নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ আগস্ট৷৷ চিটফান্ড ইস্যু, বেহাল স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে যেখানে ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকার
অভিযুক্ত, সেখানে এই রাজ্যে সিপিএম’র রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর এবং দলের পলিটব্যুরো সদস্য তথা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে মঞ্চে বসিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঐ একই বিষয় নিয়ে তৃণমূল সরকারকে সাড়াশি আক্রমণ করেন বঙ্গের সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র৷ অথচ এই দুটি ইস্যু রাজ্যে জ্বলন্ত সমস্যা হলেও সিপিএম রাজ্য সম্পাদক এবং মুখ্যমন্ত্রী মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন৷ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বর্বর আক্রমণের বিরুদ্ধে আক্রান্ত গণতন্ত্র প্রিয় মানুষের প্রতি সংহতি জানাতে সোমবার সিপিএম রাজ্য কমিটি এক হলসভার আয়োজন করে৷ তাতে, মুখ্য বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক তৃণমূল কংগ্রেসের বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেন৷ একই সাথে চিটফান্ডের দৌলতে পশ্চিমবঙ্গবাসী যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসক শূন্যতার কারণে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে এনিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ এই হলসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর এবং দলের পলিটব্যুরো সদস্য তথা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকেও তৃণমূল কংগ্রেসকে নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত বলেই মনে হয়েছে৷
এদিন, সূর্যবাবু বলেন, পশ্চিমবঙ্গে হাজার হাজার মানুষ চিটফান্ডে সর্বস্বান্ত হয়েছেন৷ এক সময় স্বল্প সঞ্চয়ে পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বর স্থানে ছিল৷ তৃণমূল সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সেই স্বল্প সঞ্চয় মুখ থুবড়ে পড়েছে৷ তার বদলে চিটফান্ড কোম্পানিগুলি যেভাবে প্রসার বৃদ্ধি করেছিল সে কারণেই বহু মানুষ আজ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন৷ তিনি সমালোচনার সুরে বলেন, চিটফান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে তৃণমূল সরকারের কোন মাথাব্যথা নেই৷ বরং তৃণমূলের নেতা মন্ত্রিরা চিটফান্ড সংস্থাগুলির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেছেন৷ এদিকে, স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল চিত্র তুলে ধরে সূর্যবাবু বলেন, পশ্চিমবঙ্গে হাসপাতাল রয়েছে, কিন্তু চিকিৎসক নেই৷ চিকিৎসক শূন্যতার কারণে স্বাস্থ্য পরিষেবা বেহাল হয়ে পড়েছে৷ তিনি কটাক্ষ করে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কেবল বেসরকারি হাসপাতালগুলির প্রতি নজর দিয়ে থাকেন৷
চিটফান্ড ইস্যু এবং বেহাল স্বাস্থ্য পরিষেবা এই রাজ্যেরও জ্বলন্ত সমস্যা৷ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এবিষয়গুলি নিয়ে বামফ্রন্ট সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে৷ অথচ এদিন এই হল সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নানা বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে সাঁড়াশি আক্রমণ করলেও চিটফান্ড এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে কোন কথা বলেননি৷ ফলে, পশ্চিমবঙ্গ সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের চিটফান্ড ইস্যু এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে তৃণমূল সরকারের কড়া সমালোচনার কারণে এরাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারও কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
এদিন মূলত, হলসভায় বক্তারা তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করে পশ্চিমবঙ্গে বর্বরতার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন৷ ৯ আগস্ট তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি জনসভার প্রাক্মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বর্ণনা করে সূর্যকান্ত মিশ্র, বিজন ধররা যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে এরাজ্যে তৃণমূলের উত্থান ঘিরে তাদের যথেষ্ট চিন্তিত বলেই মনে হয়েছে৷ এই হলসভার মঞ্চ থেকে সকলকে তৃণমূল কংগ্রেসের বর্বরতার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে৷ এদিন, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র নেই বলে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন৷ এরাজ্যের বিষয়ে কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, কংগ্রেস ভেঙ্গে যে কেউ তৃণমূলে যোগ দিতেই পারেন৷ কিন্তু তাতে রাজ্যবাসীর কোন লাভ হবে না৷ বিজনবাবু বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ২০১১ সাল থেকে ঘরবাড়ি লুট হচ্ছে, জিজিয়া কর বসানো হচ্ছে এবং নারী নির্যাতন মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে৷ এমনকি কৃষকদেরও জমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে৷ এই কয়েক বছরে ৬০ হাজারের ওপর বাড়িঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে৷ আর এ রাজ্যে তৃণমূলের ক্ষমতা বৃদ্ধি হলে পশ্চিমবঙ্গের মত অবস্থা এখানেও হতে পারে বলে বিজনবাবু ইঙ্গিত দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন৷
এদিকে, দেশে কমিউনিস্টদের ঘাঁটি বলে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের ওপর যেভাবে আঘাত আসছে সে বিষয়ে গভীর চিন্তা ব্যক্ত করেছেন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য তথা এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ এবিষয়ে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ কমিউনিস্টদের ঘাঁটি ছিল৷ সেখানে কমিউনিস্টরা এখন তৃণমূলের রক্ত চক্ষুর শিকার হচ্ছেন৷ তাতে তিনি বিশ্বাস করেন, গোটা দেশেও এভাবেই কমিউনিস্টরা বারবার আক্রান্ত হবেন৷ এই প্রবণতা আগামীদিনে আরো বিপদ ডেকে আনবে বলে সকলকে তিনি সতর্ক করেছেন৷ এদিকে, তৃণমূলের বাড়বাড়ন্তের পেছনে বিজেপির পরোক্ষ মদত রয়েছে বলে তিনি কটাক্ষ করেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তৃণমূলের সাথে বিজেপি মুখে ছায়া যুদ্ধ করলেও তাঁরা একই শ্রেণী স্বার্থের অনুসারী৷ এজন্য এদিন তিনি বামপন্থী লাইনের বাইরে যারা রয়েছেন তাদেরকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য বলেছেন৷ পাশাপাশি দলীয় নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মানুষের কাছে গিয়ে এই সমস্ত কিছু তাদের বুঝাতে হবে৷ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন, এর জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে জনমনে বিভ্রান্তি দূর করা যায়৷