নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ জানুয়ারী৷৷ মনোরঞ্জন ইস্যুতে বুধবার বিধানসভা এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠে যে একসময় ট্রেজারি বেঞ্চ এবং বিরোধী সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতির উপক্রম দেখা দেয়৷ অধ্যক্ষ সভা মুলতুবি ঘোষণার পর ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা বিরোধী দলের সদস্যদের দিকে মারমুখীভাবে তেড়ে আসলে মুখ্যমন্ত্রী ওয়েলে নেমে এসে তাদের থামাতে হস্তক্ষেপ করেন৷ পরবর্তী সময়ে বিরোধী দলের সদস্যরা অভিযোগ করেন, তাঁদের মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা৷ তাতে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে বলে বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায় বর্মন দাবি জানালে অধ্যক্ষ সমগ্র ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন৷ ফলে এদিনের এই উদ্ভুত পরিস্থিতিকে বিভিন্ন মহল থেকে সাম্প্রতিক কালের নজিরবিহীন বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে৷
[vsw id=”Bl9X2TH2LkU” source=”youtube” width=”325″ height=”244″ autoplay=”yes”]এদিন, প্রশ্ণোত্তর পর্ব শেষে কংগ্রেস মনোরঞ্জন ইস্যুতে রাজ্য সরকারকে খোঁচাতে শুরু করেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা থেকে শুরু করে গ্রেপ্তার ইত্যাদি সমস্ত কিছুই মূলত লোক দেখানো বলে দাবি করেন রতন লাল নাথ৷ উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্বেও তাঁকে কিভাবে গ্রেপ্তার করা হল সে প্রশ্ণ করেন তিনি৷ এরই পাশাপাশি বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতির সাথে সাথেই মনোরঞ্জনকে চটজলদি গ্রেপ্তারি নাটক কিনা সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন৷ শ্রীনাথ মনোরঞ্জন ইস্যুতে রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার সাথে সাথেই ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরাও মেজাজ হারিয়ে বসেন৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে অধ্যক্ষ রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ বিরোধী দলের সদস্যদের এই ইস্যুতে কথা বলার আর কোন সুযোগ দেওয়া হবে না জানিয়ে পরবর্তী কার্যসূচী শুরু করে দেন৷ কিন্তু নিজেদের সরকার বিরোধী আক্রমনাত্মক অবস্থানে অনঢ় কংগ্রেস বার বার মনোরঞ্জন ইস্যুতে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার আর্জি জানাতে থাকেন৷ বিরোধীদের চাপের মুখে অবশেষে অধ্যক্ষ ১ মিনিট কথা বলার সুযোগ দিলে আপত্তি জানান মন্ত্রী মানিক দে ও ভানুলাল সাহা সহ ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা৷ এসবের মধ্যে বিরোধী দলনেতা মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সাড়াশী আক্রমণ চালান৷ তিনিও মনোরঞ্জন ইস্যুতে পুরো ঘটনা একটা সাজানো নাটক বলে দাবি করেন এবং পুলিশকে দিয়ে এমনভাবে চার্জশিট কেন তৈরি করা হল বলে প্রশ্ণ ছঁুড়ে দেন৷ মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়ে বিরোধী দলনেতার মন্তব্যে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা৷ মন্ত্রী মানিক দে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন৷ একই ইস্যু নিয়ে বার বার বিধানসভায় আলোচনা অধ্যক্ষ কেন মেনে নিচ্ছেন সে প্রশ্ণ করেন৷
অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী দাঁড়িয়ে বিরোধীদের সমস্ত আক্রমণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন৷ যে সমস্ত অভিযোগ ইতিমধ্যে বিরোধী দল তুলেছে তা খন্ডন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার নয়, বিরোধী দলের সদস্যরা নাটক করছেন৷ কংগ্রেসের জমানায় এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল৷ তখন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি, বিরোধীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ণ ছঁুড়ে দেন তিনি৷ পাশাপাশি দাবি করেন, আমাদের দল এবং সরকার এমন নয়৷ তিনি বলেন, উচ্চ আদালত জানতে চেয়েছে মৌখিক আদেশ দেওয়া সত্বেও মনোরঞ্জনকে কেন গ্রেপ্তার করা হল৷ আমরাও চাইছি আসল ঘটনার সত্যতা বের হউক৷ আর তদন্ত হলে সমস্ত কিছু বেরিয়ে আসবে৷ আগে থেকে কল্পনাপ্রসূত কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোন মানে হয় না বলে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এরই সাথে দাবি করে বলেন, আদালতের কাজে কখনই হস্তক্ষেপ করা হয়নি৷ বিরোধী দল বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে চরম অসন্তোষ্ট হয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা ওয়েলে নেমে নিজেদের বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করলে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরাও হৈ হট্টগোল শুরু করেন৷ একসময় মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যে তুমুল তর্ক বিতর্ক বেঁধে যায়৷ তাতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রীও এবং বলেন, উচ্চ আদালত কখনোই বলেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এই মামলায় হস্তক্ষেপ করেছে৷ এনিয়ে পাল্টা যুক্তি তর্ক চলতে থাকলে সভা প্রচন্ড উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং অধ্যক্ষ রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ অধিবেশন ১০ মিনিটের জন্য মুলতুবি ঘোষণা করেন৷ এরপরই উভয় বেঞ্চের সদস্যদের মধ্যে গন্ডগোল আরো মারাত্মক আকার ধারণ করে৷ এক সময় পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করে যে মুখ্যমন্ত্রী ওয়েলে নেমে এসে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যদের থামান৷ মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সাময়িক পরিস্থিতি ঠান্ডা হলেও, অধ্যক্ষ পুণরায় অধিবেশন শুরু করলে বিরোধী দলনেতা ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা তাঁদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ সাথে সাথে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জোরালো দাবি জানান৷ বিরোধী দলনেতা যুক্তি দিয়ে বলেন, ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখানো গণতান্ত্রিক অধিকার৷ সরকারের কোন কাজে সন্তুষ্ট না হলে বিরোধীরা প্রতিবাদ জানাবেই৷ তাতে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা মারমুখী হয়ে উঠবে, সেটা গণতান্ত্রিক কাঠামোতে কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না৷ এই উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য অধ্যক্ষ দুঃখ প্রকাশ করেন৷
কিন্তু তাতেও বিরোধীরা হৈ হট্টগোল বন্ধ করেননি৷ বিরোধীদের থামাতে অধ্যক্ষ পুণরায় ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন৷ তা সত্বেও বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করতে থাকেন৷ তাতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যা হয়েছে তা নতুন নয়৷ অতীতেও এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে৷ মাঝে মাঝে এমনটা হয়ে গেলেও তা অনভিপ্রেত৷ আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি৷ ফলে, না ঘটলেই ভাল হত৷ তিনি স্পষ্ট জানান, উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলা নিয়ে কোন মন্তব্য করবেন না৷ তবে, মনোরঞ্জন আচার্য্যকে কেন গ্রেপ্তার করা হল সে বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, ডিজি তদন্ত করছে৷ দেখা যাক রিপোর্টে কি আসে৷ এবং বিরোধী দলকে অযথা উত্তেজনা সৃষ্টি না করার জন্য বলেন৷ কিন্ত, বিরোধীরা এতে কোনভাবেই আশ্বস্ত হননি এবং তাঁরা তাঁদের বক্তব্যে অনঢ় থাকেন৷