ দিন গণ অবস্থান পালন করার পর আজ থেকে জঙ্গী আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা। গতকাল সন্ধ্যায় তাঁরা মশাল মিছিল মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও-র হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই আজ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি-র চরম অবনতি ঘটবে তা পূর্বেই অনুমান করেছিল জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। ফলে, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক ডাঃ শৈলেশ কুমার যাদব আগরতলা পুর নিগম এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। মূলত, গোয়েন্দা রিপোর্ট-র উপর ভিত্তি করেই তিনি ১৪৪ ধারা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তি-তে উল্লেখ করেছেন।
যথারীতি আজ ভোর থেকে পশ্চিম জেলা পুলিশ প্রশাসন প্যারেডাইস চৌমুহনী-তে সিটি সেন্টারের সামনে অবস্থিত গণ অবস্থান মঞ্চ ভেঙে গুড়িয়ে দেন। সমস্ত জিনিসপত্র পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। সাথে আন্দোলনকারী প্রায় তিন শতাধিক চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় আরকে নগর টিএসএর ক্যাম্প-এ। ওই ঘটনায় চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং সকাল আনুমানিক ১০টা থেকে প্যারেডাইস চৌমুহনী-তে রাস্তা অবরোধে নেমে পড়েন তাঁরা। শুধু রাস্তা অবরোধ করেই তাঁরা থিম থাকেননি সময়ের সাথে ক্রমশ মারমূখী হয়ে উঠেন আন্দোলনকারী-রা। পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী তাঁদের থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। হটাৎ সকল আন্দোলনকারী মিলে তাঁদের গণ অবস্থান মঞ্চের স্থানে গিয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন এবং রাস্তায় শুয়ে পড়েন। এরই মধ্যে পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি-তে জনৈকা মহিলা সামান্য আঘাত পান। তাতে, আন্দোলনকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে আরো পুলিশ ও টিএসআর জওয়ান মোতায়েন করা হয়। সাথে জল কামান ও কাঁদানে গ্যাসের ব্যবস্থা রাখা হয়। এভাবে কিছুটা সময় চিৎকার চেঁচামেচি করে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের একাংশ আহত মহিলা-কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সুযোগে মুখ্যমন্ত্রী-র সরকারি আবাসনের দিকে ছুটে যান। তাঁদের দেখে অন্য আন্দোলনকারীরাও মুখ্যমন্ত্রী-র বাসভবনের ছুটে যান। তাতে, মুহুর্তের মধ্যে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পুলিশ তাঁদের আইজিএম চৌমুহনীতে আটকানোর চেষ্টা করে। তখন পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের পুনরায় ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। এই ঘটনায় আগরতলা শহর জুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। প্যারেডাইস চৌমুহনী, আইজিএম চৌমুহনী সহ আশপাশের এলাকা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
এদিকে, আন্দোলনকারী-রা ক্রমশ মারমূখী হয়ে উঠেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও করার জন্য এগিয়ে আসতে চাইলে পুলিশ বাধ্য হয়ে জল কামান ছুড়ে। তাতেও দমে যাননি আন্দোলনকারী-রা। তাঁরা জল কামানের গাড়ি আক্রমণের চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে। কিন্তু, অসাবধানতার কারণে কাঁদানের গ্যাসের প্রভাব দেখা দেয় পুলিশ এবং সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের মধ্যেও। আইজি আইন-শৃঙ্খলা অরিন্দম নাথ নিজেও কাঁদানে গ্যাসে আক্রান্ত হন। এদিন, আন্দোলনকারীদের রোষের শিকার হয়েছে অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার শাশ্বত কুমার সদর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক চিরঞ্জীব চক্রবর্তী-র গাড়ি। চাকুরিচ্যুত শিক্ষক-রা তাঁদের গাড়ি ভাংচুর করেছেন।
বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই থমথমে রয়েছে। পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি-তে কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। কারণ, পুলিশ আন্দোলনকারী-দের নিয়ন্ত্রণে আনতে অবশেষে মৃদু লাঠিচার্জ করেছে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে দমকল বাহিনীর কর্মী-রা।