(update) এইচআইভি আক্রান্তের বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১২৬ জন, উদ্বেগ বিধানসভায়, রাজ্যে বাড়তে থাকা মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি মুখ্যমন্ত্রীর

আগরতলা, ১৩ জানুয়ারি : মারণব্যাধি এইডসের প্রকোপ বৃদ্ধি গভীর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, শিরাপথে মাদক সেবন ওই রোগ ছড়ানোর অন্যতম কারণ বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই আজ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যে সকলেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ত্রিপুরায় এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ২০২৩ সাল পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১০১২৬। শুধু তাই নয়, ওই মারণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছর পর্যন্ত ৪৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন রাজ্যে বাড়তে থাকা মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের বিষয় নয়, এটি সমাজের দায়িত্ব। সরকার একাধিক বিভাগ এবং সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার এবং বিস্তার রোধে কাজ করছে।”

আজ বিধানসভায় বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস এবং নয়ন সরকার সরকারের নেশামুক্ত রাজ্য গঠনে সরকারের পদক্ষেপ শীর্ষক দৃষ্টি অকর্ষণী নোটিশের জবাবে মুখমন্ত্রী বলেন, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত তিন বছরে মোট ১,৬৩৬টি এনডিপিএস মামলা নথিভুক্ত এবং ২,৬৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব মামলায় গাঁজা, হেরোইন, কফ সিরাপ এবং ট্যাবলেটের মতো বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদক বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

তাঁর দাবি, ২০২৪ সালে ত্রিপুরা পুলিশ ২,৩৯,০৬৭ কেজি গাঁজা, ১,৮০,৭৯৪ বোতল কফ সিরাপ এবং ১১,১৪৪ গ্রাম হেরোইন বাজেয়াপ্ত করেছে। বাজেয়াপ্ত মাদকের বাজারমূল্য বিশাল হলেও মুখ্যমন্ত্রী মাদকাসক্তি নির্মূলে বহুমুখী প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। এই প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে আইন প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পুনর্বাসন।

ডা. সাহা বলেন, “মাদক সমস্যার সমাধানে সমাজকল্যাণ, স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা এবং ক্রীড়া বিভাগ সহ নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরোর মতো সংস্থাগুলি একটি সংগঠিত পরিকল্পনার অধীনে কাজ করছে।” যুবসমাজকে গঠনমূলক কার্যক্রমে যুক্ত করতে এবং মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে সরকার “খেলো ত্রিপুরা, সুস্থ ত্রিপুরা”-র মতো ক্যাম্পেইন শুরু করেছে।

তাঁর দাবি, মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনে সরকার একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্যে অপিওইড সাবস্টিটিউশন থেরাপি (OST) সেন্টার চালু করা হয়েছে এবং জেলা হাসপাতালে ড্রাগ ট্রিটমেন্ট ক্লিনিক (DTC)-এর পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যাতে প্রতিটি মাদকাসক্ত ব্যক্তি আধুনিক মনোরোগ এবং ডি-অ্যাডিকশন পরিষেবা পেতে পারেন।”

তাঁর কথায়, সরকার তার আইন প্রয়োগ এবং পুনর্বাসন উদ্যোগকে আরও জোরদার করতে চাইছে। ডা. সাহা বলেন, “এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য লড়াই। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সামাজিক সংগঠন এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি মাদকমুক্ত রাজ্য গড়ে তুলতে পারব।” তাই ত্রিপুরা সরকার জনগণকে এই প্রচেষ্টায় সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে এবং সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার অনুরোধ করেছে।

তিনি বলেন, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন ত্রিপুরার উদ্যোগে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে “নেশা মুক্ত ত্রিপুরা” ক্যাম্পেইনের সূচনা করা হয়েছিল। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, ত্রিপুরার জাতীয় সেবা প্রকল্প (এনএসএস) শাখা ২২টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে একটি বিশাল সচেতনতা শিবির আয়োজন করেছে।

তিনি জানান, এইচআইভি/এইডস সচেতনতা বাড়াতে এবং পরামর্শ ও পরীক্ষার সুযোগ দিতে রাজ্যে ২৪টি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার (আইসিটিসি), ১৩৩টি ফেসিলিটি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার (এফআইসিটিসি), ৩টি পিপিপি-আইসিটিসি, এবং ১টি মোবাইল ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার ভ্যান চালু করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, যুবসমাজের মধ্যে এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর বিভিন্ন রাজ্য-স্তরের কার্যক্রম আয়োজিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কুইজ প্রতিযোগিতা, ব্যান্ড মিউজিক প্রতিযোগিতা এবং “রেড রান” ম্যারাথন, বলেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় এইডস নিয়ন্ত্রণ সংস্থার ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী ত্রিপুরায় এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ২০২১ সালে সংখ্যা ছিল ৭,৭০৭ জন, যা ২০২২ সালে বেড়ে ৮,৯৪৩ জন এবং ২০২৩ সালে ১০,১২৬ জনে পৌঁছেছে। এই একই রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্যে এইডস সম্পর্কিত মৃত্যুর হার প্রতি এক লক্ষ সুস্থ মানুষের মধ্যে ২০২১ সালে ছিল ১.১২, ২০২২ সালে তা কমে ০.৯৯ হলেও ২০২৩ সালে আবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.০৮-এ। মুখ্যমন্ত্রী এদিন আশা প্রকাশ করে বলেন, সরকার ও সামাজিক সংস্থাগুলি যৌথভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা আগামী দিনে ত্রিপুরাকে নেশা ও এইচআইভি মুক্ত করতে সহায়ক হবে।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় ত্রিপুরায় এইডস-সম্পর্কিত মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৬৬ জন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৬৫ জন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৬৬ জন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৭৬ জন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৪৪ জন, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৬৯ জন, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৭৪ জন এবং ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৫২ জন এইডস আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। 

মুখ্যমন্ত্রী বিবৃতি শুনে বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে রাজ্যে শিক্ষা ও কাজের পরিবেশ না থাকা অন্যতম কারণ। কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ ত্রিপুরায় মাদকাসক্তির এবং এইচআইভি আক্রান্তের চিত্র গভীর চিন্তার বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, এইচআইভি সংক্রমণ করোনা মহামারির থেকেও ভয়াবহ রূপ নিতে চলেছে। রাজ্যে মাদক প্রবেশের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করতে হবে। তাতে মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, ২০১৮ সালের পূর্বেও রাজ্য নেশা যুক্ত ছিল, সরকার পরিবর্তন হওয়ার নেশা মুক্ত ত্রিপুরার ডাক দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, মায়ানমার থেকে ত্রিপুরায় মাদক প্রবেশ করছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *