নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ আগষ্ট৷৷ পশ্চিমবঙ্গে টানা দুইবার সিপিএমকে পরাজিত করে এবার তৃণমূল নেত্রী মমতা
ব্যানার্জীর লক্ষ্য ত্রিপুরা৷ আর এই সেই লক্ষ্য পূরণে ত্রিপুরায় আগামী ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমকে রাজ্য ছাড়ার ডাক দেবেন তিনি৷ ৯ আগষ্ট মঙ্গলবার আগরতলায় স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে সমাবেশের মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে এই বার্তা ছড়িয়ে দেবেন৷ ইতিমধ্যে মমতার সেনাপতি মুকুল রায় সিপিএমকে ত্রিপুরা ছাড়ার ডাক দিতেই তৃণমূল নেত্রীর এই রাজ্য সফর তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন৷
পূর্বঘোষিত সূচি অনুযায়ীই সোমবার বিকাল চারটা চল্লিশ মিনিট নাগাদ রাজ্যে এলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী মমতা ব্যানার্জী৷ তিনি রাজ্যে এসেই সোজা চলে যান সরকারী অতিথিশালায়৷ মমতার সাথে আসেন মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম৷ তাঁদের বিমান বন্দরে স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন দলের রাজ্য কমিটির চেয়ারম্যান রতন চক্রবর্তী, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন, বিধায়ক আশিষ কুমার সাহা, বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেন, বিধায়ক প্রণজীৎ সিংহ রায়, বিধায়ক দিবচন্দ্র রাঙ্খল প্রমুখ৷ তাছাড়াও ছিলেন অগণিত নেতা কর্মী৷ আগরতলা বিমানবন্দরের ভিআইপি গেইট দিয়ে আগরতলায় সরকারী অতিথিশালার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন দিন৷ বিমানবন্দর থেকে আগরতলা সরকারী অতিথিশালা পর্যন্ত রাস্তার পাশে বহু মানুষ মমতা ব্যানার্জীকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ কয়েকশো বাইক নিয়ে দলীয় কর্মী সমর্থকরা মিছিল করে মমতা ব্যানার্জীকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে আসেন৷ দলের মহিলী কর্মী সমর্থকরা জোড়া ফুলের ছাপ দেওয়া শাড়ি পরে সরকারী অতিথিশালার সামনে উপস্থিত ছিলেন৷ সেখানে মমতাকে স্বাগত জানিয়ে খুশির জোয়ারে ভেসে তারা উল্লাস প্রদর্শন করেন৷
এদিকে, মমতার রাজ্যে পদার্পনের প্রাক্কালে আগরতলায় জেকশন গেইট সংলগ্ণ দলের রাজ্য কার্য্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়৷ সাংবাদিক সম্মেলনে মুকুল রায় বলেন, ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মানিক সরকারকে সরতে হবে৷ আগামী সেপ্ঢেম্বরে হবে তৃণমূলের যুব সম্মেলন৷ এই সম্মেলনে আসবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারি, মুনমুন সেন এবং টলিউডের হার্টথ্রুব তারকা তথা সাংসদ দেব৷
সাংবাদিক সম্মেলনে, মুকুল রায় জানান, এই রাজ্যের মানুষ এখন বাম শাসনের প্রতি আর আস্থা রখতে পারছেন না৷ তাছাড়া এরাজ্যের উপজাতি অংশের জনগণের মধ্যে বামফ্রন্ট সরকারের প্রতি বিরক্তি এসে গিয়েছে৷ এই প্রসঙ্গে মুকুলবাবু বলেন, পাহড়ে উন্নয়ন হচ্ছেনা৷ পিছিয়ে যাচ্ছেন উপজাতি অংশের মানুষ৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত তারা৷ তাই আজ আওয়াজ উঠেছে পৃথক রাজ্যের৷ আর এই দাবী উঠার পেছনে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের ব্যর্থতাই দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন তিনি৷ মুকুল রায় বলেন, মঙ্গলবার আগরতলায় স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে দলের সমাবেশ হবে৷ এই সমাবেশ হবে ঐতিহাসিক সমাবেশ৷ সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানাজী৷ এই জনসমাবেশ থেকে ২০১৮ সালে ক্ষমতার মসনদ থেকে বানফ্রন্টকে হঠানোর তথা পরিবর্তনের ডাক দেওয়া হবে৷ সিপিএম প্রসঙ্গে মুকুল রায় জানান, ২০১৭ সালের মধ্যে দেশ থেকে এই দলটি অবলুপ্ত হয়ে যাবে৷ ২০১৮ তে ত্রিপুরার শাসন ক্ষমতা থেকে সরে যেতেই হবে সিপিএমকে৷ কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট প্রসঙ্গে মুকুল রায় জানান, এই দুটি দলের জোট হচ্ছে নীতি ও আদর্শবিহীন জোট৷ এই জোটকে কোনভাবেই এরাজ্যের মানুষ মেনে নেবেন না বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন৷ পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমেরে সাথে কংগ্রেসের জোটকে এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার অস্বীকার করছেন, বিপক্ষে কথা বলছেন ত্রিপুরার মাটিতে দাঁড়িয়ে৷ অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে সূর্য্যকান্ত মিশ্রদের সাথে নিয়ে জোটের পক্ষে সওয়াল করছেন৷ প্রচার চালিয়েছেন মানিক বাবু৷ এখন আবার তৃণমূলের জনসমাবেশের প্রাক্কালে সূয্যবাবুকে ত্রিপুরায় নিয়ে এসে হল সভা করছেন৷ এরাজ্যের মানুষের সাথে রাজনৈতিক দিক দিয়ে মানিক সরকার দ্বিচারিতা করে চলেছেন বলে মন্তব্য করেন মুুকুল রায়৷ তিনি জানান, গত কিছুদিন ধরে ত্রিপুরায় এসে বিভিন্ন এলাকা সফর করে যেটা প্রত্যক্ষ করেছেন, তাতে দেখা গিয়েছে এরাজ্যের মানুষের মধ্যে একটি উন্মাদনা রয়েছে৷ এরাজ্যের মানুষ বাম শাসনে যে তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছেন তার প্রমাণ মিলছে৷ আর এই রাজ্যের মানুষকে বামফ্রন্টের অপশাসন থেকে মুক্তি দিতেই ত্রিপুরায় মমতা ব্যানার্জীর পদার্পন৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত দফায় দফায় দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বরা এখানে আসবেন৷ দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে সর্বোতভাবে প্রদেশ কমিটিকে সহায়তা করবে৷ এদিকে, এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মুকুল রায় জানিয়েছে, বিজেপি, কংগ্রেস ছেড়ে বেশ কয়েকজন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন৷ দলত্যাগীদের মধ্যে ঐসব দলের শাখা সংগঠনের নেতৃত্বও রয়েছেন৷ তাছাড়া প্রাক্তন আইএএস অফিসার সহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিও এদিন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন৷ আগামীকালের জনসমাবেশেও বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তৃণমূলে যোগ দেবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে৷