দু-সপ্তাহের মধ্যে সারদা মামলার ফাইনাল চার্জশিট দিতে চলেছে সি বি আই

কলকাতা,১০ ডিসেম্বর,( হি.স.): স্বাধীনতার পর এই রাজ্যের সবথেকে বড় আর্থিক স্ক্যাম সারদা আর্থিক তছরুপ মামলা । এবার সেই মামলার ফাইনাল চার্জশিট দু’সপ্তাহের মধ্যে দিতে চলেছে সি বি আই । রবিবার এ কথা জানান সি বি আই -এর বিশেষ আইনজীবী রাঘবচারালু ।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর কাশ্মীর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনকে । তাঁকে জেরা করে উঠে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য । বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয় । তাঁদের মধ্যে মাতঙ্গ সিং ও রমেশ গান্ধীও ছিলেন । এরপর জামিনের জন্য কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানান তাঁরা। সম্প্রতি সেই মামলার শুনানি ছিল ।
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি বলেন, ‘অবিলম্বে আপনারা এদের চারজনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করুন’। সারদাকাণ্ডে অভিযুক্ত উপরে উল্লেখিত তিনজন ছাড়াও রয়েছেন মনোরঞ্জনা সিং । জামিন মামলার পরবর্তী শুনানি ১৮ ডিসেম্বর ।
সারদা তদন্তে এখনও চূড়ান্ত চার্জশিট দায়ের করে সি বি আই এবং ইডি, দুই তদন্তকারী সংস্থাই । গ্রেফতার হওয়া সিংহভাগ ব্যক্তিই এখন জামিনে মুক্ত । প্রায় দশ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে প্রায় ১৫লক্ষ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত । সারদা’র পাশাপাশি রোজভ্যালি তদন্তও কার্যত স্তব্ধ । সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে তদন্তও প্রায় শীতঘুমে । এই পরিস্থিতিতে ফের নতুন করে সারদাকাণ্ডের তদন্ত বিভ্রান্ত করার অভিযোগে রাজ্যের একাধিক আই পি এস অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার বিষয়টি খতিয়ে দেখার এই কেন্দ্রীয় নির্দেশ নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল ।
শাসক তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রী দফতরে নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করেছেন এরাজ্যের একাধিক আই পি এস অফিসারের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন ইন্সপেক্টর, সাব ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধেও সারদা তদন্তকে প্রভাবিত করার । বর্তমানে রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ, কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার, মালদহের এস পি অর্ণব ঘোষের বিরুদ্ধে তদন্তকে প্রভাবিত করা ও তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ আনেন । সেই সময় এরা প্রত্যেকেই সিট-র সদস্য ছিলেন, রাজীব কুমার বিধাননগর কমিশনার ছিলেন । অর্ণব ঘোষ বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান ছিলেন ।
২০১৪ সালে সুপ্রিম সারদা রোজভ্যালি সহ একাধিক চিটফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে সি বি আই তদন্তের নির্দেশ দেয় । তার আগেই রাজ্যের তৈরি করে দেওয়া সিট-র তদন্তে সরাসরি শাসক দলকে রক্ষা করার অভিযোগ উঠতে শুরু করে। আদৌ সিট’ কিংবা বিধাননগর কমিশনারেট দীর্ঘ সময়ে সারদাকাণ্ডের তদন্তে কার্যত কোন অগ্রগতি ঘটাতে পারেনি । শাসক দলের একজনকেও ন্যূনতম জিজ্ঞাসাবাদ করার উদ্যোগ নিতে পারেনি সিট । প্রতারক সুদীপ্ত সেনের সম্পত্তির মোট হিসাবও ধরে দাখিল করে উঠতে পারেনি মুখ্যমন্ত্রীর শংসাপত্র পাওয়া সিট, সম্পত্তি উদ্ধার তো দূর অস্ত । বরং রাজ্য সরকারের এই তদন্তকারী সংস্থার কাণ্ডকারখানায় স্পষ্ট,- সারদাকান্ডে সিট-র প্রথম ও প্রধান অভিমুখ ছিল যেনতেন প্রকারে শাসক দল ও সরকারকে এই কেলেঙ্কারির আঁচ থেকে রক্ষা করা । এই অভিযোগ মান্যতা পেয়েছে এমনকি সুপ্রিম কোর্টে দফায় দফায় চলা শুনানিতেও । রাজ্য সরকারের তদন্তকারী সংস্থার ব্যর্থতা, ঢিলেমি সি বি আই তদন্তের নির্দেশ দিতে সাহায্য করেছে, তাও স্পষ্ট হয় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বয়ানেই ।
২০১৪ সালের ২২শে এপ্রিল । সেদিন অবিশ্বাস্য তৎপরতায় রাত ৯টা নাগাদ বিধাননগরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা খুলিয়ে সুদীপ্ত-পিয়ালি সেনের লকারের দখল নিয়েছিলেন তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ । সুদীপ্ত সেন ও তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী পিয়ালি সেনের যৌথ লকারটি সারদার ১০২নম্বর মামলায় বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৩শে এপ্রিল । একবছরে একটিবারের জন্য তা খোলা না হলেও ইডি’র তরফে পিয়ালি সেনকে হেপাজতে নিয়ে তা খোলার উদ্যোগ নেওয়ার সময়তেই সেই লকারের দখল নেয় বিধাননগর কমিশনারেট । তা নিয়ে ইডি’র সঙ্গে সংঘাতও বাধে । এমনকি সারদা কেলেঙ্কারির প্রথম দিকে এমনকি সামান্য কেস ডায়েরিও দেখতে বাধা দেওয়া হয়েছিল ইডিকে । আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে এসেই কেস ডায়েরি হাতে পেয়েছিল এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা । এবার নতুন করে আই পি এস আধিকারিকের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সম্ভাবনা, নতুন করে জল্পনা বাড়াচ্ছে ।
এদিকে,কোনও রকম রাজনৈতিক চাপে অথবা সমালোচনায় সারদা মামলার তদন্তে হাত গুটিয়ে নেবে না সি বি আই । স্পষ্ট ভাষায় একথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার এক শীর্ষ কর্তা । তদন্তের গতি প্রকৃতি দেখে সি বি আই এর দিকে কেউ আঙুল তুললেও তাতে তাদের কোনও যায় আসে না তা তারা স্পষ্ট ভাষাতেই জানিয়েছেন । দিনের শেষে তাদের একটাই লক্ষ্য তদন্ত ঠিক পথে এগোচ্ছে কিনা ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *