BRAKING NEWS

নির্ভয়া কাণ্ডে দোষীদের ফাঁসির সাজাই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট

নয়াদিল্লি, ৯ জুলাই (হি.স.) : নির্ভয়া কাণ্ডে দোষীদের ফাঁসির সাজাই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলায় অাগেই দোষী চারজনকে ফাঁসির সাজা দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। সাজাপ্রাপ্ত চার জনের মধ্যে তিন জন একটি রিভিউ পিটিশনে তাঁদের ফাঁসির সাজা বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আর্জি জানায়। সেই আর্জি খারিজ করে ফাঁসির সাজাই বজায় রাখল সুপ্রিম কোর্ট।
সোমবার প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি আর বানুমাথি ও অশোকভূষণের বেঞ্চ এদিন ওই ধর্ষণের ঘটনায় দোষী মুকেশ (২৯), পবন গুপ্ত (২২), বিনয় শর্মা (২৩)’র শাস্তির ব্যাপারে রায় দিল। তবে, ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত চতুর্থ অপরাধী অক্ষয় কুমার সিং নিজের ফাঁসির সাজা কমানোর আর কোনও আবেদন করেনি। এদিন শীর্ষ অাদালত নির্ভয়া-কাণ্ডের অপরাধীদের ফাঁসির সাজাই বহাল রাখল। একমাত্র দোষীরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার অাবেদন জানাতে পারবে।
গত বছর মে মাসে দিল্লি হাইকোর্টের দেওয়া শাস্তি বহাল রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এরপর শাস্তি কমানোর জন্য তারপর আবেদন করে দোষীরা। গত বছরের নভেম্বরে তাদের আবেদন মঞ্জুর করে শীর্ষ আদালত। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে রায়দান স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। অভিযুক্তদের বাসের চালক রাম সিং জেলের মধ্যেই আত্মহত্যা করে। অন্য আরেক অভিযুক্তের বয়স ওই ঘটনার সময় ১৮’র কম ছিল, তাকে জুভেনাইল হোমে রাখা হয়েছিল। তিন বছর সেখানে থাকার পর ছেড়েও দেওয়া হয়। এই ঘটনাটিকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ‘নৃশংস, পাশবিক ও নারকীয়’ বলে অভিহিত করা হয়।
পিটিশনে ধর্ষকদের আইনজীবী দাবি করেন, ‘মৃত্যুদণ্ড মানে বিচারের নামে ঠান্ডা মাথায় খুন। বহু দেশে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। সভ্য দেশে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডের কোনও স্থান নেই।’ দোষীদের সমর্থনে আইনজীবী জানান, এরা কেউই জন্মগত অপরাধী নয়। এর আগে কোনও অপরাধের সঙ্গে এদের নম জড়ায়নি। ঝোঁকের বশে হঠাত্ই এই কাজ করে ফেলে। গত বছর নভেম্বরে সেই পিটিশনের শুনানি হয়। আজই সুপ্রিম কোর্ট তার রায় জানাবে।
প্রসঙ্গত, গত ২০১২ সালে ১৬ ডিসেম্বর রাতে প্যারামেডিক্যালের ছাত্রী ও তার এক বন্ধু সিনেমা দেখে ফিরছিলেন। দিল্লির মুনিরকায় অপেক্ষা করছিলেন অটোর জন্য। দ্বারকা ফেরার কথা ছিল তাঁদের। কোনও গাড়ি না পেয়ে একটা অফ ডিউটি চার্টার্ড বাসে উঠে পড়েন দু’জনে।
বাসে উঠেন দেখেন ড্রাইভারের কেবিনে বসে আছে চারটি ছেলে আর দু’জন কেবিনের পিছনে। বাকি গোটা বাসটা খালি। বাসের বাঁদিকে বসেছিলেন তাঁরা। ২০ টাকা ভাড়াও দেন। এয়ারপোর্টের কাছে ফ্লাইওভারের নিচে পৌঁছায় বাস। হঠাৎ ড্রাইভারের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসছে চারটি ছেলে।
নির্ভয়ার বন্ধু বুঝতে পারেন বাসটি ভুল পথে যাচ্ছে। আর দরজাগুলো বন্ধ। চেঁচিয়ে ওঠেন তিনি। শুরু হয় বচসা। এত রাতে একটা মেয়েকে নিয়ে কেন যাচ্ছে? প্রশ্ন করা হয় ওই যুবককে। মারধর করা হয় তাকে। বন্ধুকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন যুবতী। তখন বাসের ভিতর অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তাঁর বন্ধু। তাঁকে টেনে নিয়ে যাওয়া হল পিছনের সিটে। মদ্যপ ছেলেগুলো ধর্ষণ করে তাঁকে। আটকাতে গেলে একটি ছেলে তাঁর শরীরের গোপন অঙ্গে রড ঢুকিয়ে দেয়। মেয়েটি তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। অর্ধ-নগ্ন, অচেতন যুবতী ও তাঁর বন্ধুকে বাস থেকে ঠেলে ফেলে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
রাত ১১টায় তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সফদরজং হাসপাতালে সাতদিন ধরে চলে জীবন-মরণ লড়াই। জীবনের লড়াইতে হেরে যান নির্ভয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *