পাটনা, ২৭ আগস্ট (হি.স.): বিহারে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরবেন লালু প্রসাদ যাদব| পরাস্ত হবে নীতীশ-ভারতীয় জনতা পার্টি| রবিবার পাটনার ঐতিহাসিক গান্ধী ময়দানে `বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও’ মহাজোটের সমাবেশে এমনই দাবি করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়| লালুর ডাকে বিজেপি বিরোধী সভা শুরু হওয়ার অনেক আগেই এদিন গান্ধী ময়দানে এসে পৌঁছন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়| সভামঞ্চে পুষ্পস্তক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের লড়াকু নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা জানান আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব ও তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবী| পা ছুঁড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম করেন লালুর ছেলে তথা বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব| সভায় প্রত্যেকেই `বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও’ শ্লোগান তোলেন| সভার শুরুতেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে আক্রমণ করেন লালু প্রসাদ যাদবের ছেলে তেজস্বী যাদব| বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, `বড়দের সম্মান করাটা আমাদের সংস্কার| নীতীশ কুমার আগেও আমার চাচা ছিলেন, এখনও আছেন| কিন্তু, তিনি ভালো চাচা নন|’ বিজেপিকেও আক্রমণ করতে ভোলেননি তেজস্বী| কটাক্ষের সুরে লালু পুত্র বলেছেন, এরা সবাই দুর্নীতিতে যুক্ত| এরপর এক এক করে বক্তব্য রাখেন উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ, ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন প্রমুখরা|
এরপরই বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়| বক্তব্যের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভারতীয় জনতা পার্টিকে তুলোধনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়| আক্রমণ করতে পিছপা হননি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকেও| বিজেপি বিরোধী মহাজোটের সমাবেশে জনসমুদ্র দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, `অনেক সভা দেখেছি, জনতা আসে চলে যায়| কিন্তু এই সভার জনতাকে দেখে আমি অভিভূত| জনতার এই ঢল বলে দিচ্ছে মানুষ কী চাইছেন?’ এরপরই বিজেপিকে তুলোধনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, `শুধু মানুষকে ভয় দেখানো হচ্ছে, কেউ বিরোধিতা করলেই তাঁকে ভয় দেখানো হচ্ছে| আমি ভয় পাইনা| আমাদর দলের বহু নেতাকে জেলে পাঠিয়েছে| আমাদের দল বিরোধিতা করায়, লোকসভার দলনেতাকে জেলে পুরে দেওয়া হয়| আমরাও দেখব তোমাদের কত জেল আছে, আমাদের দলের কত লোককে জেলে ঢোকাতে পারো| আমরা লড়াই করে বাঁচতে চাই|’ কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, `শুধু মিথ্যে কথা বলে কেন্দ্রীয় সরকার| আচ্ছে দিনের তিন বছর চলে গিয়েছে, অত্যাচার চলছে বিহার, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ুর ও বাংলার উপর| অত্যচার চলছে জিএসটি-র নামে|’
এরপরই রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরডেডি) প্রধান লালু প্রসাদ যাদবকে রাজনৈতিক সমর্থণের কথা জানিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, `নীতীশ কুমারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সময়ও আমি বিহারে এসেছিলাম| তবে এবার বিহারের মানুষের জন্য এসেছি| নীতীশ কুমার ধোঁকা দিয়েছেন বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে| বিহারে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরবেন লালু প্রসাদ যাদব| পরাস্ত হবে নীতীশ-ভারতীয় জনতা পার্টি|’ মমতার কথায়, `যে প্রতারণা করে, মানুষ তাঁকে গ্রহণ করে না| বিহারে আগামী নির্বাচনে নীতীশের পাশে দাঁড়াবে না মানুষ| বিহারে পুনরায় ক্ষমতায় আসবেন লালু প্রসাদ যাদব| সত্য নিয়ে বাঁচাবো, জীবনে আপোস করব না| লালু প্রসাদের পাশে আছি|’ বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছেন, `দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা চলছে সর্বত্র, আমরা আটকাবোই| সব বিরোধী দল একজোট হয়ে লড়াই করবে| বিরোধীরা একজোট হলে বিজেপি হেরে যাবে|’ বক্তব্যের একেবারে শেষের দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, `বিজেপির সঙ্গে যাঁরা থাকবে, তাঁরা আর থাকবে না| আগে ২০১৯ সালে জিতে দেখাক বিজেপি|’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সভার উদ্যোক্তা আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব| বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে `ধোঁকাবাজ’আখ্যা দিয়ে লালু প্রসাদ যাদব বলেছেন, `বিহারের বেটি মীরা কুমার রাষ্ট্রপতি হতে পারতেন| কিন্তু নীতীশ কুমার ধোঁকা দিয়েছেন|’ নীতীশকে কটাক্ষ করে লালু আরও বলেছেন, `জানতাম নীতীশ কুমার ঠিক লোক নন, তা সত্ত্বেও বেশি আসন পেয়ে নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী করি| বিহারে জেতার পর কথা রেখেছিলাম| আসলে তেজস্বীর জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন নীতীশ| নীতীশকে সমর্থণের জন্যই আমরা ৮০ জন বিধায়ককে দিয়েছিলাম|’
বিরোধী ঐক্য তুলে ধরতে রবিবার ঐতিহাসিক গান্ধী ময়দানের সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস, বহুজন সমাজ পার্টি সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে| আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ও লালুর ডাকে গান্ধী ময়দানের সভায় উপস্থিত হন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়| লালুর সভায় মুখ্য আকর্ষণ ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের লড়াকু নেত্রী মমতাই| এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, বিদ্রোহী জেডি(ইউ) নেতা শরদ যাদব এবং সাংসদ আলি আনোয়ার, রাজ্যসভার বিরোধী নেতা তথা কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ এবং কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশি, সিপিআই নেতা ডি রাজা, এনসিপি-র তারিক আনওয়ার, আরএলডি-র চৌধুরী জয়ন্ত সিং, সিপিআই-এর সুধাঙ্কর রেড্ডি, ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, জেভিএম-এর বাবুলাল মারান্ডি প্রমুখরা| কিন্তু, লালুর আশায় জল ঢেলে গান্ধী ময়দানে মহাজোটের সভায় এলেন না কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী, বহুজন সমাজ পার্টির সুপ্রিমো মায়াৱতী| সোনিয়া সভায় না এলেও, লালুর মেগা সমাবেশের সাফল্য কামনা করে মোবাইল মারফত বার্তা পাঠান কংগ্রেস সভানেত্রী| মোবাইলে প্লে করে সেই বার্তা শোনানো হয়| আবার রাহুল গান্ধী মেগা র্যালির প্রেক্ষিতে বার্তা পাঠান|