নয়াদিল্লি, ১২ মে : পাকিস্তানের সাথে এখন শুধুই সন্ত্রাসবাদ এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা হবে। কারণ, জল ও রক্ত একসাথে বইতে পারে না। আজ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এভাবেই কড়া ভাষায় পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়েছেন। সাথে সমগ্র বিশ্বের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, সন্ত্রাসবাদ এবং আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। সন্ত্রাসবাদ এবং বাণিজ্যও একসঙ্গে চলতে পারে না। এদিন প্রধানমন্ত্রী “অপারেশন সিঁদুর” এর সফল সমাপ্তির কথা ঘোষণা করে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিজ্ঞানীদের কৃতিত্বের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে নিষ্পাপ নাগরিকদের উপর বর্বর সন্ত্রাসী হামলার প্রত্যুত্তরে ভারত পরিচালিত সামরিক অভিযানে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সাহসী সেনারা সীমাহীন বীরত্ব প্রদর্শন করেছে। আমি এই পরাক্রম উৎসর্গ করছি আমাদের দেশের প্রতিটি মা, বোন ও কন্যাকে।”* তিনি জানান, ৬ মে গভীর রাত থেকে শুরু হয়ে ৭ মে সকালের মধ্যে ভারতীয় বাহিনীর সুনির্দিষ্ট হামলায় পাকিস্তানের বহু সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এতে ১০০-রও বেশি কুখ্যাত জঙ্গি নিহত হয়।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাহাওয়ালপুর ও মুরিদকে-র মতো স্থান, যেগুলিকে “বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের বিশ্ববিদ্যালয়” বলা যায়, সেগুলিই ভারতের মূল লক্ষ্য ছিল। তিনি বলেন, “যে মুখ্য কার্যালয় থেকে সন্ত্রাসের বীজ বোনা হতো, সেগুলি আজ ভারত ধ্বংস করেছে।”
ভারতের সফল অভিযানে হতাশ পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালিয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল স্কুল, কলেজ, মন্দির ও সাধারণ মানুষের বসতবাড়ি। তবে ভারতীয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সফলভাবে এসব হামলা প্রতিহত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাকিস্তানের ড্রোন ও মিসাইল আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করতে পারেনি। ভারত শুধু সীমান্ত নয়, পাকিস্তানের গর্বের এয়ারবেসগুলোকেও গুঁড়িয়ে দিয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, “সন্ত্রাসবাদ এবং আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না, সন্ত্রাসবাদ এবং বাণিজ্য একসঙ্গে চলতে পারে না।” তিনি জানান, পাকিস্তানের অনুরোধে ভারত তার সামরিক প্রতিক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখলেও, ভবিষ্যতে প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করা হবে। তাতে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, অপারেশন সিঁদুর বন্ধ হয়নি, সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে। তাঁর সাফ কথা, পাকিস্তানের সাথে শুধুই সন্ত্রাসবাদ এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই আলোচনা হবে। কারণ, জল এবং রক্ত একসাথে বইতে পারে না।
“অপারেশন সিঁদুর” ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী নীতিকে একটি নতুন দৃষ্টান্তে নিয়ে গেছে। সে-বিষয়ে তিনটি মূল বার্তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত আক্রমণের জবাব কঠোরভাবে দেবে সেটাও নিজের শর্তে, পরমাণু ব্ল্যাকমেইল আর বরদাস্ত নয় এবং যারা সন্ত্রাসকে আশ্রয় দেয় ও পোষে, তাদেরকে আলাদা করে দেখা হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অভিযানে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অস্ত্র ও প্রযুক্তির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। আধুনিক যুদ্ধবিদ্যার যুগে ভারতীয় সামরিক শক্তির সক্ষমতা এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বীকৃত।
আজ বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন, শান্তির পথ শক্তির মাধ্যমেই রচিত হয়। তিনি বলেন, “এই যুগ যুদ্ধের নয়, তবে সন্ত্রাসেরও নয়। টেররিজমের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সই একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বের গ্যারান্টি।” শেষে প্রধানমন্ত্রী আবারও সশস্ত্র বাহিনীকে স্যালুট জানিয়ে বলেন, “ভারতের শক্তি ও ঐক্যই আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আমরা একসঙ্গে আছি, একসঙ্গে লড়ব, একসঙ্গে জয়ী হব।”