নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ জুলাই৷৷ শিশু কল্যাণ ও জুভেনাইল জাস্টিসে ত্রিপুরার প্রশংসা করলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপক কুমার
গুপ্তা৷ রবিবার আগরতলায় আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে জুভেনাইল জাস্টিস সিস্টেমের উপর সেমিনারে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি৷
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে ভারতের সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি দীপক গুপ্তা বলেন, শিশুদের ন্যায্য অধিকা প্রদান করা আমাদের কর্তব্য৷ শিশুরা কি চায় সে বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে৷ পাশাপাশি শিশুদের সুশিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করাও আমাদের সকলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব৷ তিনি বলেন, জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট, ২০১৫ অনুসারে শিশুদের যত্ন ও সুরক্ষার প্রয়োজনে রাজ্যের প্রতিটি জেলাতে শিশু কল্যাণ কমিটি গঠন করা খুবই প্রয়োজন৷ দেখা গেছে দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির তুলনায় ত্রিপুরাতে শিশু কল্যাণ কমিটি খুব ভালো কাজ করচে৷ পাশাপাশি জুভেনাইল জাস্টিস সিস্টেমও দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় ত্রিপুরায় ভালোভাবে পরিচালিত হচ্ছে৷ বিচারপতি শ্রী গুপ্তা আরো বলেন, শিশুরা সাধারণত সহজ সরল হয়, কোনো শিশুই জন্ম থেকে অপরাধী হয়ে জন্মায় না৷ শিশুদের জন্য কাজ করার মানসিকতা আমাদের মধ্যে গড়ে উঠলেই শিশুদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে৷ জুভেনাইল অ্যাক্ট-এ শিশুদের স্বচ্ছন্দ্যে থাকার জন্য চাইল্ড ফ্রেন্ডলি কোর্ট গঠনের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন বিচারপতি শ্রী গুপ্তা৷ রাজ্যের প্রতিটি জেলাতে জুভেনাইল হোম স্থাপন করার জন্য তিনি রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন রাখেন৷
শিশুরা পবিত্র মনের অধিকারী৷ তাদের সঙ্গে সবসময় বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করতে হবে৷ শিশুদের অধিকার রক্ষায় সমাজের সকলকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে৷ সেমিনারের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সেমিনারের আয়োজক ছিল ত্রিপুরা হাইকোর্টের জুভেনাইল জাস্টিস কমিটি৷ সহযোগিতায় রয়েছে রাজ্য সরকারের সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তর ও রাজ্য আইনসেবা কর্তৃপক্ষ৷ সেমিনারে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার ও বিচার ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় থাকলেই সুন্দর সমাজ গঠন করা সম্ভব৷ আর সমাজ যদি সুন্দর ও সুস্থ হয় তবে অপরাধমূলক মনোভাব হ্রাস পাবে৷ ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার জুভেনাইল আইনে সংশোধন এনেছে৷ এই আইনকে খুবই সতর্কভাবে প্রয়োগ করা দরকার৷ কোন শিশু যাতে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সে দিকে গুরুত্ব সহকারে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ চাইল্ড অ্যাক্ট-এ শিশুদের জন্য যে সকল যোজনা রয়েছে ত্রিপুরাতেও সেগুলি চালু করার উপর গুরুত্বারোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, রাজ্যের প্রতিটি জেলায় জুভেনাইল হোম স্থাপন করার বিষয়ে শীঘ্রই উদ্যোগ গ্রহণ করবে রাজ্য সরকার৷ ঐসব হোমগুলিতে শিশুদের উপযোগী ও আকর্ষণীয় উপকরণেরও ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশের গরিব মহিলাদের জন্য বিভিন্ন যোজনা চালু করেছেন৷ কারণ শিশুদের উপর মায়ের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি পড়ে৷ উজ্জ্বলা যোজনায় গরিব মহিলাদের বিনামূল্যের গ্যাস কানেকশন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ আমাদের রাজ্যেও গত ১০০ দিনের মধ্যে ১ লক্ষ ৬ হাজার গরিব মহিলাকে উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাস কানেকশন দেওয়া হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গরিব মানুষের চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার আয়ুষ্মান ভারত যোজনা চালু করেছে৷ এই যোজনায় বীমার মাধ্যমে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ দেবে কেন্দ্র সরকার৷ আমাদের রাজ্যেও আয়ুষ্মান ভারত যোজনা সফলভাবে চালু করা হয়েছে৷ এছাড়াও যেসব পরিবারে বিদ্যুৎ নেই সৌভাগ্য যোজনার মাধ্যমে সেই সকল গরিব পরিবারে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার পর্যটন ও শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে ত্রিপুরাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়৷ এর জন্য প্রথমেই দরকার ত্রিপুরাকে শান্তিপূর্ণ রাজ্য হিসাবে গড়ে তোলা৷ আমরা ত্রিপুরাকে নেশামুকক্ত রাজ্য হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি৷ কারণ কোন রাজ্য নেশাকারবারের মাধ্যমে কখনো সর্বশ্রেষ্ঠ হতে পারে না৷ পুলিশ প্রশাসনও রাজ্যকে নেশামুক্ত রাজ্য হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ ত্রিপুরাকে নেশামুক্ত রাজ্য হিসাবে গড়ে তোলার কাজে রাজ্যের সকল অংশের মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
বিশেষ অতিথির ভাষণে ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অজয় রাস্তোগী বলেন, আজকে যারা শিশু তারাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ৷ সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিদা প্রদানের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎকে সুন্দর করা গেলে তবেই শক্তিশালী দেশ গঠন হবে৷ তিনি বলেন, শিশুদের অধিকার সঠিকভাবে কার্যকর করা আমাদের দায়িত্ব৷ এই জন্য জুভেনাইল সিস্টেমকে আরও গুরুত্ব সহকারে কার্যকর করতে হবে৷ রাজ্য সরকারকেও এজন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে৷ রাজ্যে শিশুদের জন্য যে হোমগুলি রয়েছে সেখানে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন বিচারপতি শ্রী রাস্তোগী৷
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, ত্রিপুরা হাইকোর্টের বিচারপতিদ্বয় শুভাশীষ তালাপাত্র ও অরিন্দম লোধ, সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা ডি রিয়াং প্রমুখ৷