আগরতলা, ২৪ ডিসেম্বর (হিঃ সঃ)৷৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় পূর্ব ত্রিপুরার বিজেপি সাংসদ রেবতিমোহন ত্রিপুরাকে লেখা এনএলএফটি-র হুমকিভরা চিঠি নিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়৷ তখন বিজেপি অভিযোগ এনেছে, বিরোধী দল সিপিএম ও কংগ্রেস উগ্রপন্থা নিয়ে পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে৷ অবশ্য সিপিএম ও কংগ্রেস এই অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করেই থেমে থাকেনি৷ উভয় দল সমসুরে দাবি করেছে, ব্যর্থতা আড়ালের জন্যই মানুষকে বিভ্রান্ত করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি৷
বিজেপি ত্রিপুরা ফেসবুকে বিবৃতি দিয়ে বলেছে, রাজ্যকে অশান্ত করার চক্রান্তে বিরোধীদলগুলো যেভাবে উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে আস্কারা দিচ্ছে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে৷ বিজেপি-র অভিযোগ, দীর্ঘ ২৫ বছর ত্রিপুরায় উগ্রপন্থী খেলায় পাহাড়কে অশান্ত ও জনজাতিদের মধ্যে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখে তাদের বোকা বানিয়ে এডিসি ভোটে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিল সিপিআইএম৷ আর ভাগবাটোয়ারার সুবিধাপ্রাপ্ত বি-টিম কংগ্রেস ছিল তাদের ষড়যন্ত্রের যোগ্য সহযোগী৷ বিজেপি-র দাবি, সেই পুরোনো খেলায় আবারও মেতে উঠেছে সিপিআইএম এবং কংগ্রেস৷
পদ্মশিবিরের কথায়, পরিবর্তনের রাজ্যে বর্তমানে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর যেভাবে পাহাড়জুড়ে শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে, এতে ঈর্ষায় সহ্য করতে পারছে না জনদ্রোহী, জনজাতি বিরোধী সিপিআইএম এবং কংগ্রেস জুটি৷ তবে, উগ্রপন্থার উস্কানিদাতা এই অশুভ জুটিকে এডিসি ভোটে জনবর্জিত করার জন্য তৈরি হয়ে গেছেন শান্তিপ্রিয়, উন্নয়নকামী জনজাতিরা, দাবি বিজেপি-র৷
এ-বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের অস্থায়ী সভাপতি পীযূষ বিশ্বাস বলেন, মিথ্যা বলা এবং বিভ্রান্তি ছড়ানো বিজেপি-র অভ্যাসে পরিণত হয়েছে৷ কংগ্রেস কখনও উগ্রপন্থাকে সমর্থন করে না৷ কারণ, কংগ্রেস সন্ত্রাসে বিশ্বাসী নয়৷ তাঁর কথায়, সন্ত্রাসবাদের অভিশাপে ত্রিপুরা অনেক পিছিয়ে পড়েছিল৷ সেই সন্ত্রাসবাদ আবার ফিরে আসুক, চায় না কংগ্রেস৷ তাঁর সাফ কথা, বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়া বিজেপি-র মজ্জাগত দোষ৷ তাতে অবশ্য মানুষ বিভ্রান্ত হবেন না৷ কারণ, কংগ্রেসের প্রতি আস্থা রয়েছে মানুষের, দাবি করেন তিনি৷
ঠিক একই সুরে বিজেপি-কে বিঁধলেন ত্রিপুরার বামফ্রন্ট কমিটির চেয়ারম্যান বিজন ধর৷ তিনিও দাবি করেন, বামফ্রন্ট উগ্রপন্থায় বিশ্বাস করে না৷ সে জন্যই দীর্ঘ ২০-২৫ বছর এই উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি৷ তাঁর কথায়, যে কোনও সমস্যায় উগ্রপন্থা কোনও সমাধানসূত্র হতে পারে না৷ তাঁর অভিযোগ, নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্যই এখন বিজেপি নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে৷ মানুষ এতে বিশ্বাস করবেন না, দাবি করেন তিনি৷
বিজেপি-র প্রদেশ কমিটির মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করেছেন, অতীতে উগ্রপন্থার সাথে যোগসাজশের অভিযোগ কংগ্রেস ও সিপিএম একে-অন্যের বিরুদ্ধে এনেছে৷ তিনি বলেন, কংগ্রেস বরাবরই সিপিএমের সাথে উগ্রপন্থীদের যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করে৷ অন্যদিকে, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার কংগ্রেসের সাথে উগ্রপন্থীদের যোগাযোগের অভিযোগ করেছিলেন৷ কিন্তু, তারাই এখন একজোট হয়ে নানা কর্মসূচি নিচ্ছে৷বিষয়টি সন্দেহজনক মনে করা অস্বাভাবিক নয়, দাবি করেন নবেন্দু৷ তাঁর কথায়, কংগ্রেস ও সিপিএমের কাজকর্মে কোনও তফাৎ দেখা যাচ্ছে না৷ ফলে, তাঁরা ত্রিপুরায় উগ্রপন্থায় উস্কানি দিচ্ছে না, এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই৷
নবেন্দুর বক্তব্য, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থীদের মদতের বহু অভিযোগ রয়েছে৷ সেবিষয়ে বিধানসভায় একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে৷ ফলে, নতুন করে ত্রিপুরায় উগ্রপন্থার সৃষ্টির চেষ্টা চলছে, সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া উচিত হবে না৷ না হলে, এনএলএফটি পূর্ব ত্রিপুরার সাংসদকেই কেন হুমকিভরা চিঠি পাঠাল, প্রশ্ণ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন তিনি৷