হায়দরাবাদ ও নয়াদিল্লি, ১৯ জানুয়ারি (হি.স.): হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত দলিত পিএইচডি ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃতু্যর ঘটনায় উত্তাল জাতীয় রাজনীতি| এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল| সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব মনে করিয়ে দিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই ঘটনার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতেও বলেছেন| শুধু আপ সুপ্রিমো নন, দলিত ছাত্রের মৃতু্যতে সহানুভূতি দেখাতে হায়দরাবাদে প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে তৃণমূলও|মঙ্গলবার সকালে টুইট করে কেজরিওয়াল লিখেছেন, `পাঁচ দলিত ছাত্রকে বয়কট এবং বহিষ্কার করাটা সরকারের কাজ নয়| বরং সাংবিধানিক ভাবে তারা দলিতদের উন্নয়নে দায়বদ্ধ|’ আপ সুপ্রিমো অপর টুইটে দাবি করেন `এটা আত্মহত্যা নয়| হত্যা| গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায় এবং সমতার হত্যা| তাঁর মন্ত্রিসভার ওই সদস্যকে বহিষ্কার করে মোদীর দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত|’অন্য দিকে, এই ঘটনায় সহানুভূতি দেখাতে হায়দরাবাদে এক প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে তৃণমূল| তৃণমূল সূত্রে খবর, দেশ জুড়ে সংখ্যালঘু, দলিত এবং অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে দলের দুই সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং প্রতিমা মণ্ডলকে সেখানে পাঠানো হচ্ছে|উল্লেখ্য, গত রবিবার ছাত্রবাসে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত এক পিএইচডি গবেষক| এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে কেন্দ্রীয় শ্রম ও রোজগার মন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয়র নাম| মন্ত্রী দত্তাত্রেয়, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আপ্পা রাও, বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র স্থানীয় দুই নেতা সুশীল কুমার ও বিষ্ণুর বিরুদ্ধে তফসিলি পীড়ন প্রতিরোধ আইনে অভিযোগও দায়ের করেছে সাইবারাবাদ এলাকার গাচিবাউলি থানার পুলিশ|ঘটনার সূত্রপাত ২০১৫-র অগস্ট মাসে| ১৯৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত ইয়াকুব মেননের মৃতু্যদণ্ড নিয়ে বিশ্ববিদ্যলয় চত্বরে বিক্ষোভ দেখানোর সময় বিজেপি প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের এক ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের অম্বেডকর ইউনিয়নের সদস্য রোহিত ও তাঁর চার সতীর্থদের বিরুদ্ধে| প্রাথমিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি রোহিতদের ক্লিন চিট দেয়| কিন্তু পরে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ| ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, দত্তাত্রেয় চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে জানান ওই বিশ্বাবিদ্যালয় জাতিবাদের আখড়া হয়ে উঠেছে| চরমপন্থী এহং জাতীয়তাবাদ বিরোধী হয়ে উঠেছে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ| এর পরেই রোহিত-সহ পাঁচ ছাত্রকে ক্লাসরুম এবং গবেষণাগার ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অন্য কোনও জায়গায় যেতে বারণ করা হয়| বের করে দেওয়া হয় ছাত্রাবাস থেকেও| এমনকী, ক্যান্টিনে ঢোকার অনুমতিও কেড়ে নেওয়া হয়| তার পর থেকে বিশ্ববিদ্যলয় ক্যাম্পাসের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে থাকছিলেন রোহিত-সহ পাঁচ জন| সেই তাঁবু ভেঙেও দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ| গত রবিবার হস্টেলে এক সতীর্থের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় রোহিতের দেহ| এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়ে পড়ুয়ারা|