নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ ডিসেম্বর৷৷ অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে কল্যাণপুরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে৷ সোমবার রাতে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দিনভর সিপিএম ও বিজেপি বিক্ষোভ দেখিয়েছে৷ গতকাল রাতে থানা ভাঙচুড়ের ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে৷ এদিন কল্যাণপুর বাজারে পরিস্থিতি থমথমে হওয়ায় দোকানপাট অধিকাংশই বন্ধ ছিল৷
অভিযোগে জানা গেছে, সোমবার রাতে কল্যাণপুরে ঘরোয়া সভা থেকে ফেরার পথে বিজেপি কর্মীদের উপর সিপিএমের ক্যাডাররা আক্রমণ চালিয়েছিল৷ এরই প্রতিবাদে বিজেপি কর্মীরা বাগানবাজার স্থিত সিপিএমের অফিসে ভাঙচুড় চালায়৷ এরপর তাঁরা কল্যাণপুর থানায় সিপিএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়৷ কিন্তু, পুলিশের বক্তব্যে সন্তোষ্ট না হওয়ায় বিজেপি কর্মীরা ভাঙচুড় চালায়৷ এই ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা নেয়৷ তাঁদের মধ্যে আজ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ কল্যাণপুর থানার জনৈক পুলিশ কর্মী জানিয়েছেন, রূপক দেব, শংকর দাস, সজল দেব এবং দীপক দেবকে থানা ভাঙচুড়ের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে৷
এদিকে সোমবার রাতে সিপিএমের দ্বারা আক্রান্ত বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন৷ এবিষয়ে বিজেপি খোয়াই জেলা সভাপতি হরিশংকর পাল বলেন, সিপিএমের কর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছিল৷ কিন্তু, কাউকেই পুলিশ গ্রেফতার করেনি৷
সোমবার গভীর রাত থেকে খোয়াহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক রাজনৈতিক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে৷ শাসক এবং বিরোধীদের উভয়পক্ষের বেশ কিছু রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থক এই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন৷ বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলেছে৷ ক্ষোব দেখা দিয়েছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও৷ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগমীকাল রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করবে৷ আর এই মিছিল-সভাকে কেন্দ্র করে বিজেপি ব্যাপক প্রচারাভিযান শুরু করেছে৷ একে কেন্দ্র করেই প্রথমে শাসকদলের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় এবং পরে তা সংঘর্ষের রূপ নেয়৷ কল্যাণপুর থেকে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত৷ পরবর্তী সময় খোয়াই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে৷ সাড়া রাত ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ চলতেই থাকে৷ খোয়াইয়ের জেলা বিজেপি প্রভারী অমিত রক্ষিত জানিয়েছেন, বিজেপির কর্মী সমর্থকরা ২৭ ডিসেম্বরের কর্মসূচি পালন করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় বৈঠক করছিলেন৷ বিভিন্ন এলাকায় প্রচারাভিযান চালানোও হচ্ছিল৷ কিন্তু রাত ৯৩০ নাগাদ বাড়ি ফোরার পথে বিজেপির কর্মী সমর্থকরা শালকদলের ক্যাডারদের দ্বারা আক্রান্ত হন৷ তিনি বলেন, প্রথমে তাঁদের বিজেপি র পক্ষে কাজ না করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়৷ কিন্তু তাঁরা এতে সহমত পোষণ না করায় তাঁদের মারধর করা হয়৷ তাঁদের রক্ষা করতে অন্য বিজেপি কর্মীরা এগিয়ে এলে তাঁরাও আক্রান্ত হন৷ পরবর্তীতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কর্মী সমর্থকরা ছুটে গিয়ে বাম-ক্যাডারদের প্রতিহত করেন৷ কিন্তু পুলিশের ভূমিকা খুবই নিন্দনীয় ছিল৷ পুলিশকে বারংবার খবর দেওয়া হলেও আক্রান্তদের সাহায্যের জন্য তাঁরা এগিয়ে আসেনি৷ অন্যদিকে, সিপিআইএমের তরফে বিজেপি র বিরুদ্ধে হুজ্জতি, পার্টি অফিস ভাংচুর এবং মিছিলে শামিল হওয়ার জন্য সাধারণকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে৷ বিভিন্ন এলাকায় গিযে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷ তাছাড়া, বিজেপির কর্মী সমর্থকরা বিভিন্ন এলাকায় পাল্টা আক্রমণ সংগঠিত করেছে বলে খবরে প্রকাশ৷ বেশ কিছু ওএল কলাকায় সিপিআইএমের পার্টি অফিস গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ সমগ্র এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ জেলা জুড়ে প্রচুরসংখ্যক নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে৷
এদিকে, সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মন্ডলী সোমবারের ঘটনার জন্য বিজেপিকে দায়ি করেছে৷ মঙ্গলবার দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গতরাতে তেলিয়ামুড়া মহকুমার বাগানবাজার, কল্যাণপুরের সি পি আই(এম) অঞ্চল কমিটির অফিস এবং কল্যাণপুর থানায় বিজেপি’র দুর্বৃত্ত বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছে সি পি আই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী৷ রাতের অন্ধকারে বিজেপি’র এই হামলা অত্যন্ত প্ররোচনা ও উস্কানীমূলক৷
বিজেপি’র দুর্বৃত্তরা গতকাল রাতে প্রথমে বাগান বাজারে চা বাগান শ্রমিকদের কলোনীতে বিনা প্ররোচনায় আক্রমণ চালায়৷ কলোনীর শ্রমিকরা এবং এলাকাবাসী প্রতিরোধে এগিয়ে এলে বিজেপি’র দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়৷ এর পর মধ্যরাতে নাগাদ বিজেপি দুর্বৃত্তরা মোটর বাইক নিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে বাগান বাজারে জড়ো হয়ে প্রথমে সি পি আই(এম) বাগান বাজার লোক্যাল কমিটি অফিস এবং এরপর কল্যাণপুর লোক্যাল কমিটির অফিস আক্রমণ করে৷ বিজেপি’র দুর্বৃত্তরা কল্যাণপুর বাজার অভ্যন্তরে ঢুকেও বেপরোয়া হামলা চালায়৷
সি পি আই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী বিজেপি’র এই অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছে৷ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ব্যহত করার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের বিজেপি নেতৃত্ব এই ধরনের হামলা চালাতে তাদের দুর্বৃত্ত বাহিনীকে প্ররোচিত করেছে৷
আজ কল্যাণপুর, বাগানবাজার এলাকায় সি পি আই(এম) কর্মী ও সমর্থকরা বিরাট মিছিল করে বিজেপি’র দুর্বৃৃত্তপনার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন৷
রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী পার্টি অফিস ও থানায় বিজেপি’র প্ররোচনামূলক হামলার বিরুদ্ধে সর্বত্র প্রতিবাদ সংগঠিত করতে আহ্বান জানাচেছ৷ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে আহ্বান জানাচেছ৷ পার্টি অফিস ও থানা আক্রমণে জড়িত বিজেপি দুর্বৃত্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের জন্য সোপার্দ করতে দাবি জানাচ্ছে৷
2017-12-27