গুয়াহাটি, ১৮ জুন (হি. স.) : পূর্ব-ঘোষিত সূচি আনুযায়ী আজ (মঙ্গলবার) ১৮ জুন রাজ্যের সব জেলাশাসকের কাৰ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থান-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন রাজ্যের প্রায় ৪১ হাজার টেট শিক্ষক৷ এর ফলে আজ রাজ্যের ৩৯ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন অচল হয়ে পড়েছিল। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্ৰী সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য টেট শিক্ষকদের ‘ড্ৰাইভার’-এর সঙ্গে তুলনা করার প্রতিবাদে এবং তাঁদের চাকরি নিয়মিত করা ও ‘অপমানজনক’ মন্তব্যের জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে আজ প্রায় ৪১ হাজার টেট শিক্ষক অবস্থান-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন।
গত ১৩ জুন টেট শিক্ষকদের ‘ড্ৰাইভার’-এর সঙ্গে তুলনা করে কী কারণে এ-ধরনের ‘অপমানজনক’ মন্তব্য করেছিলেন, তার কারণ জানতে চাইলে মন্ত্রী সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য হিন্দুস্থান সমাচার-কে গতকাল বলেছিলেন, ‘আমার মন্তব্যকে সজ্ঞানে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিকৃত করা হচ্ছে। টেট শিক্ষকদের কিছু দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সাম্প্রতিককালের পরিস্থিতির ওপর সময়সাপেক্ষ এক উদাহরণ তুলে ধরেছিলাম আমি। বলেছিলাম, ড্ৰাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে যেমন তার রিনিউ করতে হয়, ঠিক সেভাবে টেট শিক্ষকদেরও ২০১৯ সালের মেয়াদ সম্পূর্ণ হওয়ার আগে তা নবিকরণ করা দরকার। নবিকরণের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সের উদাহরণ তুলে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিলাম। বিষয়টিকে নিয়ে অযথা জল ঘোলা করা হচ্ছে।’
এদিকে শিক্ষামন্ত্ৰী কর্তৃক ঠিকাভিত্তিক টেট শিক্ষকদের ‘ড্ৰাইভার’-এর সঙ্গে তুলনা করার পর রাজ্যজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্ৰ প্ৰতিক্ৰিয়ার। শিক্ষামন্ত্ৰী ভট্টাচার্যের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে সোশাল মিডিয়ায় টেট শিক্ষকরা নিজের নামের আগে ‘ড্ৰাইভার’ শব্দ যুক্ত করে প্ৰতিবাদ করছেন। এবার সোশাল মিডিয়ায় তীব্ৰ প্ৰতিবাদ করেই ক্ষান্ত না থেকে অবস্থান-ধরনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টেট শিক্ষকরা। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ রাজ্যের প্ৰতিটি জেলা সদরে জেলাশাসকের কাৰ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থান-ধরনায় বসেছিলেন তাঁরা৷ এর পরও সরকার যদি তাঁদের দাবি না মানে তা-হলে পরবর্তীতে আগামী ২৯ জুন দিশপুর ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবেন রাজ্যের ৪১ হাজার টেট শিক্ষক। ঘোষণা করেছে ঠিকাভিত্তিক টেট শিক্ষক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দীপাৰ্ণব ঘোষ।
এদিকে ঠিকাভিত্তিক টেট শিক্ষক সংস্থার কার্যনির্বাহী সভাপতি ত্ৰৈলোক্য ডেকা ২০১৬-এর বিধানসভা নিৰ্বাচনের আগে বিজেপি-র ভিজন ডকুমেন্ট-এ উদ্ধৃত প্রতিশ্রুতির প্রসঙ্গও এনেছেন। তিনি বলেছেন, ভিজন ডকুমেন্টে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সরকার গড়লে টেট উত্তীৰ্ণ ঠিকাভিত্তিক শিক্ষকদের চাকরি নিয়মিত করা হবে। অথচ বিজেপি শাসনে এসেছে তিন বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। কিন্তু ঠিকাভিত্তিক শিক্ষকদের চাকরি নিয়মিত করা হয়নি। উলটে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্ৰী সিদ্ধাৰ্থ ভট্টাচার্য টেট উত্তীৰ্ণ শিক্ষকদের ফের টেট পরীক্ষায় বসে তাঁদের শংসাপত্র নবিকরণের কথা বলছেন, যা কেবল বিস্ময়করই নয়, চরম হঠকারিতা।
তিনি বলেছেন, ‘শংসাপত্র বা প্ৰমাণপত্ৰ নবিকরণের যদি কোনও সরকারি নিয়ম থাকে তা-হলে সরকারই সেগুলো অটো রিনিউয়েল করুক। নতুন করে টেট পরীক্ষা দিয়ে এর নবিকরণ করার কোনও প্ৰয়োজন নেই। কেননা, ইতিমধ্যে আমরা শিক্ষক হিসেবে সাত বছর কাজ করেছি। সাত বছরের অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট।’