আগরতলা, ১৯ জুন : রাজ্যে প্রতি মাসে ১২০ জন এইচআইভি-তে আক্রান্ত হচ্ছে। গত ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে মোট পাঁচ হাজারের বেশি এইডস ও এইচআইভি আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। তার মধ্যে মহিলার সংখ্যা ১০০০ এরও বেশি। এইডস এ আক্রান্ত রয়েছেন সমকামীরাও। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত রাজ্যে ২ লক্ষ ৪ হাজার ১৮০ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে আশ্চর্যজনকভাবে ১৪০০ জনের শরীরে এই ভাইরাসের হদিশ মিলেছে। গত দু মাসে ৪০০৫২ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে ৩০০ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাসের হদিস মিলেছে। উদ্যোগজনকভাবেই এই সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আজ ত্রিপুরা বিধানসভার লবিতে ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এইচআইভি/এইডস শীর্ষক জনসচেতনতামূলক আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা এই তথ্য জানান। রাজ্য বিধানসভার সদস্যগণ এই আলোচনাচক্রে অংশগ্রহণ করেন।
এদিনের আলোচনা চক্রে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে সেক্স এবং ড্রাগস এডুকেশন বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধুলার প্রতি আরো বেশি আকৃষ্ট করতে হবে। এইডস প্রতিরোধক ফান্ড গঠন করে বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প থেকে এক লক্ষ টাকা করে খরচ করার দাবী জানান তিনি। পাশাপাশি হাসপাতালগুলিতেও চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের এইডস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন।
এদিকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডঃ মানিক সাহা বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে বিদ্যালয়গুলিতে সেক্স এবং ড্রাগস এডুকেশন বাধ্যতামূলক করা যেতেই পারে। এইডস প্রতিরোধক ফান্ড গঠন করার বিষয়েও আশ্বস্ত করেছেন তিনি। তবে হাসপাতালগুলিতে কারো অনুমতি ছাড়া এইডস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে বলে জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে এইচআইভি/এইডস রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতার বিষয়টি মানুষের কাছে আরও বেশি করে নিয়ে যেতে হবে। যুব সমাজকে আরও বেশি করে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিকচর্চা ও সামাজিক কাজে যুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি, সাংসদ ও অভিভাবকদের বড় ভূমিকা নিতে হবে।
এই জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরো বলেন, সমাজ যত সুস্থ থাকবে মানব জীবনও তত সুস্থ এবং সবল থাকবে। তিনি বলেন, এইডস রোগ প্রতিরোধে বর্তমানে রক্তদান ও রক্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সবধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এইডস একটা মারণ ব্যাধি। তাই রাজ্য সরকার এইডস প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজ্যকে এইডস ও নেশামুক্ত রাখতে রাজ্য সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যুবক যুবতীদের এইডস সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন করতে হবে। সমাজ থেকে এধরণের মারণ রোগকে দূর করতে হলে জনপ্রতিনিধিদের রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে একযোগে কাজ করতে হবে। তবেই এই মারণ রোগ প্রতিরোধে কাঙ্খিত সাফল্য আসবে।
আলোচনাচক্রে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রতনলাল নাথ, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী টিছু রায়, বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন, বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ, বিধায়ক গোপাল রায়, বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা প্রমুখ। আলোচনাকালে তাঁরা রাজ্যে এইচআইভি/এইডস রোগের প্রবণতা হ্রাসে লেজিসলেটিভ ফোরাম এর কাছে বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করেন। আলোচনাচক্রে এইডস রোগের বিস্তার, প্রতিরোধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন সিএসটি এন্ড আইটি এবং এনএসিও’র এডিজি ডা. চিন্ময়ী দাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জনসচেতনতা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির বাংলা, ককবরক ও ইংরেজী ভাষায় প্রণীত ১৫টি নতুন আইইসি ম্যাটেরিয়েলস এর সূচনা করেন। আলোচনাচক্রে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রনজিৎ সিংহরায়, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, সমবায়মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল, বিধানসভার সরকার পক্ষের মুখ্যসচেতক কল্যাণী সাহা রায়, ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশের ডিজি অনুরাগ সহ বিশিষ্ট জনেরা। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন টিএমএসিএস’র প্রজেক্ট ডিরেক্টর ডা সমর্পিতা দাস।