নয়াদিল্লি, ২১ ডিসেম্বর (হি.স.): কেলেঙ্কারি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে হাতিয়ার করে কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি |
বৃহস্পতিবার টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়কে হাতিয়ার করে কেন্দ্র সরকার ও বিজেপিকে আক্রমণ করে কংগ্রেসের সরব হতেই পাল্টা আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি |ইউপিএ সরকারের বন্টন করা সব টুজি স্পেকট্রাম বাতিল করে ২০১২-য় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উল্লেখ করে অরুণ জেটলির দাবি, ওই রায়েই স্পষ্ট, ইউপিএ সরকারের স্পেকট্রাম বন্টনের নীতিতে দুর্নীতি ছিল।
আজ টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি মামলার সব অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দেয়। কংগ্রেস এই রায়কে হাতিয়ার করে বর্তমান মোদী সরকার, বিজেপিকে আক্রমণ করতেই পাল্টা জেটলি জানান, মামলায় কেউই দোষী প্রমাণিত হননি, বিশেষ আদালতের এই রায়ের ব্যাপারে তথ্যপ্রমাণ, ইতিহাস খতিয়ে দেখে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে তদন্তকারী সংস্থাগুলি। জেটলি বলেন, তথ্যেই প্রমাণ, এটা দুর্নীতির ইতিহাস।
স্পেকট্রাম বরাদ্দে কোনও আর্থিক লোকসানই হয়নি, প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী কপিল সিবলের এই দাবিও উড়িয়ে দেন জেটলি। বলেন, পরবর্তীকালে বিজেপি-এনডিএ আমলের স্পেকট্রাম বন্টনে ২০১৫ সালে ১.১০ লক্ষ কোটি টাকা, ২০১৬-য় ৬৬ হাজার কোটি টাকা এসেছে। ইউপিএ সরকার লাইসেন্স পিছু ১৭৩৪ কোটি টাকা দাম ধার্য করেছিল। মনমোহন সিং সরকারকে নিশানা করে জেটলি বলেন, ওরা ২০০১-এর দামের ভিত্তিতে ২০০৭-০৮ সালে লাইসেন্স দিয়েছিল। ওই নীতি রূপায়ণেও বড় ধরনের বেনিয়ম ছিল। কাট-অফ দিন এগিয়ে আনা হয়, ‘আগে এলে আগে সুযোগ’ নীতির উদ্দেশ্য ছিল বিশেষ কিছু লোককে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া। পরে সেই নীতি বদলে হয় ‘প্রথমে টাকা দিলে প্রথম সুযোগ’, এবং সেটাও বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে আগে জানিয়েও দেওয়া হয়। প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা পিছনের তারিখে ব্যাঙ্ক ড্রাফট তৈরি করেছিল।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ক্যাগ রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রথম টুজি দুর্নীতির কথা প্রকাশ্যে আসে| ইউপিএ দুই সরকারের আমলে মোবাইল পরিষেবায় টুজি স্পেকট্রাম বন্টনে দুর্নীতি হওয়ায় সরকারের ১ লক্ষ ৭৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল | যদিও, পরবর্তী সময়ে সিবিআই যে চার্জশিট জমা দিয়েছিল, তাতে রাজকোষে ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকার আশেপাশে ছিল বলে উল্লেখ করা হয় | এ রাজা এবং কানিমোঝি সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে টুজি স্পেকট্রাম বন্টনে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল | ওই মামলায় বৃহস্পতিবার তাঁদের বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছে বিশেষ সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) আদালত| টুজি স্পেকট্রাম দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার সময় এদিন পাটিয়ালা হাউস কোর্টে উপস্থিত ছিলেন এ রাজা এবং ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি সহ বেশিরভাগ অভিযুক্তই| এক লাইনের রায়ে তাঁদের বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছেন বিশেষ সিবিআই বিচারক ওপি সাইনি| রায়দানের সময় বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারপতি ও পি সাইনি বলেছেন, ‘টুজি স্পেকট্রাম বন্টনে কোনও দুর্নীতি হয়নি|’ আদালত আরও জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দাখিল করতে পারেনি সিবিআই| এই মামলায় ১৫৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ছিলেন রিলায়েন্স অনিল ধীরুভাই আম্বানি গ্রুপের অনিল আম্বানি ও তাঁর স্ত্রী টিনা আম্বানি| দীর্ঘ ৬ বছর ধরে শুনানি চলার পর বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর টুজি মামলার রায় ঘোষণা করল সিবিআই-এর বিশেষ আদালত| টুজি দুর্নীতির তিনটি মামলাতেই এ রাজা এবং কানিমোঝিকে মুক্তি দিয়েছে সিবিআই আদালত| এদিন রায়দানের পরই আদালত চত্বরে উত্সবে মেতে ওঠেন ডিএমকে সমর্থকরা | বাজি ফাটিয়ে, স্লোগান দিয়ে নেতাদের স্বাগত জানান তাঁরা | এদিন সুপ্রিম কোটের রায় উল্লেখ্য করে তাকেই কটাক্ষ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি |
প্রসঙ্গত, সিবিআই ২০১১-য় দেওয়া চার্জশিটে ১২২টি টু জি স্পেকট্রাম লাইসেন্স বন্টনে সরকারি কোষাগারের ৩০,৯৮৪ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে অভিযোগ করে।এরপর ২০১২-র ২ ফেব্রুয়ারি সব বরাদ্দ বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট।