বিধানসভা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছে বিজেপি ঃ সিপিএম

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ ডিসেম্বর৷৷ নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছে বিজেপি৷ নানাভাবে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের ফন্দি করছে তারা৷ তবে সঠিক সময়ে নির্বাচন হবে বলে আশাবাদী সিপিআইএম৷ শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশ এইভাবেই বিজেপিকে বিঁধেছেন৷ সাথে তিনি জোর গলায় দাবি করেন আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে গতবারের তুলনায় আরো বেশি ভোট ও আসনে জয়ী হবে বামফ্রন্ট৷
এদিন গৌতমবাবু বলেন, নির্বাচন কমিশন রাজ্যে এসে সঠিক সময়ে নির্বাচন করানোর কথা বলে গেছেন৷ আশা করা যায়, যথাসময়েই নির্বাচন হবে৷ তবে বিজেপি ভোটার তালিকায় ত্রুটির অভিযোগ তুলে নির্বাচন পিছানোর চেষ্টা করবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন৷ তাঁর কথায়, একই পন্থা ২০১৩ সালে নির্বাচনের সময় কংগ্রেস নিয়েছিল৷ কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা তখন সফল হয়নি৷ তিনি বলেন, বিজেপির অপকৌশল জারি আছে৷ রাজ্যে সমস্যা তৈরির চেষ্টা চলছে৷ বাংলাদেশের ঘাঁটিতে অবস্থানরত এনএলএফটি জঙ্গিদের ব্যবহার করার চেষ্টাও হচ্ছে৷ কিন্তু রাজ্যের মানুষ বিষদাঁত ভেঙে দেবে৷ তিনি বলেন, বামফ্রন্টের শরিকরা কে কতটি আসন পাবেন তা চূড়ান্ত হয়ে গেছে৷ বামফ্রন্টের বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ নির্বাচন ঘোষণার পরই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে৷ সিপিআইএম এর নেতা বিধায়কদের অনেকেই বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলছেন বলে যে দাবি করা হচেছ৷ তা অসত্য বলে তিনি উল্লেখ করেছেন৷
এদিকে, শুক্রবার সিপিআইএম রাজ্য কমিটির বৈঠকে ত্রিপুরার সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে৷ সিপিআইএম রাজ্য কমিটির বৈঠক শেষে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট এবং নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে৷ প্রাক নির্বাচনী সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়েও বিস্তর চর্চা হয়েছে৷ তিনি বলেন, রাজ্য কমিটির বৈঠকে যে আলোচনা হয়েছে সে অনুযায়ী সিপিআইএম এর প্রতি মানুষের প্রবল সমর্থন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ পার্টি নেতৃত্ব দৃঢ় আশাবাদী, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট ২০১৩ সালের নির্বাচনের চেয়েও বেশি ভোটে এবং বেশী আসনে জয়ী হবে৷ বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে সমস্ত চক্রান্ত কাটিয়ে উঠে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকারের প্রতিষ্ঠা হবে৷ তিনি বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের উপর জনগণের আস্থা রয়েছে৷ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বৈষম্যমূলক নীতি এবং রাজ্যে প্রতিকূল অবস্থা তৈরী করা সত্ত্বেও জনগণ বামফ্রন্ট সরকারের বহুমুখি উন্নয়ন কর্মসূচিতে আস্থা রাখছেন৷ দেশের সামনে ত্রিপুরাই এখন বিকল্প, আর তা রাজ্যবাসীও বুঝতে পারছেন৷ তাই সমর্থনও বাড়ছে৷ গৌতমবাবু আরও বলেন, গত ২০ অক্টোবর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১,০৫০ টি পরিবারের ৩,৩৩৫ জন সদস্য বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবির ছেড়ে সিপিআইএম এ যোগদান করেছেন৷ গত তিন মাসে বিভিন্ন সংগঠনগুলির জমায়েত সংগঠিত হয়েছে৷ তাতেও প্রচুর নতুন সমর্থকদের আগমন ঘটেছে৷ পার্টির কার্যক্রমেও নিয়মিতভাবে নবাগতদের আগমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ এটা ইতিবাচক ইঙ্গিত৷ গৌতম দাশ রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সমর্থক ও তাঁদের পরিবারবর্গ তাঁদের পার্টিতে আসার কারণ হিসেবে বামফ্রন্ট সরকারের জনকল্যাণমুখি কর্মসূচির অবদান বলে ব্যাখ্যা করেছেন৷ কোনও প্ররোচনার ফাঁদে ভোটাররা পরবেন না বলে তিনি তাঁর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন৷
আগামী ৩১ ডিসেম্বর বামফ্রন্টের জমায়েতকে ঐতিহাসিক রেকর্ড হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিআইএম৷ পূর্ববর্তী জমায়েতের মতো কোনও ধরনের অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা হবে না বলে আশাবাদী পার্টি৷ তবে মিছিলে যদি কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তা প্রতিহত করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে পার্টি সূত্রের খবরে জানা গেছে৷ সিপিআইএম এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা প্রদেশ মুখপাত্র গৌতম দাশ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ৩১ ডিসেম্বরের জমায়েতে উপস্থিতি ত্রিপুরার ইতিহাসে যে কোনও রাজনৈতিক দলের জমায়েতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে৷ বাম সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা রয়েছে৷ আর এর প্রতিফলন ঘটবে জমায়েতে৷ সিপিআইএম এর মহকুমা কমিটিগুলি ইতিমধ্যেই সমাবেশকে সামনে রেখে জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে৷ তিনি বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে পরিমাণে লোক আসতে চাইছেন সে অনুযায়ী ছোট বড় গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না৷ ট্রাকে ও ট্রেনে করেও প্রচুর লোক আসবেন৷ তাছাড়া রাজধানী আগরতলা এবং তার আশপাশ থেকে পায়ে হেঁটে মিছিল করে জমায়েতে শামিল হবেন কর্মী সমর্থকরা৷ গণমুক্তি পরিষদের সভার মতো আসন্ন জমায়েতে কমরেডদের আসতে বাঁধা দেওয়া হবে না বলে আশা করছেন পার্টি নেতৃত্ব৷ তবে এ সব প্রতিহত করার জন্য এবার কমরেডরা তৈরী রয়েছেন বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গড়ার লক্ষ্যে অনুষ্ঠেয় কেন্দ্রীয় জমায়েতে ভাষণ দেবেন সিপিআইএম এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অঘোর দেববর্মা প্রমুখ৷ তাছাড়া সিপিআই-এর ডি রাজা, আরএসপি-র সর্বভারতীয় নেতা মনোজ ভট্টাচার্য এবং ফরোয়ার্ড ব্লকের নেতা নরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও জমায়েতে ভাষণ দেবেন৷ সমাবেশ পরিচালনা করবেন রাজ্য বামফ্রন্টের আহ্বায়ক খগেন দাস৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *