BRAKING NEWS

অর্থনীতিবিদদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী, ত্রিপুরা উত্তর পূর্বা’লের রাজ্যগুলির বিজনেস হাব হবে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ অক্টোবর৷৷ রাজ্যের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আরোও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থনীতিবিদ সহ রাজ্যের ব্যবসায়ীদের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ পাশাপাশি রাজ্য সরকার যে সকল পলিসি নিয়ে কাজ করছে সেদিকে নজর রেখেই ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আজ বীরচন্দ্র স্টেট সেন্ট্রাল লাইবেরীতে রাজ্যের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় মুখ্যমন্ত্রী এই আহ্বান জানিয়েছেন৷সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রান্তিক শহর সাবমে ল্যাণ্ড কাস্টম স্থাপন, ইন্টারন্যাশনাল চেকপোষ্ট, ফেনী বীজ নির্মাণ সহ বহুমুখী কাজ হচ্ছে৷

তাতে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে সাবম অনেক উন্নত হবে এবং রাজ্যের অন্যতম বাণিজ্যিক শহর হিসাবে পরিচিত লাভ করবে৷ সাবমের ফেনী নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে ত্রিপুরা উত্তর পূর্বা’লের রাজ্যগুলির বিজনেস হাব হবে৷ ফেনী নদীর উপর বীজের নির্মাণের পর বাংলাদেশের দিক দিয়ে রামপুর থেকে চিটাগাং পর্যন্ত ৩৮ কিমি রাস্তাকে প্রশস্ত করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে৷ তিনি বলেন, গতকাল বাংলাদেশের চিটাগাং বন্দরকে খুলে দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে৷ বাংলাদেশের সঙ্গে রাজ্যের যে সুুসম্পর্ক রয়েছে রাজ্যের বিনিয়োগকারীদের সেই সুুযোগ কাজে লাগাতে হবে৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোন দেশ বা রাজ্যকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সর্বাগ্রে শান্তি বজায় রাখা প্রয়োজন৷ রাজ্যের শান্তির পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশও সহযোগিতা করছে৷ বর্তমান রাজ্য সরকার পর্যটন শিল্পকে উন্নত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে৷ রাজ্যের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান যেমন, ঊনকোটি, ডম্বর, ছবিমুড়া, নারিকেলকু’, নীরমহল, মাতাবাড়ি প্রভ’তিকে দেশ-বিদেশের পর্যটকের কাছে আক’ষ্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ সেইসব ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে পারেন৷ রাজ্যের বৈদ্যতিক ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করার জন্য এ ডি বি ১৯০০ কোটি টাকা ম’র করেছে৷ তাতে উন্নত ট্রান্সফরমার, আধুনিক জেনারেটর, প্রিপেইড মিটার স্থাপন ইত্যাদির কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যে যে সকল ব্যবসায়ীগণ বৈদ্যতিক সামগ্রী তৈরী করেন তাদের দেশের বড় বড় কোম্পানীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার জন্য ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যৎ নিগমের চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ফল প্রক্রিয়াকরণ রাজ্যের আরেকটি বড় ক্ষেত্র৷ রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে আনারস, কাঁঠাল ইত্যাদি উৎপন্ন হয়৷ সেগুলিকে ভিত্তি করে রাজ্যে ফল প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট স্থাপনেও ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে পারেন৷ তাছাড়া রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে বাঁশ উৎপন্ন হয়৷
সম্পতি দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ১৩ জন বিনিয়োগকারী রাজ্যে বাঁশভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷ তারা রাজ্যে বাঁশভিত্তিক শিল্পে ১০০-১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায়৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সহযোগিতায় রাজ্যের রেল পরিষেবার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে৷ এই সময়ের মধ্যেই রাজ্যে ৬টি এ’প্রেস ট্রেন পরিষেবা শুরু হয়েছে৷ কিন্তু রাজ্যে বর্তমানে সিঙ্গেল ট্র্যাক থাকার কারণে এ’প্রেস ট্রেনগুলি প্রতিদিন চলাচল করতে পারছেনা৷ ধর্মনগর- কৈলাসহর- পেঁচারথলের মধ্যে ৪১.৭৫ কিমি রেলপথ নির্মাণের জন্য সমীক্ষার কাজ চলছে৷ এবছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সমীক্ষার কাজ শেষ হওয়ার পর রেল ট্র্যাকের কাজ শুরু হবে৷

এর জন্য ব্যয় হবে ১৭১৩ কোটি টাকা৷ এছাড়াও ধর্মনগর- পেঁচারথল- কমলপুর- খোয়াই- আগরতলা- বিলোনীয়া পর্যন্ত বিকল্প রেলপথ নির্মাণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে৷ ২০২০ সালের মধ্যে সমীক্ষার কাজ শেষ হলেই রেল ট্র্যাকের কাজ শুরু হবে৷ বিকল্প এই রেলপথ নির্মাণে রাজ্যে ৬-৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে৷ অর্থাৎ রাজ্যে আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে৷ তাতে রাজ্যের জি ডি পি বাড়ার পাশাপাশি রোজগারের সৃষ্টি হবে৷ রেলপথ নির্মাণে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী তৈরীর কারখানা স্থাপনেও রাজ্যের বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসতে পারেন৷ এছাড়াও রাজ্য সরকার রাজ্যে শিক্ষার হাব আই টি হাব, মেডিক্যাল হাব তৈরী করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে৷ রাজ্যের ব্যবসায়ীরা সেইসব ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ করার জন্য এগিয়ে আসতে পারেন৷ এর জন্য তাদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার যেসব ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সেগুলিকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসার জন্য অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিকদের তাদের লেখনির মাধ্যমে কাজটি করতে হবে৷ সর্বোপরি রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
আজকের এই মতবিনিময় সভায় ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. অরুণোদয় সাহা, ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সন্তোষ সাহা সহ রাজ্যের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদগণ, বুদ্ধিজীবীগণ এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *