নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ অক্টোবর৷৷ দুগ্দ এবং দুগ্দ জাতীয় দ্রব্য উৎপাদনে ত্রিপুরাকে স্বয়ংসম্পর্ণ করে তুলতে হবে৷ শুধুমাত্র দুগ্দ এবং দুগ্দ জাতীয় দ্রব্যের আমদানিতে রাজ্যের প্রায় ১১০০ কোটি টাকা বহির্রাজ্যে চলে যাচ্ছে৷ সেই ক্ষেত্রে ছোট ছোট শিল্পের মাধ্যমে এই অর্থ ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ রাজ্য সরকারের পাশাপাশি ডেয়ারী শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলিকেও এ বিষয়ে অগ্রনী ভূমিকা নিতে হবে৷ আজ আগরতলার হাঁপানিয়াস্থিত আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত ডেয়ারী উন্নয়ন মেলা-২০১৯ এর উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ অনুষ্ঠানে এন ই সি প্রকল্পে উন্নত প্রজাতির সংকর জাতীয় গাভী ৫০ জন নির্বাচিত সুুবিধাভোগীকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরণ করা হয়৷ ৩৬ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গো-প্রজনন কর্মীদের মধ্যে ক’ত্রিম প্রজননের সর’াম এবং বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়৷ অনুষ্ঠানে ডেয়ারী এন্ট্রাপ্রেনারশীপ ডেভলপমেন্ট প্রকল্পে ঋণ পাওয়ার আবেদনপত্র গ্রহণ এবং ঋণ প্রদান করা হয়৷ মুখ্যমন্ত্রী সুুবিধাভোগীদের হাতে এই সুুবিধাদি তুলেদেন৷
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসার পর গাভী দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তার জন্য প্রচুর সমালোচনার সম্মখীণ হতে হয়৷ কিন্তু আজ প্রমাণিত হয়েছে যে সেই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল৷ ত্রিপুরাকে স্বনির্ভর করার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোন কাজই ছোট কিংবা বড় নয়৷ যে যেই স্থান থেকে কাজ করছেন সেই কাজটাই মুখ্য বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন৷ তিনি আরও বলেন, গাভী ক্রয় করার পাশাপশি তার সঠিক পরিচর্যা করতে হবে৷ তবেই সুুবিধাভোগীরা দুগ্দ উৎপাদনের মাধ্যমে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারবেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮-১৯ সালে ত্রিপুরায় ৯ হাজার ২৬০ মেট্রিক টন দুগ্দ উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ২০১৭-১৮ সালে দুগ্দ উৎপাদন ছিল ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ২৬০ মেট্রিকটন৷ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুগ্দ উৎপাদন হয়েছে ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৫২০ মেট্রিকটন৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরায় ১ লক্ষ ৫৭ হাজার সংকর জাতীয় গাভী রয়েছে৷ এইগুলি রাজ্যের ২৫ টি ব্লক, আগরতলা পুর নিগম এবং উদয়পুর পুর পরিষদ এলাকায় রয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী এই ২৭টি ব্লক ও পুর নিগমকে ক্লাস্টার চিহিণত করে ব্যাংক ঋণ প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে উপস্থিত ব্যাংক কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান৷ তবেই ডেয়ারী শিল্পে সফলতা আসবে৷ রাজ্যে ডেয়ারী শিল্পের বিকাশে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে জানান, ত্রিপুরা ভেটেরিনারী কলেজকে ভেটেরিনারী কাউন্সিল অব ইণ্ডিয়া স্থায়ী স্বীক’তি দিয়েছে৷ যা বহু দিন উপেক্ষিত ছিল৷ ত্রিপুরা ভেটেরিনারী কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিমাসে ইন্টার্নশিপ এলাউন্স ১৩০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮ হাজার টাকা করা হয়েছে৷ তিনি আরও বলেন, মেলাঘরের রুদ্রসাগরে চলতি বছরের ২৫ সেপেম্বর পর্যন্ত ৭৩৪ জন সুুবিধাভোগীর মধ্যে ১৪ হাজার ৬৮০টি হাঁস বন্টন করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের যে সমস্ত উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি রূপায়িত হচ্ছে তার পর্যবেক্ষণ নিয়মিত করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার উপর গুরুত্ব দিতে হবে৷ তবেই ত্রিপুরা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শক্তিশালী এবং মডেল রাজ্য হিসাবে পরিণত হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের সার্বিক কল্যাণে বর্তমান রাজ্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ তার প্রতিফলন রাজস্ব আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়৷ বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে রাজস্ব আয় বেড়ে ২৬ শতাংশে গিয়ে দাড়িয়েছে, যা বিগত সরকারের সময়ে ছিল ৯.৮ শতাংশ৷
বর্তমান ব্যাংকের সি ডি রেশিও বেড়ে ৫৬ শতাংশ হয়েছে যা বিগত সরকারের সময়ে ছিল ৪৯ শতাংশ৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বাজারে যখন মন্দা চলছে তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেত’ত্বাধীন সরকার কপর্োরেট কর হাস করার মত পদক্ষেপ নিয়েছে৷ এতে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে৷ ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে ৭ থেকে ৮ লক্ষ কোটি টাকা ভারতের বাজারে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে রাজ্যবাসীকে আসন্ন দুর্গাউৎসবের আগাম শুভেচ্ছা জানান৷
অনুষ্ঠানে প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী সান্তনা চাকমা বলেন, বর্তমানে বিপ্লব কুমার দেবের নেত’ত্বাধীন সরকার দুগ্দ এবং ডিম উৎপাদনে রাজ্যকে স্বয়ংসম্পর্ণ করে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরাকে মডেল রাজ্য হিসাবে গড়ে তুলতে গিয়ে রাজ্যকে সবদিক থেকে স্বয়ংসম্পর্ণ হতে হবে৷ রাজ্য সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলছে৷ যে সমস্ত প্রাণী পালকরা গাভী পাওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তাদের দেখে রাজ্যে অন্যান্য প্রাণী পালকরাও অনুপ্রাণিত হয়ে প্রাণী পালনে উৎসাহী হবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷ রাজ্যে ছাগল, পোল্টী, শূকর ইত্যাদি পালনে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের মানুষের আর্থসামাজিক মানোন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে৷ এছাড়া বিভিন্ন পরিকাঠামোগত উন্নয়নও করা হচ্ছে বলে মন্ত্রী সান্তনা চাকমা উল্লেখ করেন৷ গরীব অংশের মানুষ যাতে স্বনির্ভর হতে পারে সেই লক্ষ্যে রাজ্য সরকার কাজ করে চলেছে৷
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিধায়ক ক’ষ্ণধন দাস, পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা সরকার দেব, রাজ্য পরিকল্পনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান আর কে মাথুর, রাজ্য পরিকল্পনা পর্ষদের সদস্য ড় বি কে যোশী, রেশমী ভার্মা এবং ড় এস আয়াপ্পান উপস্থিত ছিলেন৷ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের বিশেষ সচিব সৈলেন্দ্র সিং৷ ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের অধিকর্তা দিলীপ কুমার চাকমা৷ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ডেয়ারী শিল্পের সাথে যুক্ত সংস্থা এবং বিভিন্ন ব্যাংক এর প্রদর্শনী স্টল পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ৷