নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ জানুয়ারি৷৷ বিভিন্ন দপ্তর এবং পঞ্চায়েত ও ব্লক স্তরে অডিট করা হয় কিনা এই প্রশ্ণে মঙ্গলবার বিধানসভায় রাজ্য সরকারকে কার্যত চাপে ফেলার কৌশল নেয় বিরোধী কংগ্রেস৷ তবে, অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহাও বিরোধীদের সমস্ত প্রশ্ণের কৌশলী জবাব দিয়ে তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন৷
এদিন, কংগ্রেসের রতন লাল নাথ ব্লক স্তরে অন্তবর্তীকালীন অডিট সম্পন্ন করা হয় কিনা এই প্রশ্ণের উত্তরে অর্থমন্ত্রী ভানুলাল সাহা জানান, অডিট ডাইরেক্টরেট ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৪৩টি, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৬২৯টি এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১২১৯টি মোট ২৭টি দপ্তরে ১৯৯১টি ইউনিটে অন্তবর্তীকালীন অডিটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ এছাড়াও এই তিনবছরে বিভিন্ন সরকারি অফিস, পিআরআই ও ইউএলবি সংস্থাগুলিতে অডিট নিয়ে নানা পরিকল্পনার বিষয়ও তিনি জানান৷ তাতে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যে স্পষ্ট হয়ে যায়, রাজ্যের সর্বত্র অডিট করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি৷ ফলে, অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যে দুর্নীতি আটকাতে অডিট নিয়ে আশ্বস্ত হননি বিরোধী বেঞ্চের সদস্যরা৷ কংগ্রেসের রতনলাল নাথ প্রশ্ণ তুলে বলেন, সময়মতো অডিট না হওয়ায় জনস্বার্থ লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা৷ তাতে অর্থমন্ত্রী সাফাইয়ে বলেন, কর্মী স্বল্পতার কারণে রাজ্যের সমস্ত সরকারি অফিস, পঞ্চায়েত এবং ব্লক স্তরে অডিট করা সম্ভব হচ্ছে না৷ অর্থমন্ত্রীর এই সাফাইয়ে রতনলাল নাথ দাবি করেন রাজ্যের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে৷
এদিন, তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, বিগত দিনে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে৷ গৌরনগর, পদ্মবিল ইত্যাদি ব্লকে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে৷ ২০১৫ সালে বিধানসভা অধিবেশনে খোদ গ্রামোন্নয়ন দপ্তর এক প্রশ্ণের উত্তরে জানিয়েছিল, ঐ ব্লকগুলিতে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও দুর্নীতি ঠেকাতে রাজ্য সরকার কেন স্পেশাল অডিটের ব্যবস্থা করছে না, শ্রীনাথ এই প্রশ্ণ ছঁুড়ে দেন অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে৷ তাতে অর্থমন্ত্রী দাবি করে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসলে নিশ্চয়ই স্পেশাল অডিট করানো হয়৷ তাতে স্পেশাল অডিট কিসের ভিত্তিতে করা হয় বলে ফের প্রশ্ণ তুলেন রতনলাল নাথ৷ তাতে অর্থমন্ত্রী জানান, সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে দপ্তরের অধীনে তদন্ত করে দেখা হয়৷ সেখানে গরমিল মনে হলে স্পেশাল অডিটের ব্যবস্থা করা হয়৷ তিনি এও জানান পঞ্চায়েত এবং ব্লক স্তরে নিজস্ব অডিটের ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিন্তু বিরোধী সদস্যরা অর্থমন্ত্রীর এই দাবিতে আশ্বস্ত না হয়ে অন্তবর্তীকালীন অডিট রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করার জন্য বলেন৷
এদিকে, বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায় বর্মণও কর্মী স্বল্পতার কারণে দুর্নীতি ঠেকাতে অডিট করানো যাচ্ছে না সরকারের এই যুক্তি মানতে নারাজ বলে জানান৷ তিনি বলেন, ২০১০ সালে পৃথক অডিট ডিরেক্টরেট গঠিত হয়েছে৷ এরপর থেকে দীর্ঘ ছয় বছর অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও পরিকাঠামোগত মানোন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয়নি তা মেনে নেওয়া কঠিন৷ তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় লোক নিয়োগ করে স্পেশাল অডিট সুনিশ্চিত করা রাজ্য সরকারের উচিত৷ সেক্ষেত্রে অডিট দপ্তর থেকে যারা অবসরে গেছেন তাদের পুনঃনিয়োগ করার মাধ্যমে এই কর্মী স্বল্পতার সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেন তিনি৷ তবে, লোক নিয়োগ করা হচ্ছে না সে বিষয়টিও মানতে নারাজ অর্থমন্ত্রী৷ তিনি জানান, বিভিন্ন সময়ে দুইশতাধিক লোক নিয়োগ করা হয়েছে৷ আগামীদিনে আরো লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে৷ কিন্তু ১২২০ টি পিআরআই এবং ইউএলবি সংস্থা এবং ১১৮০টি ব্লক অফিস একত্রে স্পেশাল অডিট করানো সম্ভব নয় বলে তিনি সভায় জানান৷ তাতে বিরোধী দলের সদস্যরা কটাক্ষ করে বলেন, এক সাথে সমস্ত জায়গায় অডিট করানো সম্ভব নয় সে বিষয়ে অবগত হয়েই ধাপে ধাপে অডিট করানোর জন্যই দাবি জানানো হচ্ছে৷
এদিকে, অর্থমন্ত্রী দাবি করেন দুর্নীতি হতেই পারে, কিন্তু সর্বত্র হচ্ছে এমনটাও নয়৷ এমনকি দুর্নীতির সাথে কোথাও কোন মন্ত্রীর নাম জড়িত রয়েছে কিনা তাও প্রমাণ করা মুশকিল৷ তিনি দাবি করেন, দুর্নীতির সাথে রাজ্য সরকার কখনোই আপোষ করে না৷