ভুয়ো নথী দিয়ে নাম তোলার আবেদন করায় শতাধিক মামলা
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ঠা ডিসেম্বর ৷৷ ভুয়ো ভোটার চিহ্ণিতকরণে কড়া অবস্থান নিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ পাশাপাশি একজন যোগ্য ভোটারও তালিকা থেকে যাতে বাদ না পরেন, সেজন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ পর্যন্ত আবেদন করা যাবে৷ সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানান, পশ্চিম জেলা নির্বাচন আধিকারিক ডা মিলিন্দ রামটেকে৷ সাথে তিনি এও জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন সংক্রান্ত সমস্ত কাজ সম্পন্ন করতে হবে৷ তাতে ধারণা করা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷
এদিন তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনার রাজ্য সফরে এসে ভোটার তালিকা সংশোধন এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা দিয়ে গেছেন৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কিছু নিত্যনতুন ফের বদল করা হচ্ছে৷ তিনি জানান, পশ্চিম জেলায় বাড়বে ভোট গ্রহণ কেন্দ্র৷ এরই সাথে প্রতিটি বুথে বাড়বে ভোট কর্মীর সংখ্যা৷ ডা রামটেকে আরো জানিয়েছেন, বিএলওদের গতিবিধির উপর করা নজরদারি রাখা হচ্ছে৷ দায়িত্ব পালনে অমনোযোগীদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ পশ্চিম জেলায় এখন পর্যন্ত জিরানীয়াতে ২৯ জন, মোহনপুরে ৩১ জন এবং সদর মহকুমায় ৭২ জন বিএলওদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জমা পড়েছে৷ কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক অমনোযোগী কোন বিএলওকে নির্বাচনের কাজের দায়িত্বে রাখা হবে না৷ তিনি জানান, সারা রাজ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷ আগামী দিনে আরও বিএলওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ডা রামটেকে সাফ জানিয়েছেন৷
পশ্চিম জেলা নির্বাচন আধিকারিক এদিন জানিয়েছেন, ভোটার তালিকায় নাম তোলা, বাদ দেওয়া, সংশোধন এবং স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে৷ আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সমাপ্ত হবে৷ তিনি জানান, ফর্ম ৬ (নাম তোলা) এর অন্তর্গত ২৭ হাজার ৭১টি আবেদন জমা পড়েছে৷ এর মধ্যে ১৭ হাজার ১৮টি আবেদন গৃহীত হয়েছে৷ ১৭১১টি আবেদন বাতিল করা হয়েছে৷ বকেয়া ৮৩৫০টি আবেদনের শুনানী নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন হবে৷ এদিকে ফর্ম ৭ (তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া) এর অন্তর্গত ১০ হাজার ৮৭৫টি আবেদন জমা পড়েছে৷ এর মধ্যে ৪৯৭৬টি আবেদন গৃহীত হয়েছে৷ ১২৮৮ টি আবেদন বাতিল করা হয়েছে৷ বকেয়া ৪৬১১টি আবেদনের শুনানী চলছে৷
এদিকে ফর্ম ৮ (তালিকায় নাম সংশোধন) এর অন্তর্গত ৩৯৮০টি আবেদন জমা পড়েছে৷ এর মধ্যে ২৫২১টি আবেদন গৃহীত ও ১২৯টি আবেদন বাতিল করা হয়েছে৷ বকেয়া ১৩৩০টি আবেদনের শুনানী চলছে৷ এছাড়া ফর্ম ৮এ (তালিকা থেকে নাম স্থানান্তর) এর অন্তর্গত ২৩৫৮টি আবেদন জমা পড়েছে৷ এর মধ্যে ১৫৭৩টি আবেদন গৃহীত হয়েছে৷ বাতিল হয়েছে ৫৩টি আবেদন৷ বকেয়া ৭৩২টি আবেদন আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে শুনানী সম্পন্ন হবে৷
ডা রামটেকে জানান, ভুয়ো নথী দিয়ে ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তের আবেদন করেছেন এমন ১১০টি মামলা করা হয়েছে৷ পাশাপাশি ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ায় যারা ভুয়ো নথি জমা দিয়েছেন কিংবা যাদের নথিতে ত্রুটি রয়েছে তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ এই প্রক্রিয়া ক্রমশ চলবে৷
পশ্চিম জেলার নির্বাচন আধিকারিক আরো জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত অভিযোগ সংগ্রহের বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে৷ জেলা অভিযোগ কেন্দ্রে ১০৭৭ নম্বরে ফোন করে সরাসরি ভোটার তালিকা সম্পর্কে অভিযোগ জানানো যাবে৷ তাছাড়াও মোবাইলে কিংবা ই-মেল মারফৎ, এমনকি মোবাইল অ্যাপ’র মাধ্যমেও অভিযোগ নথিভুক্ত করা যাবে৷ সমস্ত অভিযোগ জেলা নির্বাচন পোর্টালে দেখা যাবে৷ নির্বাচন কমিশন সমস্ত কিছুর ওপর নজরদারী রাখছে৷
এদিকে সারা রাজ্যে সমস্ত বুথে সব রকমের সুবিধা উপলব্ধ করার জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে পশ্চিম জেলা নির্বাচন আধিকারিক জানিয়েছেন৷ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ভোট কর্মীদের ডাটাবেস চালু হয়ে যাবে৷ তিনি জানান, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ভিভিপ্যাট ব্যবহৃত হবে৷ রাজ্যে বর্তমানে ১৫টি ভিভিপ্যাট রয়েছে৷ আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরো ৯৬০টি ভিভিপ্যাট রাজ্যে পৌঁছে যাবে৷ তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে আইটি সেল আরো শক্তিশালী করা হয়েছে৷ খুব শীঘ্রই মিডিয়া সেল খোলা হবে৷ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সংবাদ মাধ্যমের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে৷ ডা রামটেকে জানান, নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়নের দাবী জানানো হয়েছে৷
এদিন তিনি আরো জানান, পশ্চিম জেলায় আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ৭টি ভোট গ্রহণ কেন্দ্র অতিরিক্ত যুক্ত হবে৷ বর্তমানে পশ্চিম জেলায় ৭৬৮টি ভোট গ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে৷ তাছাড়া দৃষ্টিহীন এবং দিব্যাঙ্গ ভোটারদের জন্য পশ্চিম জেলায় একটি ভোট গ্রহণ কেন্দ্র খোলা হবে৷ নির্বাচন কমিশনের কাছে এ বিষয়ে আবেদন জানানো হয়েছে৷ খুব শীঘ্রই এর অনুমোদন মিলবে বলে তিনি আশা ব্যাক্ত করেছেন৷ তিনি আরো জানান, আগামী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত জেলা নির্বাচন আধিকারিক এবং মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের সাথে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে রাজ্যের নির্বাচনী প্রস্তুতির পর্যালোচনা করবেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এদিন ডা রামটেকে জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে হবে৷ তাতে ধারণা করা হচেছ, নির্দিষ্ট সময়েই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে৷