চাকুরী হারানোর জ্বালায় শিক্ষকদের বিদ্রোহে দিনভর অবরুদ্ধ রাজ্য সচিবালয় ও বিধানসভা, বিদ্রোহীদের এড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠকে হতাশ চাকুরীচ্যুতরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ ডিসেম্বর৷৷ চাকুরী হারানোর জ্বালায় চাকুরীচ্যুত ১০৩২৩ বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন৷ তাঁদের বিক্ষোভে বৃহস্পতিবার

রাজ্য সচিবালয়ের সামনে ভিআইপি রোডে চাকুরীচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মিছিল আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ৷ নিজস্ব ছবি৷

দিনভর রাজ্য সচিবালয় এবং বিধানসভা অবরুদ্ধ ছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের চাকুরীতে স্থায়িত্বের আশ্বাস দিলে তবেই অবরোধ আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে বলে সচিবালয়ের মূল ফটকের বাইরে ধর্ণা সংগঠিত করেন চাকুরীচ্যুত শিক্ষকরা৷ কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সাথে দেখা করেননি৷ সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রীর সাথে দেখা করেও হতাশ হয়েছেন চাকুরীচ্যুতরা৷ ফলে, আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করার পরও যদি তাঁদের চাকুরীতে নিশ্চিয়তার কোন আশ্বাস না মিলে, তবে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন৷ চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদে বক্তব্য, রাজ্য সরকারের গাফিলতিতে তাঁদের চাকুরী বাতিল হয়েছে৷ তাই, তাঁদের চাকুরীতে পুণর্বহালের ব্যবস্থা রাজ্য সরকারকেই করতে হবে৷ শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, আদালতের রায়ে তাঁদের চাকুরী বাতিল হয়েছে৷ তা সত্বেও রাজ্য সরকার চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সব রকম উদ্যোগ নিচ্ছে৷ তাঁর দাবি, অন্তিম মুহুর্ত পর্যন্ত রাজ্য সরকার চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের চাকুরী বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবে৷ এক্ষেত্রে তাঁদেরও ধৈর্য্য ধরতে হবে৷

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ভিআইপি রোডে জড়ো হতে শুরু করেন চাকুরীচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকারা৷ বেলা বারটা নাগাদ তাঁরা মিছিল করে সচিবালয়ের মূল ফটকের সামনে ধর্ণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ সে মোতাবেক মিছিল শুরু হলে, পুলিশ তাঁদের বাধা দেন৷ তাতে, চাকুরীচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে পুলিশের ধবস্তাধস্তিও হয়৷ কিন্তু, পুলিশ তাঁদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি৷ তিন শতাধিক চাকুরীচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকা সচিবালয়ের মূল ফটকের সামনে গিয়ে ধর্ণা শুরু করেন৷

একই সাথে তাঁরা মাইকিং করতে থাকেন৷ তখন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আর্বান তাদের মাইক বন্ধ করার নির্দেশ দিলে চাকুরীচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে উঠেন৷ এনিয়ে পুলিশের সাথে তাঁদের বাকবিতন্ডা শুরু হয়ে যায়৷ অবশ্য কিছুক্ষনের মধ্যে অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়৷

সচিবালয়ের মূল ফটকের সামনে চাকুরীচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকারা ধর্ণায় বসলে দুটি ফটকই বন্ধ করে দেয় পুলিশ৷ ফলে, সচিবালয় এবং বিধানসভায় যাতায়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়৷ পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের অনুরোধ জানানো হয় সেখান থেকে উঠে যাওয়ার জন্য৷ কিন্তু, যতক্ষন পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের চাকুরীতে স্থায়িত্বের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, ততক্ষন তাঁরা ধর্ণা চালিয়ে যাবেন বলে পুলিশকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন৷

এদিকে, ধর্ণাস্থলেই চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের নেতৃবৃন্দরা পরবর্তী কর্মসূচী নিয়ে বৈঠকে বসেন৷ এরই মাঝে সেখানে এসে উপস্থিত হন আইজি আইন শৃঙ্খলা কে ভি শ্রীজেস, ডিআইজি অরিন্দম নাথ, পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ সপ্তর্ষী এবং সদর মহকুমা শাসক সুমিত রায়চৌধুরী৷ দীর্ঘক্ষণ সচিবালয়ের পথ অবরোধের ফলে জনদূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের পক্ষ থেকে চাকুরীচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বৈঠকের অনুরোধ জানানো হয়৷ বৈঠকে পুলিশ তাঁদের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে যাতে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়৷ কিন্তু, চাকুরীচ্যুতরাও তাঁদের দাবিতে অনঢ় থাকেন৷ ফলে, পুলিশের সাথে বৈঠক একপ্রকার নিস্ফলা সমাপ্ত হয়৷

আন্দোলন থামাতে ব্যর্থ হয়ে আইজি আইন শৃঙ্খলা এবং পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপার ফিরে যান৷ তবে, ডিআইজি অরিন্দম নাথ পরিস্থিতির সমস্ত বিবরণ নিয়ে সচিবালয়ে বৈঠক করতে যান৷ সচিবালয়ে বৈঠকের পর চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠকের জন্য অনুরোধ জানানো হয়৷ কিন্তু, তাতে প্রথমে তাঁরা রাজী না হলেও পরবর্তী সময়ে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠকে সম্মত বলে জানিয়ে দেন৷ সে মোতাবেক সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠক হবে বলে স্থির হয়৷

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের ৮ প্রতিনিধি সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠক করতে যান৷ কিন্তু, দীর্ঘ প্রায় দুই ঘন্টা বৈঠক করেও শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে তাঁরা চাকুরীতে নিশ্চিয়তার কোন আশ্বাস পাননি৷ শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠক শেষে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানান, চাকুরীতে নিশ্চিয়তার কোন আশ্বাস তাঁরা পাননি৷ তাই তাঁরা এখন মুখ্যমন্ত্রীর সাথে এবিষয়ে আলোচনার জন্য চেষ্টা করবেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকেও যদি চাকুরীতে নিশ্চিয়তার কোন আশ্বাস না মিলে তাহলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন৷ তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার চাকুরী দিয়েছে৷ সুতরাং চাকুরীতে নিশ্চিয়তার দায়িত্বও রাজ্য সরকারের৷ কারণ, রাজ্য সরকারের ভূলের কারণেই ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী বাতিল হয়েছে৷ তাঁদের দাবি, বিরোধী বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন ১০৩২৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আলোচনার জন্য বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনের অনুরোধ জানিয়েছেন, তা মেনে নিক রাজ্য সরকার৷

এদিন, সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী এবিষয়ে জানান, চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের আজ আইনগতভাবে সমস্ত কিছু বোঝানের চেষ্টা হয়েছে৷ তাঁদের জন্য কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার তাও তাঁদের জানানো হয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, রাজ্য সরকারের পক্ষে তাঁদের জন্য যতটা করা সম্ভব সবটা করা হয়েছে৷ কিন্তু, আইনের উর্দ্ধে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ এমনকি ভেলিডেশন এ্যক্ট নিয়েও বিস্তারিত চর্চা করা হয়েছে৷ কিন্তু, তাতে দেখা গেছে, ১০৩২৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকুরী বাঁচানোর বিকল্প পন্থা হিসেবে ভেলিডেশন এ্যক্ট প্রণয়নের উদ্যোগ নিলে রাজ্য সরকার বিরাট সমস্যায় পড়বে৷ রাজ্য সরকারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা তেমনটাই পরামর্শ দিয়েছেন৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য এবং অশিক্ষক পদে নিয়োগে আদালত অবমাননার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে আগামী ১১ ডিসেম্বর হবে৷ ফলে, ততদিন পর্যন্ত তাঁদের ধৈর্য্য ধরতে হবে৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার চাকুরীচ্যুত ১০৩২৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি সম্পূর্ণভাবে সহানুভূতিশীল৷ কিন্তু, আদালত অবমাননা তাঁদের পাশে থাকার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়ছে৷ তবে, রাজ্য সরকার অন্তিম সময় পর্যন্ত তাঁদের পাশে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷
এদিকে, ১০৩২৩ শিক্ষকদের সংগঠনের একাংশ শুক্রবার সকাল ছয়টার পর থেকে মনু থানাধীন সিন্ধুকুমার পাড়া কিংবা এস কে পাড়াতে ধর্ণায় বসবেন বলে সূত্র অনুসারে জানা গেছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *