শ্রীনগর, ১০ জুন (হি.স.): এক-দুই বছর নয়, বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ৩০ বছর। অবশেষে এল প্রতীক্ষিত সেই দিন, জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার বাসিন্দা মুসলিম বন্ধুর সঙ্গে অবশেষে দেখা করলেন কাশ্মীরি পণ্ডিত বন্ধু। সন্ত্রাসের ভয়ে ৩০ বছর আগে পরিবারের সঙ্গে কাশ্মীর ছেড়েছিলেন মনোহর পণ্ডিত। ৩০ বছর আগের কথা, তখন জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার ক্রালগুন্দ তালুকার অন্তর্গত নেহামা গ্রামে পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন মনোহর। কাশ্মীর থেকে চলে গেলেও বন্ধু গুলাম মহিউদ্দিনের জন্য সর্বদা তাঁর মন কাঁদত, রাতে ঠিক মতো ঘুমোতে পারতেন না তিনি। দীর্ঘ ৩০ বছরের প্রতীক্ষা শেষে বুধবার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছেন মনোহর। এখন দু’জনই বৃদ্ধ। কিন্তু, বন্ধুত্ব এতটুকুও কমেনি। দেখা হওয়া মাত্রই দুই বন্ধু একে-অপরকে জড়িয়ে ধরেন। কেঁদেও ফেলেন মাঝেমধ্যেই। তবে, এই কান্না দুঃখের নয়, অত্যন্ত আনন্দের।
কাশ্মীর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর জম্মুতেই বসবাস শুরু করেন মনোহর। সেখানে একটি দোকান রয়েছে তাঁর। বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রায়ই তাঁর মন কাঁদত। কিছু দিন আগেই ঠিক করেছিলেন, আর অপেক্ষা করা সম্ভব নয়, এবার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতেই হবে! সেই মতো বুধবার চলে আসেন কুপওয়ারা জেলার নেহামা গ্রামে। গ্রামে ফিরে জানতে পারেন, তাঁর সময়কার অনেকেই পরলোক গমন করেছেন। শুনে মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায় মনোহরের। কেউ একজন জানান, তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ও কাছের বন্ধু গুলাম মহিউদ্দিন এখনও তাঁর কথা মনে করেন। শুনেই বৃদ্ধ পা ছুটে যায় বন্ধু মহিউদ্দিনের দিকে। বন্ধুকে দেখা মাত্রই জড়িয়ে ধরেন মনোহর। মনোহরকে জড়িয়ে ধরেন তাঁর মুসলিম বন্ধু মহিউদ্দিন।
মনোহর যখন কাশ্মীর ছেড়েছিলেন তখন তিনি পড়াশোনা করতেন স্কুলে। ছোট মনোহর এখন অনেক বড় হয়েছেন। বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার পর মনোহর জানিয়েছেন, “নিজের জন্মস্থানকে কেউ কখনও ভুলতে পারে না। সেই কারণেই কাশ্মীরে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, আমি নিজের বন্ধুকে দেখতে এসেছি। ছোটবেলায় প্রচুর অবিস্মরণীয় মুহূর্ত অতিবাহিত করেছি আমরা।” মনোহর জানিয়েছেন, “আমি ফের কাশ্মীরেই থাকতে চাই, থাকতে চাই আমার বন্ধুর সঙ্গে।”