কলকাতা, ১৯ অক্টোবর ( হি স): চলতি বছর করোনা আবহে হচ্ছে পুজো। আর তাই এই বছর পুজোয় দর্শকশূন্য থাকবে মন্ডপ। প্রতিটি পুজো মণ্ডপই কন্টেনমেন্ট জোন হবে। সোমবার পুজোর ভিড় নিয়ে জনস্বার্থ মামলায় ঐতিহাসিক রায় হাইকোর্টের। রাজ্যের প্রতিটি দুর্গাপুজোয় এই আইনি নির্দেশিকা রূপায়ণ করতে বলা হয়েছে।
এদিন করোনা সংক্রমণের মধ্যে দুর্গাপুজোর অনুমতি নিয়ে হাইকোর্টে দায়ের মামলার রায়দান হয়। সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কী রায় দেয় হাইকোর্ট, এদিন সকাল থেকে সেদিকেই তাকিয়ে ছিলেন সকলে। কলকাতা হাইকোর্টের হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ে বলা হয়, এই বছর দর্শকশূন্য থাকবে পুজো মণ্ডপ। প্রতিটি পুজো মণ্ডপই কনটেনমেন্ট জোন হিসাবে গণ্য হবে। বড় মণ্ডপের ক্ষেত্রে দূরত্ব ১০ মিটার আর ছোট মণ্ডপের ক্ষেত্রে ৫ মিটার— এই দূরত্বের মধ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
সোমবার সকালে মামলার প্রথম পর্যায়ের শুনানির পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট জানিয়েছিল, পুজোর সঙ্গে বাঙালির আবেগ জড়িত। তাই মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার থাকলে সেখানে উৎসবপ্রেমীরা সমবেত হবেনই। এছাড়া ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এবং প্রচারিত ছবি দেখেই ভিড় কতটা হতে পারে, সে সম্পর্কে একটা ধারণা করা যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের তরফে পুজোয় ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য ৩০ হাজার পুলিশের কথা বলা হয়। তবে তা ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে আদালত আরও জানিয়েছিল, সেক্ষেত্রে পুজো মণ্ডপগুলিকে কনটেনমেন্ট জোন করে দেওয়া হোক। এছাড়াও মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হোক। মণ্ডপগুলিতে শুধুমাত্র পুজো উদ্যোক্তাদের ঢোকার বন্দোবস্ত থাক। তবে সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কাছে সংশ্লিষ্ট ক্লাব কর্তৃপক্ষকে তাঁদের সদস্যদের তালিকা জমা দিতে হবে।
পরে রায়ে বলা হয়, পুজোস্থলে প্রবেশ নিষেধ। ফলক লাগিয়ে ব্যারিকেড করতে হবে। রাজ্যে কোনও মণ্ডপেই দর্শক ঢুকতে পারবেন না। রাজ্যের যে ৩৪ হাজার পুজো কমিটি অনুদান নিয়েছে এই নিয়ম সকলের জন্য প্রযোজ্য। একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। তাতে কমিটির যাঁদের নাম থাকবে, তাঁরা ছাড়া বাইরের কেউ আসবেন না মন্ডপের ভিতর। কমিটির মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্য মণ্ডপে ঢুকতে পারবেন। ওই তালিকা পরিবর্তন করা চলবে না।
হাইকোর্ট বলেছে,‘পুলিশের গাইডলাইনে সদিচ্ছা আছে, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না। বাজারে যা ভিড়, পুজোর তার ৫দিন পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যায় না।ভার্চুয়ালে পুজোর কভারেজ করা যেতে পারে। ৬ মাস স্কুলে যায়নি পড়ুয়ারা, পুজোকে কীভাবে অনুমতি? যেখানে ছাত্ররা শৃঙ্খলাপরায়ণ, সেখানে কীভাবে পুজোর অনুমতি? বড় প্যান্ডেলে সবাইকে নো এন্ট্রি বাফার জোন করতে হবে।’
করোনা পরিস্থিতিতে বহু মানুষ হারিয়েছেন প্রাণ। এই অবস্থায় পুজো হোক কিন্তু উৎসব নয়— এই দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন বিদ্যুৎ দফতরের প্রাক্তন কর্মী অজয়কুমার দে। হাওড়ার বাসিন্দা ওই ব্যক্তির মামলারই শুনানি চলছিল দিনকয়েক ধরেই। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব এবং মুখ্যসচিবকে ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্লু প্রিন্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে সোমবার রাজ্যের তরফে কোনও ব্লু প্রিন্ট জমা দেওয়া হয়নি।আদালত বলেছিল কলকাতা পুলিশ ও সরকারের তরফে হলফনামা দিয়ে বলতে হবে সতর্কতাবিধি তারা মানতে পারবে কিনা। এমনকি রাস্তায় ভিড় নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার প্রচার করতে হবে প্রশাসনকে।সতর্কতাবিধির রূপায়ণ ঠিক কীভাবে হবে, সরকারের তরফে তার ঠিকমত পরিকল্পনায় উষ্মা প্রকাশ করে আদালত। এই নির্দেশ রাজ্যের সব পুজোর জন্য প্রযোজ্য। কতটা মানা হল, লক্ষ্মীপুজোর পর জানাবেন ডিজিপি, সিপি। ৫ নভেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে হলফনামা।’
হাতে আর সময় নেই। পুজো একেবারে দোড়গোড়ায় এসে কড়া নাড়ছে। কারণ আজ সোমবার তৃতীয়া। চলতি বছর করোনা আবহে হচ্ছে পুজো কিন্তু এই বছর বর্তমানের পরিস্থিতিতে প্রতিটি মণ্ডপ হোক দর্শকশূন্য এমনটাই চাইছে হাইকোর্ট। রাজ্য সরকারকে এদিন এর আগে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, “২-৩ লক্ষ মানুষকে সামলাতে ৩০ হাজার পুলিশ নিয়োগ করা হচ্ছে? আপনাদের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। সরকারি গাইডলাইনে সদিচ্ছা আছে কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। প্রয়োজন মনে করলে প্রতিটি পুজো মণ্ডপের এলাকাকে কনটেনমেন্ট জোন হিসাবে ঘোষণা করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে একসঙ্গে ২০ জন প্রবেশ করতে পারবে’। বিচারপতির পুলিশ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের তরফে বলা হয়, আরও পুলিশ বাড়ানো হবে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে আদালতের রায়কে স্বাগত জানানো হয়েছে।