আগরতলা , ১৩ মে : ত্রিপুরা রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবায় ঘন ঘন বিঘ্নের পেছনে সুপরিকল্পিত বৈদ্যুতিক নাশকতার ইঙ্গিত মিলেছে। রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী শ্রী রতন লাল নাথ আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, আগরতলা শহর সহ একাধিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাহত করার নেপথ্যে একটি সংঘবদ্ধ দুষ্টচক্র সক্রিয় রয়েছে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রী জানান, সাধারণ মানুষ যখন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তখনই ত্রিপুরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি কর্পোরেশন লিমিটেড এবং বিদ্যুৎ দপ্তর একযোগে তদন্তে নামে। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে মন্ত্রী নিজে হস্তক্ষেপ করে তদন্তের নির্দেশ দেন এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
টিএসইসিএল সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার গভীর রাতে আগরতলার একাধিক এলাকায় হঠাৎ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অভিযোগ পেয়ে কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দেখা যায়, মূল লাইনে বিদ্যুৎ চলমান থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় আলো নিভে গেছে। পরবর্তীতে খতিয়ে দেখে জানা যায়, একাধিক স্থানে ট্রান্সফরমারের গ্যাং ইচ্ছাকৃতভাবে ফেলে দেওয়া হয়েছে এবং কোথাও কোথাও কাটআউট খুলে ফেলা হয়েছে।
ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং সুপরিকল্পিত চক্রান্ত বলে উঠে এসেছে তদন্তে। শহরের মোট ২১টি ট্রান্সফরমারে এই ধরণের নাশকতার প্রমাণ মিলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ধলেশ্বর রোড নং ৮, চন্দ্রপুর দাসপাড়া, জয়গুরু অটোস্ট্যান্ড, শিবনগর পিএন দেব রোড, জামতলা, চন্দ্রপুর রেডিয়ান্ট হাউসিং, ব্লু লুটাস ক্লাব, কামারপুকুর পাড়, এবং ধলেশ্বর দেবেন্দ্র দেবনাথ রোড।
কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ লাইনের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে ভারী বস্তু ফেলে শর্ট সার্কিট করানো হয়েছে বলেও জানা যায়। এমনকি কামারপুকুর পাড় এলাকার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, এক ব্যক্তি স্কুটিতে এসে ট্রান্সফরমারের গ্যাং ফেলে দিচ্ছে এবং সঙ্গে সঙ্গেই গোটা এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়।
এই ঘটনায় পূর্ব থানায় এফআইআর দায়ের করেছে বিদ্যুৎ নিগম। বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার পুলিশ সুপার ও পূর্ব থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ প্রশাসন পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়াও ঘটনার প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের জন্য আইটি দপ্তরের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, “ত্রিপুরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। শুধুমাত্র যান্ত্রিক ত্রুটি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই সাময়িক বিঘ্ন ঘটে। কিন্তু সম্প্রতিক ঘটনাগুলি একেবারে অন্য প্রকৃতির। এগুলি সুপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাশকতা।”
তিনি আরও জানান, স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আওতায় কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হলেও, এলাকাবাসীকে আগাম জানানো হয়। প্রকল্পের কাজ বা দুর্যোগ ছাড়া অন্য কোনো কারণ নেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের।
শহরবাসী ও রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে মন্ত্রী আহ্বান জানান, “যদি কেউ সন্দেহজনক কিছু দেখতে পান, অবিলম্বে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিস অথবা থানায় জানান। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে চুরি বা অন্য অপরাধ ঢাকার চেষ্টা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
রাজ্য সরকার বিদ্যুৎ পরিষেবাকে স্থিতিশীল ও নিরাপদ রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, “জনগণের সচেতনতা ও সহযোগিতাই এই দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে আমাদের প্রধান অস্ত্র।”
সব মিলিয়ে, বিদ্যুৎ পরিষেবায় এই নাশকতা রাজ্যের নিরাপত্তায় এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। প্রশাসনের সক্রিয় পদক্ষেপ ও জনগণের সচেতনতার মধ্য দিয়েই এই চক্রান্ত রুখে দেওয়া সম্ভব—এই বার্তাই দিয়েছেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ।
2025-05-13