নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ ডিসেম্বর৷৷ বনাঞ্চলে বসবাসরত জনজাতি পরিবারগুলি বনকে কেন্দ্র করে যেন জীবিকা নির্বাহ করতে পারে এবং তারা যেন স্বনির্ভর হতে পারেন সেই দিশায় বন দপ্তরকে কর্মসূচি ঠিক করতে হবে৷ আজ সচিবালয়ের ১নং সভাকক্ষে বন দপ্তরের এক পর্যালোচনা সভায় একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, বনাঞ্চলে এমন সহ গাছগাছালি লাগাতে হবে যেগুলি স্বল্প সময়ের মধ্যে উৎপাদনযোগ্য হয়ে ওঠে৷ এক্ষেত্রে অ্যালোভেরা, আম্রপালী, ভ্যানিলা, গোলমরিচ ইত্যাদি প্রজাতির গাছ লাগানোর উপর দপ্তরকে গুরুত্ব দিতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোন প্রকল্পে সুবিধাভোগীকে চারাগাছ দেওয়ার পর উৎপাদন শুরু না হওয়া পর্যন্ত দপ্তরকে তদারকি করতে হবে৷ একবার উৎপাদন শুরু হয়ে যাওয়ার পর সুবিধাভোগী নিজে থেকেই তার বাগান রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে নেয়৷ এক্ষেত্রে ক্লাস্টার অনুসারে অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট এলাকায় এখই প্রজাতির গাছ লাগালে উৎপাদিত সামগ্রীর মার্কেটিং এর সুবিধা হয়৷ তাছাড়া একসঙ্গে বিশাল এলাকা জুড়ে এখই প্রজাতির গাছ থাকলে সেটা দেখতেও মনোরম হয়৷ এতে ঐ এলাকায় পর্যটক আসতে পারেন৷ এরফলে পর্যটনের সুযোগ তৈরি হয়৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এলাকা অনুসারে গাছ লাগানো প্রয়োজন৷ যেসব এলাকার বানরের উপদ্রব রয়েছে সেখানে অ্যালোভেরা জাতীয় গাছ লাগাতে হবে৷ আর যেখানে নেই সেখানে আম্রপালী ইত্যাদি গাছ লাগাতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পাহাড়ী এলাকায় বাঁধ নির্মানের মাধ্যমে জলাশয় তৈরি করেও সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনজাতিদের রোজগারের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে৷ বন দপ্তরের চলতি বছরের ২৮৮টি বাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে বনদপ্তরকে মৎস্য, গ্রামোন্নয়ন, প্রাণী সম্পদ বিকাশ, জলসেচ ইত্যাদি দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কাজ করতে হবে৷ এই বাঁধের মাধ্যমে সৃষ্ট স্বনির্ভর হতে পারবে, তেমনি রাজ্য মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংম্ভরতা অর্ঝন কদ্দেরত হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বনাঞ্চলে গাঁজা চাষ বন্ধ করার জন্য বনকর্মীদের কঠোর মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে৷ বন সম্পদের চুরি বন্ধ করার জন্যও বন দপ্তরকে সজাগ দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এক্ষেত্রে বনদপ্তরের বিভিন্ন চেক পোস্টগুলিতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে৷ রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে আকর্ষনীয় করে তোলার ক্ষেত্রেও বন দপ্তরকে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য পর্যালোচনাসভায় মুখ্যমন্ত্রীর গুরুত্ব আরোপ করেন৷ ছবিমুড়া ও তৃষ্ণা অভয়ারণ্যে পর্যটনের সার্বিক বিকাস ও পরিকাঠামোর উন্নয়নে বন দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুখ্যমম্তরী নির্দেশ দেন৷ তিনি বলেন, রাজ্যে বনকেন্দ্রীক যে পর্যটন কেন্দ্রগুলি হয়েছে এগুলিকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসার জন্য ছোট ছোট ভিডিও তৈরি করে তা দপ্তরের ওয়েবসাইটে রাখতে হবে৷ ইলেক্ট্রনিক্স মাধ্যমগুলিতে তা প্রচারেরর জন্য দপ্তরকে উদ্যোগ নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷
পর্যালোচনা সভায় বনমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া বন দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির উপর আলোকপাত করেন৷ তিনি বনজ সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের কাজে বনকর্মীদের উদ্যোগী হয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন৷ সভায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রধানসচিব কুমার অলক সিপাহীজলা চিড়িয়ানাখানাকে আরো আধুনীকিকরণের উপর গুরুত্বারোপ করেন৷ সভায় মুখ্য বন সংরক্ষক ড অলিন্দ রস্তোগী বন দপ্তরের বিভিন্ন কাজকর্মের একটি রূপরেখা তুলে ধরেন৷ বন দপ্তরের মূল কার্যাবলী, স্ট্রাটেজি, চলতি বছরের অ্যাকশন প্ল্যান, লক্ষ্যমাত্রা, অর্জিত সাফল্য, দপ্তরের পরিকাঠামো, রাজস্ব সংগ্রহ, বিভিন্ন অভয়ারণ্যে পর্যটকদের উপস্থিতির হার, সিপাহীজলা অভয়ারণ্যে বর্তমান প্রাণিকূলের সংখ্যার অবস্থান, নতুন উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা, আগামী তিন পছরের কাজের রূপরেখা, বনদপ্তরের বিভিন্ন আইন ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়৷