অশোক সেনগুপ্ত
কলকাতা, ১১ জানুয়ারি (হি.স.): ২.২ কিমি প্রাইভেট গাড়ি চালালে ৫০০ গ্রামের মত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়। একই প্রতিক্রিয়া হয় সাড়ে ৮ ঘন্টা স্মার্ট ফোন চালালে, ৪৯ গ্রাম পনীর রান্না করলে, ২৬ গ্রাম ‘রেড মিট’ রান্না করলে। এগুলো উদাহরণ মাত্র। এধরণের প্রতিটি প্রক্রিয়াতেই কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হচ্ছে। এবার গোটা বিশ্বে কত মানুষ, তাঁদের বহুবিধ কাজের সামগ্রিক ফল কী হচ্ছে, আশা করি অনুমান করতে পারছেন? আর তাই প্রশ্ন উঠছে, আমরা কি ‘প্রান্তসীমার পথে?’ (অন দি এজ?)।
ভারতীয় উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞাননগরী কলকাতার সায়েন্স সিটির সাফল্যের মুকূটে যুক্ত হল উল্লেখযোগ্য একটি পালক। ‘প্রান্তসীমার পথে?’ নামে এই পূর্ণাঙ্গ গ্যালারির উদ্বোধন করলেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে আর্কটিক অঞ্চল দ্রুত উত্তপ্ত হচ্ছে। মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। আমূল বদলে যাচ্ছে স্থানীয় মানুষদের জীবনধারা। নতুন গ্যালারিতে রয়েছে এ রকম বেশ কিছু পৃথক বিষয়ভিত্তিক প্রদর্শনী।
দুটি তলের প্রায় ১০ হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছে এই নয়া গ্যালারি। গোলাকার গ্যালারির নিচ তলায় মাঝখানে রয়েছে ১২ ফুট চওড়া ও ২৪ ফুট উঁচু এলইডি স্ক্রিন, প্রযুক্তির ভাষায় যেটিকে বলে ‘ইন্টারঅ্যাকটিভ সেন্টারপিস’। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজিয়ামস (এনসিএসএম)-এর মহানির্দেশক ডঃ অরিজিৎ দত্ত চৌধুরী হিন্দুস্থান সমাচারের এই এই প্রতিবেদককে জানান, “গোটা দেশে এ ধরণের গ্যালারি আর নেই। প্রায় ১ হাজার বর্গমিটার আয়তনের ওই গ্যালারি তৈরি হয়েছে দু’বছর ধরে। খরচ হয়েছে ৭ কোটি টাকার মত।”
ক্রমেই বিকশিত হয়েছে এবং হচ্ছে কলকাতার সায়েন্স সিটি। ১৯৯৪-এর জানুয়ারি মাসে ই এম বাইপাসের ধারে প্রায় ৫০ একর জমির ওপর এর শিলান্যাস হয়। উদ্বোধন হয় ১৯৯৭-এর ১ জুলাই। অরিজিৎ দত্ত চৌধুরী হিন্দুস্থান সমাচারের এই প্রতিবেদককে বলেন, “উল্লেখযোগ্য দেখার জন্য রয়েছে ডায়নামোশন, স্পেস ডোম থিয়েটার, মেরিটাইম সেন্টার, সায়েন্স এক্সপ্লোরেশন হল, আর্থ এক্সপ্লোরেশন হল প্রভৃতি বিভিন্ন ভবন। আর্থ এক্সপ্লোরেশন হল-এ ২০০৮-এ তৈরি হয় পৃথিবী-বিষয়ক একটি গ্যালারি। সেটিকে প্রতিস্থাপিত করে শনিবার চালু করা হল নতুন গ্যালারি ‘প্রান্তসীমার পথে?’ (অন দি এজ?)। ”
ডায়নামোশনে আছে ইন্ডোর পার্ক ও প্রায় আড়াইশো দ্রষ্টব্য। মেরিটাইম সেন্টারের মূল আকর্ষণ পূর্ব ভারতের নৌপরিষেবার উদ্ভব ও বিবর্তনের গ্যালারি। সায়েন্স এক্সপ্লোরেশন হলের আকর্ষণ ‘ইভলিউশন অফ লাইফ— এ ডার্ক রাইড’, ‘হেরিটেজ অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইন ইন্ডিয়া’, ‘এমার্জিং টেকনোলজি’, ‘প্যানোরোমা অন হিউম্যান ইভলিউশন’ প্রভৃতি গ্যালারি।
অতিমারির সময় প্রায় ১৩ মাস বন্ধ ছিল কলকাতার সায়েন্স সিটি। তাতেও এর মোট দর্শকসংখ্যা শীঘ্রই ৪ কোটি অতিক্রম করবে। রোজ বেলা ১০টায় খোলে ফটক। বন্ধ হয় সন্ধ্যা ৭টায়। তবে, টিকিট কাউন্টার ৬টায় বন্ধ হয়ে যায়। টিকিট মাথাপিছু ৭০ টাকা করে। তিন বছরের কম শিশুদের টিকিট লাগে না। ২৫ জন বা তার বেশি গ্রুপ এলে রয়েছে ছাড়ের ব্যবস্থা। তবে প্রতিটি হল এবং রোপওয়ের জন্য পৃথক টিকিট কাটতে হবে। ‘স্পেস থিয়েটার’, ‘ডার্ক রাইড’-এর টিকিটের মূল্য যথাক্রমে ১২০/- ও ৫০/-।