নয়াদিল্লি, ২০ আগস্ট (হি.স.) : পঞ্চায়েত মামলার শুনানি শেষ সুপ্রিম কোর্টে ৷ তবে আজ সোমবার হচ্ছে না রায়দান | আজ প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, এক সপ্তাহের মধ্যেই মামলার রায় ঘোষণা হবে। অর্থাৎ সামনের সোমবারের মধ্যেিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনগুলির ভবিষ্যৎ জানা যাবে।
বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠা আরও অন্তত সাত দিন জিইয়ে রইল। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ৩৪ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছিল শাসক দল। তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলাটি চলছিল, সোমবার তার শুনানি শেষ হয়েছে। এদিনের শুনানিতে রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবীরা আর্জি জানিয়েছিলেন, এ দিনই যেন রায় ঘোষণা করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। এর পরেও কারও কোনও বক্তব্য থাকলে তা লিখিত ভাবে দু’দিনের মধ্যে দিতে পারে। আপাতত চূড়ান্ত রায়কে সংরক্ষিত রাখা হল। সাত দিনের মধ্যে তা জানাবে আদালত। রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের তরফে আইনজীবীরা বলেন বিপুল সংখ্যক গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে বোর্ড গঠন আটকে থাকায় এক সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে, ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়নের কাজও। ফলে, আদালতের কাছে এই মামলায় দ্রুত অন্তর্বর্তী রায়ের আবেদন করেন। এরপরই প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি চন্দ্রচূড় ও খানউইলকরের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয় যে, এই মামলায় ‘যত দ্রুত সম্ভব’ রায়দান করা হবে।
শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি এএম খানওয়ালিকার অসুস্থ থাকার কারণে পিছিয়ে গেছিল পঞ্চায়েত মামলার শুনানি। আজ দুপুর ২ টো নাগাদ ফের শুরু হয় পঞ্চায়েত মামলার শুনানি। সোমবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের সামনে রাজ্য সরকারের আইনজীবী বিকাশ সিং বলেন, এখনও পর্যন্ত বোর্ড গঠন করা যায়নি বলে অর্থ কমিশনের ২২ হাজার কোটি টাকার তহবিল পড়ে রয়েছে। সেই টাকা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এদিকে, সব গ্রাম পঞ্চায়েতের (পূর্ববর্তী বোর্ডের) মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে কোনটিই কাজ করছে না বর্তমানে। গ্রাম পঞ্চায়েত গঠন করতে দেওয়া হোক।
বিজেপি-র আইনজীবী পাটওয়ালিয়া বলেন, পশ্চিমবঙ্গের সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোট একেবারেই অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়নি। বরং নির্বাচনের এই আদর্শ লঙ্ঘিত হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এমনকী কলকাতা হাইকোর্টও ভোটে হিংসার বিষয়টি মেনে নিয়েছে। এছাড়া, এই ব্যাপারটি সুপ্রিম কোর্টেরও নজরে এসেছে। শীর্ষ আদালত রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি দেখতেও বলেছে।তিনি প্রধান বিচারপতিকে রাজ্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আবেদন করেন |
জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি আপনার বক্তব্য বুঝতে পারছি। আপনি বলতে চাইছেন, রাজ্যে নির্বাচনের অনুকূল বাতাবরণ ছিল না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনগুলিতে মনোনয়ন দিয়েছিল কেবল একটিই রাজনৈতিক দলের সদস্যরা। তাই গণতন্ত্রে যে বহুদলীয় ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, সেটিই লঙ্ঘিত হয়েছে।
বিজেপি-র অপর আইনজীবী বিজন ঘোষ বলেন, (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমন ‘জয়’) সাধারণ মানুষকে ভোটে লড়ার ও ভোট দেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। বিষয়টি সাংবিধানিক অধিকার হওয়ায়, এর প্রভাব দেশ জুড়ে পড়বে। এবিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ভোট দেওয়া এবং ভোটে লড়ার অধিকার বিধিবদ্ধ অধিকার, কখনও সাংবিধানিক অধিকার নয়।
এদিন ভোটারদের তরফ থেকে শান্তিরঞ্জন দাস বলেন ভোটাররা কীভাবে হেনস্থার সম্মুখীন হয়েছেন, সে বিষয়টি দয়া করে দেখা হোক। আদালতের পুনর্নির্বাচনের রায় দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে।
এদিকে আজ সর্বোচ্চ আদালতে তৃণমূলের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আদলত শুধু এদের আবেদনগুলি লক্ষ্য করুক। প্রথমত এরা নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকেই নস্যাত্ করতে চাইছে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশনারকে পদচ্যুত করতে চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু, সেটা করতে গেলে তো, ইমপিচমেন্ট করতে হবে। তৃতীয়ত, ই-মেল হোয়াটসঅ্যাপ-এর মাধ্যমে ই-মনোনয়নকে স্বীকৃত করতে চাওয়া হচ্ছে। অথচ, যাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন, তাঁদের কথা না শুনেই এই মামলায় সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট গ্রামের অধিবাসী হতে হবে। সেই নিয়মে কি কোনও বিচ্যুতি ঘটেছে? আরও পড়ুন- পঞ্চায়েত মামলায় সুপ্রিম ভর্তসনার মুখে রাজ্য নির্বাচন কমিশন|
প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে সব পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পর আজ প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, এক সপ্তাহের মধ্যেই মামলার রায় ঘোষণা হবে। অর্থাৎ সামনের সোমবারের মধ্যে ই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনগুলির ভবিষ্যৎ জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ই-মেল বা হোয়াটস অ্যাপে মনোনয়ন জমার আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল সিপিআই(এম)। আদালত তা বৈধ বলে রায় দিয়েছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই শীর্ষ আদালতে যায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ৯ মে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। সে সময় ক্যাভিয়েট গঠন করে এই মামলাতে যুক্ত হয় বিজেপি-ও। কিন্তু, ই মনোয়নে হাইকোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু, ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘জয়ী’ প্রার্থীদের নাম গেজেট বিঞ্জপ্তিতে প্রকাশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে বাকি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন সেই মামলারই শেষ শুনানি ছিল শীর্ষ আদালতে। সার্বিক ভাবে এই শুনানির পর এখন অপেক্ষা প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কী রায় দেয় তা দেখার।