গুয়াহাটি, ২১ ডিসেম্বর (হি.স.) : দেশদ্রোহী মামলা থেকে কৃষক নেতা অখিল গগৈকে অব্যাহতি দিয়েছে গুয়াহাটি উচ্চ আদলত। বৃহস্পতিবার সকাল প্রায় দশটা পঁয়তাল্লিশ মিনিট নাগাদ এই ঘোষণা করেছেন জাস্টিস অচিন্ত্যমল্ল বুজরবরুয়া। তবে এখনই তিনি খোলা আকাশের নীচে আসতে পারবেন কি না সে সম্পর্কে সন্দিহান অখিলের কৌঁসুলি নিলয় দত্ত।
আদালতের বাইরে এসে তিনি জানান, তাঁর মক্কেল অখিল গগৈয়ের বিরুদ্ধে যে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (নাসা)-এর বলে মামলা করা হয়েছিল তাকে সম্পূর্ণ অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন জাস্টিস অচিন্ত্যমল্ল বুজরবরুয়া। বলেন, ডিব্রুগড় জেলার মরান থানায় রুজু এক মামলায় গত ১৩ সেপ্টম্বর গ্রেফতারের পর ২৫ সেপ্টেম্বর সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে অখিল গগৈয়ের উপর নাসা-র ধারা বলবৎ করেছিল পুলিশ। নাসা-র বিরুদ্ধ উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন অখিল। উচ্চ আদালতে দফায় দফায় আটদিন শুনানির পর আজ এই রায় দেওয়া হয়েছে। তবে নাসা থেকে মুক্ত হলেও এখনই অখিলকে কারাগার থেকে ছাড়া হবে কি না তা সঠিক বলতে পারছেন না কৌঁসুলি।
কেননা, মরান থানায় অন্য যে আইনে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে সম্পর্কে জামিন আবেদনের কোনও সুরাহা হয়নি। আদালত নাকি বলেছে, এমনিতেই গ্রেফতারের তিন মাস অতিক্রান্ত। তাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়ই জামিন পেতে পারেন অখিল। আগামীকাল তিনি ডিব্রুগড় আদালতে গিয়ে অখিলের জামিনের জন্য আবেদন করবেন বলে জনিয়েছেন কৌঁসুলি নিলয় দত্ত।
প্রসঙ্গত, অখিল গগৈ বর্তমানে ডিব্রুগড় জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন। আইনজীবী জানিয়েছেন, মরান মামলায় জামিন পেলেও দুধনৈ থানায় রুজু অন্য এক মামলায় আদালতেই তাঁকে ফের গ্রেফতার করা হতে পারে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশদ্রোহিতার এক মামলায় ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গোলাঘাট থেকে অখিল গগৈকে গ্রেফতার করেছিল ডিব্রুগড় পুলিশ। এর আগের দিন ১২ তারিখ ডিব্রুগড় জেলার অন্তর্গত মরানের বামুনবাড়িতে এক সমাবেশে বাংলাদেশি (হিন্দু বাংলাদেশি)-দের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের ‘ষড়যন্ত্র’ রুখতে এবং কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকারের অসম-বিরোধী চক্রান্ত আটকাতে প্রয়োজনে হাতে হাতে একে ৪৭ জাতীয় অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকতে রাজ্যের জনসাধারণের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন বলে অখিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বামুনবাড়িতে অনুষ্ঠিত সেদিনের সমাবেশে যে ধরনের প্ররোচনামূলক ভাষণ দিয়ে জনতাকে উসকে দিয়েছেন তা পরিচ্ছন্ন দেশদ্রোহিতা।
এর পরই মরান থানায় অখিলের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২০ (বি)/১২১/১২৪ (এ)/১০৯/১৫৩/১৫২ (এ)/৩৪ ধারা বলবৎ করে ১৮৮/১৭ নম্বরে এক মামলা রুজু করা হয়। এই মামলার বলে ১৩ তারিখ সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ছয়টায় গোলাঘাট সার্কিট হাউস সংলগ্ন এক বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে ডিব্রুগড় জেলার মরান থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অখিল গগৈয়ের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় এ মুহূর্তে ১৩টি মামলা রুজু করা হয়েছে। নগাঁও ও লখিমপুরে চার, গোলাঘাট-গুয়াহাটি-ধেমাজি, ডিব্ৰুগড় এবং দুধনৈ থানায় রুজু হয়েছে মোট ১৩টি মামলা। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর কাজিরঙা জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন তিনটি গ্রামে উচ্ছেদে গেলে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্তব্যে বাধা দেওয়া এবং কাজিরঙায় উচ্ছেদের শিকার মানুষজনকে প্ররোচনা ও উসকানি দেওয়া ছাড়া গত ১২ সেপ্টেম্বর ডিব্রুগড় জেলার অন্তর্গত মরানের বামুনবাড়িতে এক সমাবেশে হাতে হাতে একে ৪৭ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকতে রাজ্যের জনসাধারণের কাছে আবেদন জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে অখিল গগৈকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।