গুজরাটে জয়ী হয়েও চাপ বাড়ল বিজেপির

নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, ১৮ ডিসেম্বর৷৷ জয় প্রত্যাশিত ছিল৷ কিন্তু, গুজরাটে জয়ী হয়েও ফলাফল মোদি-শাহদের জন্য চাপ আরো বাড়াল৷ ১৮২ আসনের গুজরাট বিধানসভায় বিজেপি জয়ী হয়েছে ৯৯ টি আসনে৷ বিরোধী হিসেবে গেরুয়া শিবিরকে কড়া টক্কর দিয়েছে কংগ্রেস৷ কংগ্রেসের দখলে গেছে ৭৭ টি আসন৷ স্বাভাবিকভাবেই সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি৷ কিন্তু, ভোটের হার এবং আসন সংখ্যা বিজেপিকে চিন্তায় ফেলেছে৷ এদিন বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এই জয়ের জন্য উন্নয়নকে কৃতিত্ব দিয়েছেন৷ সাথে জানিয়েছেন, নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে রাতেই দলের সংসদীয় কমিটি বৈঠক করবেন৷ শাহর মতে, গুজরাটে কংগ্রেস এই ফলাফল জাতিবাদ নিয়ে সুড়সুড়ি এবং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে হাসিল করেছে৷ এই ফলাফল আগামী ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে কোন প্রভাব ফেলবেনা৷ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এদিন নির্বাচনী ফলাফলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ সাথে দাবি করেছেন, আগামী দিনে কংগ্রেস আরো বৃহৎ আকারে ঘুরে দাঁড়াবে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্বাচনী ফলাফলের জন্য দলের সকল কর্মী সমর্থকদের কৃতিত্ব দিয়েছেন৷

শৈত্যপ্রবাহ সত্বেও হাইভোল্টেজ গুজরাট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সকাল থেকেই রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে উঠেছিল৷ সকালে গণনা শুরু হওয়ার পর ঘন ঘন হাওয়া বদলাতে থাকে৷ কখনো বিজেপি এগিয়ে যায়, আবার কখনো কংগ্রেস বিজেপিকে পেছনে ফেলে দেয়৷ এক সময় সমস্ত বুথ ফেরত সমীক্ষা ভুল বলে প্রমাণিত হচ্ছিল৷ কংগ্রেস বিজেপিকে পেছনে ফেলে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু, সময় যত এগিয়েছে, তার সাথে হাওয়াও বদলাতে শুরু করেছে৷

গুজরাটে বিজেপি ও কংগ্রেস ছাড়া এনসিপি ১টি, ভারতীয় ট্রাইবেল পার্টি ২টি এবং নির্দলের দখলে ৩টি আসন গেছে৷
এই গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয় দলের ভোটের হার গত নির্বাচনের তুলনায় বেড়েছে৷ তবে, আসনের নিরিখে বিজেপির আসন সংখ্যা কমেছে৷ অন্যদিকে, কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বেড়েছে৷ ২০১২ সালে নির্বাচনে বিজেপি ১১৫টি আসন দখল করেছিল এবং ভোটের হার ছিল ৪৭৮৫ শতাংশ৷ এদিকে ঐ বছর কংগ্রেস ৬১ টি আসন দখল করেছিল এবং ভোটের হার ছিল ৩৮৯৩ শতাংশ৷ এবছর বিজেপি পেয়েছে ৯৯টি আসন এবং ভোটের হার ৪৯১ শতাংশ৷ অন্যদিকে, কংগ্রেস পেয়েছে ৭৭টি আসন এবং ভোটের হার ৪১৪ শতাংশ৷ এদিন অমিত শাহ দাবি করেন, গত নির্বাচনের তুলনায় এবছর ১২৫ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছে বিজেপি৷ কিন্তু, এটাও দেখার বিষয় কংগ্রেসেরও ভোটের হার বেড়েছে৷ এবার ভোটের হারে কংগ্রেস গত নির্বাচনের তুলনায় বেশি পেয়েছে ২৪৭ শতাংশ৷

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের গুজরাট নির্বাচনে ভোটের হারে বিজেপি বিরাট ধাক্কা খেয়েছে৷ তাঁদের যুক্তি, ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে গুজরাটে বিজেপির ভোটের হার ছিল ৫৯১ শতাংশ৷ সাড়ে তিন বছরে বিধানসভা নির্বাচনে তা কমেছে ১০ শতাংশ৷ এদিকে, কংগ্রেসের বিরাট উত্থান হয়েছে বলে দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের৷ তাঁদের বক্তব্য, ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে গুজরাটে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৩২৯ শতাংশ, যা এবার বিধানসভা নির্বাচনে বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ৷ ভোটের হারে এই পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবে বিজেপিকে চিন্তায় ফেলেছে বলে দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের৷

গুজরাট নির্বাচনের ফলাফলকে ঘিরে কংগ্রেস কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার দাবি করলেও, বিজেপি তা পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে৷ বিজেপির একাধিক মুখপাত্র দাবি করেন, প্রত্যাশিত জয় পেয়েছে দল৷ তাঁদের দাবি, এই জয় উন্নয়নের এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি মানুষের অগাধ বিশ্বাসের দলিল৷ অবশ্য এই দাবি কোন মতেই মানতে রাজি নন তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী৷ তাঁর কটাক্ষ, গুজরাটের ফলাফলে বিজেপির নৈতিক পরাজয় হয়েছে৷ কিন্তু, এদিন সকালে ফলাফলের প্রাথমিক অনুমান মিলতেই সংসদে ঢুকার মুখে জয় চিহ্ণ দেখান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ শিবসেনা ছাড়া বিজেপির সহযোগীরা এই ফলাফলে গেরুয়া শিবিরের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে৷ জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিজেপির এই ফলাফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ চারবার এই রাজ্যে বিজেপি ভোটে জিতে সরকার গড়েছে৷ এই নিয়ে ষষ্ঠবার সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি৷ আগের ২২ বছরের পর আরও পাঁচ বছরের জন্য বিজয় রূপানির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার তৈরি করতে চলেছে৷ তবে ২০১২ সালে বিজেপি ১১৫ টি আসন পেয়েছিল৷ দু’রাজ্যের বিজেপি-র সাফল্য আসলে কার্যকর্তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল৷ আমি বিজেপি কার্যকর্তাদের কুর্নিশ জানাই৷ দু’রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এমনই প্রতিক্রিয়া দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তিনি আরও বলেন, সুশাসন ও উন্নয়নের রাজনীতিকে সমর্থন করে মানুষ গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশের ফলাফল সেই ইঙ্গিতই দিল৷ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই গুজরাটে ফের সরকার গড়ছে বিজেপি৷ সেইসঙ্গে হিমাচল প্রদেশেও ক্ষমতা দখল করছে কেন্দ্রের শাসক দল৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *