BRAKING NEWS

দুর্নীতি রোধে স্পেশাল অডিট

scamকাজের আগ্রগতি, কৃতিত্ব তখনই জনমনে দাগ কাটে যখন দুর্নীতিমুক্ত ভাবে প্রশাসন ও সরকার পরিচালিত হয়৷ দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের বুকের জোরই আলাদা৷ আর সরকার বা প্রশাসন দূর্বল হয়, জনগণের চোখে কল্যাণকামী হইয়া উঠিতে পারে না যদি এই সরকার বা প্রশাসন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়৷ সরকারী বিভিন্ন দপ্তর চলিয়া যায় দূর্নীতিবাজদের কব্জায়৷ তখন সরকারের প্রতি জনগণের দূরত্ব তৈরী হইতে থাকে৷ তলে তলে পায়ের তলার মাটি সরিয়া যায়৷ একটি সরকারের বিদায় ঘন্টা তখন বাজিয়া উঠে যখন সেই সরকার দূর্নীতির সঙ্গে আপোষ করে৷ যখন দূর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত হয়৷ কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের উপর হইতে জন আস্থায় ঘাটতি আসিবার বড় কারণগুলির মধ্যে রহিয়াছে ব্যাপক হারে দুর্নীতি৷ শুধু ইউপিএ সরকার নহে দেশের বিভিন্ন রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের পতন তখনই অনিবার্য্য হইয়া উঠে যখন প্রশাসন দুর্নীতিবাজদের কব্জায় চলিয়া যায়৷ এই সত্যিকে জানিয়াও ক্ষমতার দম্ভে গণনির্বাচিত সরকার গণইচ্ছাকে মর্য্যাদা দিতে চায় না৷ আর দম্ভই তলে তলে ক্ষমতা দম্ভীদের পায়ের তলার মাটি সরাইয়া দেয়৷ একদিন ক্ষমতার সিংহাসন ধুলায় লুটায়৷
এই ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকার দেশের অন্যান্য অনেক রাজ্য সরকারের চাইতে গণমুখী ও দুর্নীতি বিরোধী৷ অন্যান্য রাজ্যে যেভাবে দিনে ডাকাতি হয় তাহার সঙ্গে ত্রিপুরার বাম সরকারের তুলনা করিয়া লাভ নাই৷ তবে, একথা অনেক বেশী সত্যি যে, রাজ্যের বাম সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতির অভিযোগ দিনে দিনে স্ফীত হইতেছে৷ বিশেষ করিয়া ব্লকগুলি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হইয়াছে৷ বামফ্রন্ট সরকার যদি সারা দেশেই নজীর হইয়া থাকিতে চায়, তাহা হইলে দুর্নীতির সমস্ত পথ রুদ্ধ করিয়া সৎ, স্বচ্ছতার মধ্য দিয়া সরকার ও প্রশাসন পরিচালনার নিশ্চয়তা রাখিতে হইবে৷ কিন্তু ঘটনাপ্রবাহে দেখা যাইতেছে যে, ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকারের আমলেও ব্লকে ব্লকে দুর্নীতির পাহাড় তৈরী হইতেছে৷ এই দুর্নীতি রোধে তেমন কার্য্যকরী উদ্যোগ যদি না থাকে তাহা হইলে জনমনে সরকারের ভাবমূর্ত্তি সম্পর্কে সংশয় সন্দেহ দেখা দিতেই পারে৷ রাজ্য সরকার সত্যিই যদি দুর্নীতি রোধ করাকে অগ্রাধিকার দিতে চাহে তাহা হইলে প্রতিটি ব্লকেই বিশেষ হিসাব পরীক্ষার নিশ্চয়তা থাকিত৷ কিন্তু না, সেক্ষেত্রে সরকারের অনীহাই তো ফুটিয়া উঠিয়াছে বিধানসভা অধিবেশনে৷ রাজ্যের আটান্নটি ব্লকের মধ্যে মাত্র পাঁচটি ব্লকে স্পেশাল অডিট করা হইয়াছে৷ সরকারী তরফে ব্লকগুলিতে দুর্নীতির অভিযোগের কথা স্বীকার করা হইয়াছে৷ কর্মী স্বল্পতার কারণে সব ব্লকে স্পেশাল অডিট করা সম্ভব হইতেছে না বলিয়া বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহা যাহা বলিয়াছেন তাহা স্রেফ অজুহাত ছাড়া কিছুই নহে এবং দুর্নীতি রোধে এই সরকারেরও যে ষোল আনা সদিচ্ছা নাই তাহাই প্রমাণ করিয়া দিতেছে৷
বিভিন্ন দপ্তরে, ব্লকগুলিতে স্পেশাল অডিট করার জন্য রাজ্য সরকার অডিট ডাইরেক্টটরেট গঠন করিয়াছে ২০১০ সালে৷ এই দপ্তরটি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ৷ দুর্নীতি রোধ করিতে এই দপ্তরের যেখানে ভূমিকা আছে সেখানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই দপ্তরকে স্বয়ং সম্পূর্ণ না করিয়া বাম সরকার নিজেদের ভাবমুর্ত্তিকে উজ্জল রাখিতে পারিলেন না৷ বিভিন্ন ব্লকগুলির দুর্নাতির সঙ্গে বড় বড় রাঘব বোয়ালদের যুক্ত থাকার কারণেই সরকার কার্য্যত পিছনে হাটিতেছে৷ এইসব দুর্নীতির সঙ্গে নেতা মন্ত্রীদের নাম উঠিতে থাকায় স্পেশাল অডিট বন্ধেরই সিদ্ধান্ত নিয়াছে বলিয়া বিধানসভায় বিরোধীরা যে অভিযোগ তুলিয়াছেন তাহা কি উড়াইয়া দিবার মতো? যদি রাজ্য সরকারের দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ প্রশাসনই সত্যিকারের লক্ষ্য হয় তাহা হইলে অডিট দপ্তরকে সবচাইতে বেশী শক্তিশালী করিতে হইবে এবং সব ব্লকে স্পেশাল অডিটের নিশ্চযতা দিতে হইবে৷ কারণ রাজ্যে অন্যান্য দপ্তরের তুলনায় ব্লকগুলিতে দুর্নীতির থাবা সবচাইতে বেশী বিস্তৃত৷ এই থাবার হাত হইতে যদি ব্লকগুলিকে এখনই মুক্ত করা না যায় তাহা হইলে গ্রামীণ এলাকায় কাঙ্খিত উন্নয়ন হইবে না৷ জনগণের অর্থে রাতারাতি প্রভাবশালীদের শ্রীবৃদ্ধি অব্যাহত থাকিবে৷ রক্তচক্ষুর ভয়ে জনগণও সাময়িক চোখ বন্ধ করিয়া থাকিবে৷ কিন্তু ক্ষমতা দম্ভীদের যে পায়ের তলার মাটি সরিবে সে বিষয়ে সন্দেহ থাকিতে পারে না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *