BRAKING NEWS

কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবে ভারতের সাড়া

নয়া দিল্লি, ২৮ মার্চ৷৷ কোভিড-১৯ এর বিষয়ে ভারত প্রথম থেকেই সতর্ক, সক্রিয় এবং পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে৷ ৩০শে জানুয়ারী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে আন্তর্জাতিক স্তরে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিপদের ঘোষণা করার আগেই ভারত সীমান্তে সুসংহত ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে৷


বিমানযাত্রীদের পরীক্ষা করা, ভিসা বাতিল করা, আন্তর্জাতিক উড়ান বাতিলের মত পদক্ষেপ অন্য দেশগুলির অনেক আগেই ভারত গ্রহণ করেছে৷ ৩০ জানুয়ারী ভারতে প্রথম করোনা সংক্রমিত কাউকে পাওয়া যায়৷ এর অনেক আগে , ১৮ জানুয়ারী থেকে চীন এবং হংকং থেকে আসা যাত্রীদের থার্মাল স্ক্রিনিং করা শুরু হয়৷ অন্যান্য দেশের দিকে তাকালে, আমরা দেখব ভ্রমণকারীদের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ওই দেশগুলিতে আক্রান্তের খবর আসার অনেক পরে৷ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত  ইটালিতে প্রথম সংক্রমণের ২৫ দিন পর আর স্পেনে ৩৯ দিন পর৷  আরো বেশি দেশে ভ্রমণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ, বিমানবন্দরে পরীক্ষা করা, ভিসা বাতিল, সেলফ কোয়ারান্টাইনের মাধ্যমে এই ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে কেন্দ্র বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল৷


কালানুক্রমিক  ব্যবস্থা গ্রহণের ধাপগুলি-    ১৭ জানুয়ারী- চীন ভ্রমণ না করার পরামর্শ৷ ১৮ জানুয়ারী-  চীন ও হংকং থেকে আসা যাত্রীদের থার্মাল স্ক্রিনিং করা৷  ৩ ফেব্রুয়ারি- চীনা নাগরিকদের ই-ভিসার সুবিধা বাতিল৷ ২২ ফেব্রুয়ারি-  সিঙ্গাপুর, সফর না করার পরামর্শ , কাঠমান্ডু, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার থেকে আসা বিমানের যাত্রীদের থার্মাল স্ক্রিনিং করা৷ ২৬ ফেব্রুয়ারি- ইরান, ইটালি দক্ষিণ কোরিয়া সফর না করার পরামর্শ, এই দেশ গুলির থেকে আসা যাত্রীদের পরীক্ষা করা, সন্দেহ হলে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো৷ ৩ মার্চ- ইটালি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও চীনের সকলের ভিসা বাতিল৷ চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইরান, ইটালি, হংকং, ম্যাকাও, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ান থেকে সরাসরি বা ঘুরপথে আসা যাত্রীদের  স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হল৷ ৪ মার্চ — আন্তর্জাতিক সব উড়ানের যাত্রীদের পরীক্ষা শুরু হল৷ পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে যাত্রীদের কোয়ারান্টাইন বা আইসোলেশন বা হাসপাতালে পাঠান শুরু৷ ৫ মার্চ — ইটালি ও দক্ষিন কোরিয়া থেকে যে সব যাত্রীরা আসবেন, তাঁদের ঢুকবার আগে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেখাতে হবে৷ ১০ মার্চ- বিদেশ থেকে যারা আসবেন তাঁদের হোম আইসোলেশন শুরু, এছাড়া সরকারী নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে৷ চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইটালি, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইরান, মালয়েশিয়া, ফ্রান্স, স্পেন ও জার্মানি থেকে আসা যাত্রীদের ভারতে পৌঁছানোর থেকে ১৪ দিন হোম কোয়ারান্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হল৷


 ১১ মার্চ- ভারতীয় সহ যে সব পর্যটকরা ১৫ ফেব্রুয়ারীর পর  চীন, ইটালি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, স্পেন ও জার্মানি থেকে দেশে এসেছেন তাঁদের সকলের ন্যুনতম ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে৷১৬,১৭, ১৯ মার্চ — সুসংহত পরামর্শঃ  ১৬ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, কাতার, ওমান, কুয়েতে যারা গেছেন, তাঁদের জন্যও চোদ্দ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইন  চালু হল৷ এছাড়া ইউরোপিয় ইউনিয়ন, ইউরোপিয় মুক্ত বাণিজ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রসমূহ, তুরস্ক ও বৃটেন থেকে ভারতে আসা নিষিদ্ধ করা হল৷ ১৭ মার্চ  আফগানিস্তান, ফিলিপাইন্স, মালয়েশিয়া থেকে যাত্রীদের আসা নিষিদ্ধ করা হল৷ ১৯ মার্চ ৷ ২২ মার্চ থেকে সব আন্তর্জাতিক বিমানের  ভারতে আসা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল৷ ২৫ মার্চ সব আন্তর্জাতিক উড়ানের ভারতে আসা ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হল৷ বিশ্ব জুড়ে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ফলে ভ্রমণ সংক্রান্ত নির্দেশিকার পরিবর্তনই খালি করা হয় নি, দেশের সমস্ত বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা পরীক্ষার পর , তার উপর ভিত্তি করে যাত্রীদের কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হবে নাকি হাসপাতালে ভর্তি করা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ যাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কোন সমস্যা দেখা যায় নি, তাঁদের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য রাজ্য সরকারগুলির কাছে পাঠান হয়, যাতে তাঁদের সংশ্লিষ্ট রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নজরদারীতে নির্ধারিত দিন রাখা হয়৷


৩০টি বিমানবন্দরে, ১২টি বড় ও ৬৫টি ছোট বন্দর এবং স্থলসীমান্তে যাত্রীদের পরীক্ষা করা হয়েছে৷ ৩৬লক্ষ যাত্রীর পরীক্ষা হয়েছে৷ উচ্চবিত্ত ভারতীয়দের কোন পরীক্ষা ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, এরকম খবর ভিত্তিহীন৷ জনস্বাস্থ্য সংকটের শুরু থেকেই সরকার সুসংহতভাবে  পরীক্ষা করে কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা করেছে৷  ব্যবসা বা নিছক পর্যটনের ফলে বিদেশ থেকে আসা ভারতীয়, বিদেশে পাঠরত ভারতীয় ছাত্রছাত্রী এবং বিদেশী সকলের জন্যই একই ব্যবস্থা ছিল৷রাজ্য সরকারগুলিকেও নিয়মিত নজরদারী চালাতে বলা হয়েছে, যাতে কোন ত্রুটি না থাকে৷ রাজ্যগুলি সদাসতর্ক  থাকায় কেউ কোয়ারান্টাইনের বাইরে গেলে বা নজরদারী এড়াতে চাইলে তাঁকে সহজেই চিহ্ণিত করা যাচ্ছে৷


রাজ্যসরকারগুলির সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব ২০টি এবং ক্যাবিনেট সচিব রাজ্যগুলির মুখ্য সচিবদের সঙ্গে ৬টি ভিডিও কনফারেন্স করেছে৷ যেখানে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ এছাড়া সুসং হত ব্যধী নজরদারী ব্যবস্থার মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সের বৈঠকগুলিতে বিদেশ থেকে আসা লোকদের উপর নজরদারীর বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *