জাতীয় নিরাপত্তা বা শত্রু আক্রমণের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলিকে বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক

নয়াদিল্লি, ৯ মে : পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে জাতীয় নিরাপত্তা বা শত্রু আক্রমণের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে সিভিল ডিফেন্স আইন, ১৯৬৮ এর নিয়মাবলীর আওতায় বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে। “রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলিতে নাগরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বৃদ্ধি” শীর্ষক এক চিঠিতে মন্ত্রক বিশেষভাবে সিভিল ডিফেন্স রুলস-এর ধারা ১১-এর উল্লেখ করেছে। তাতে শত্রু আক্রমণের সময় জনগণ, সম্পত্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাসমূহ রক্ষায় রাজ্য সরকারকে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে জম্মু ও জয়সলমেরে পাকিস্তানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর যেগুলির অধিকাংশই ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দ্বারা প্রতিহত করা হয়েছে এই নির্দেশ এসেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সমস্ত রাজ্যকে ধারা ১১ কার্যকর করার অনুরোধ জানিয়েছে এবং প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সিভিল ডিফেন্স ডিরেক্টরদের জরুরি ক্রয়ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলেছে, যাতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তহবিল ব্যবহার করে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো যায়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, “বর্তমান শত্রু আক্রমণের পরিস্থিতিতে আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সিভিল ডিফেন্স রুলস, ১৯৬৮-এর ধারা ১১-র দিকে, যা রাজ্য সরকারকে এমন পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতা দেয় যা জনগণ ও সম্পত্তিকে আঘাত বা ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য, কিংবা গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তহবিল এই নির্দেশ পালনের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং এই নির্দেশ পালনকে অন্যান্য সকল দায়িত্বের উপরে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, রাজ্য ও স্থানীয় স্তরের প্রস্তুতি এই ধরনের আক্রমণের প্রভাব কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, ২২ এপ্রিলের পহালগাম হামলায় ২৬ জন নিরীহ নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারতের “অপারেশন সিন্দুর”-এর প্রতিশোধ হিসেবেই এই হামলা চালানো হয়েছে। পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত, এবং আন্তর্জাতিক মহলে শান্তি ও সংলাপের আহ্বান উঠেছে।

প্রসঙ্গত, জাতীয় নিরাপত্তা বা শত্রু আক্রমণের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে, সিভিল ডিফেন্স আইন, ১৯৬৮-এর ধারা ১১ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই ধারা কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়ার পর অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে—এই আইনের আওতায় রাজ্য সরকারগুলি কী কী করতে পারে? নিচে ধারা ১১-এর প্রধান তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:

১. জনগণ ও সম্পত্তির সুরক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ: ধারা ১১ অনুযায়ী, রাজ্য সরকার এমন যেকোনো জরুরি পদক্ষেপ নিতে পারে যা নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে আশ্রয়, উদ্ধার কার্যক্রম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

২. গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা সচল রাখা : যুদ্ধ বা শত্রু আক্রমণের পরিস্থিতিতেও যাতে জল, বিদ্যুৎ, হাসপাতাল পরিষেবা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যকর থাকে, তা নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার সবরকম ব্যবস্থা নিতে পারে। জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা যাতে বিপর্যস্ত না হয়, তার দিকেও বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে।

৩. যন্ত্রপাতি সংগ্রহে বিধিনিষেধে শিথিলতা : অসামরিক প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা সামগ্রী সংগ্রহ করতে হলে সাধারণত যে প্রশাসনিক বিধি-বিধান মানতে হয়, সেই প্রক্রিয়া এই ধারা অনুযায়ী শিথিল করা যায়। অর্থাৎ, বিলম্ব রোধে নিয়ম ছাড়াও সরাসরি ক্রয় বা ব্যবস্থাপনার অনুমতি রাজ্য সরকার পায়।

এই ধারা কার্যকর হলে রাজ্য সরকার ও স্থানীয় সংস্থাগুলি তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, যা দুর্যোগ বা শত্রু হামলার সময় জনগণের সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *