আগরতলা, ১৪ মে: ত্রিপুরায় বিভিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবায় ধারাবাহিক বিঘ্ন ঘটায় জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। ঘনঘন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার এই ঘটনাগুলোর পেছনে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যান্ত্রিক ত্রুটি নয়। বরং এটি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের নাশকতামূলক পরিকল্পনা। আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি এমনটাই জানিয়েছেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ। এর কারণ হিসেবে পূর্ব থানায় অভিযোগ দায়ের করে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ দপ্তরের প্রাথমিক তদন্তে এই বিষয়টি উঠে আসে। বিদ্যুৎ পরিষেবা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাহত করে রাজ্যবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটানোর এই প্রবণতাকে ঘিরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।একই সঙ্গে তিনি দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপের আশ্বাসও দিয়েছেন। তাঁর কথায়, গত সোমবার গভীর রাতে আগরতলা শহরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আমচকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আগরতলা শহরের মোট ২১টি ট্রান্সফর্মারে ইচ্ছাকৃতভাবে নাশকতা করা হয়েছে। এই এলাকাগুলো হলো ধলেশ্বর রোেড নং ৮, চন্দ্রপুর দাসপাড়া, ধলেশ্বর বাঁশঝাড়, চন্দ্রপুর রায় বাড়ি ১, চন্দ্রপুর রায় বাড়ি ২, ধলেশ্বর রোড নং ৯, জয়গুরু অটোস্ট্যান্ড, জয়গুরু অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, আশ্রম চৌমুহনী, শিবনগর পিএন দেব রোড, পালকি বিয়ে বাড়ি, জামতলা ১, জামতলা ২, চন্দ্রপুর রেডিয়ান্ট হাউসিং, ধলেশ্বর রোড নং ৭/১৪, ব্লু লুটাস ক্লাব, অ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি শিবনগর, কামারপুকুর পাড়, ডক্টর সুখেন্দু ভট্টাচার্যের বাড়ি এলাকা, ধলেশ্বর দেবেন্দ্র দেবনাথ রোড এবং শিবনগর মডার্ন ক্লাব।
এদিন তিনি আরও বলেন, কোথাও ট্রান্সফর্মারের গ্যাং ফেলে দেওয়া হয়েছে, কোথাও বা কাটআউট খুলে নেওয়া হয়েছে। এমনকি কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইনের ওপর ভারী বস্তু ফেলে শর্ট সার্কিট ঘটানোর চেষ্টাও লক্ষ্য করা গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তৎপরতার সঙ্গে তদন্তে নামে নিগমের প্রকৌশলী ও কর্মীরা। প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, মূল বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে কোনও ত্রুটি নেই- তবুও গোটা এলাকা অন্ধকারে। এই অসঙ্গতি থেকেই উঠে আসে নাশকতার তত্ত্ব। বিশেষত, কামারপুকুর পাড় এলাকার একটি সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায়, এক ব্যক্তি স্কুটিতে করে এসে ট্রান্সফর্মারের পাশে গিয়ে গ্যাং ফেলে দিচ্ছে এবং মুহূর্তের মধ্যে গোটা এলাকা অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। এরকম একাধিক ভিডিও ফুটেজ এখন বিশ্লেষণ করছে বিদ্যুৎ নিগম ও পুলিশ প্রশাসন। নিগম ইতিমধ্যেই পূর্ব আগরতলা থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেছে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ ব্যক্তিগভাবে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার পুলিশ সুপার এবং সংশ্লিষ্ট থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তদন্তে আইটি দপ্তরের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেন, এটি নিছক যান্ত্রিক সমস্যা নয়, এটি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের নাশকতামূলক পরিকল্পনা। যারা রাজ্যবাসীকে অন্ধকারে রেখে অপরাধমূলক কাজ করার সুযোগ নিতে চাইছে। তিনি জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদন বা সরবরাহে রাজ্যে কোনও ঘাটতি নেই। শুধুমাত্র ঝড়-বৃষ্টি বা যান্ত্রিক ত্রুটির সময় সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে। স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আওতায় কিছু এলাকায় পূর্ব নির্ধারিতভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হলেও, তার আগাম ঘোষণা মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এসব নির্ধারিত পরিস্থিতি ছাড়া বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়া সম্পূর্ণ অসাধু উদ্দেশে চালিত একটি দুষ্টচক্রের কাজ বলে মন্ত্রীর অভিমত।
শহরবাসীর দুর্ভোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজ্যবাসীর উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বলেন, সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। যদি কেউ বিদ্যুৎ সরঞ্জামের আশেপাশে সন্দেহজনক কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন, তাহলে অবিলম্বে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিস বা থানায় জানানোর কথা বলেন। নাশকতার পিছনে চুরি বা অন্য কোনও গুরুতর অপরাধ লুকিয়ে থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, এই চক্রকে চিহ্নিত করে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। রাজ্য সরকার জনগণের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীল বিদ্যুৎ পরিষেবার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে সরকারের একার পক্ষে এই অপচেষ্টা প্রতিহত করা সম্ভব নয় – জনগণের সচেতনতাই আমাদের প্রধান শক্তি। ঘনঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে সাধারণ মানুষ যেমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তেমনি স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ছে। একদিকে গ্রীষ্মের দাবদাহ, অন্যদিকে আকস্মিক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা- সব মিলিয়ে জনজীবনে নেমে এসেছে এক নতুন রকমের অস্বস্তি। মন্ত্রী রতনলাল নাথ আশ্বাস দিয়েছেন, দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে যথাসম্ভব কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যুৎ পরিষেবাকে নাকশকতার হাত থেকে রক্ষা করতে প্রশাসনের সক্রিয়তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই জরুরি নাগরিকদের সচেতন অংশগ্রহণ।সেই বার্তাই তিনি পৌঁছে দিয়েছেন আগরতলাবাসী তথা গোটা ত্রিপুরাবাসীর কাছে।