‘আম্বেদকরকে ভারতীয় সংবিধান প্রণয়নকারী গণপরিষদের বাইরে রেখেছিলেন নেহরু’
ডিব্রুগড় (অসম), ২৬ জানুয়ারি (হি.স.) : অসমের দ্বিতীয় রাজধানী হবে ডিব্রুগড়ে, দ্বিতীয় রাজভবন হবে তেজপুরে, মিনি সেক্রেটারিয়েট এবং মুখ্যসচিবের দফতর হবে শিলচরে, এ বছরই কার্যকর হবে গুয়াহাটি-শিলচর এক্সপ্রেস হাইওয়ে, ডিব্রুগড়ে ৭৬-তম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
ডিব্ৰুগড় জেলা সদরে অবস্থিত খনিকর রিজাৰ্ভ খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত ৭৬-তম প্রজাতন্ত্র দিবসের কাৰ্যসূচিতে অংশগ্রহণ করে ভাষণ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা। এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী ডিব্রুগড়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে ভাষণ দিয়েছেন। প্রদত্ত ভাষণে ডিব্রুগড় শহরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের কথা স্মরণ করে একে রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, তাঁর সরকার (ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন) রাজ্যের চা এবং খনিজ-সমৃদ্ধ অঞ্চলে অবস্থিত ডিব্ৰুগড় শহরকে গুয়াহাটির দিশপুরের পর দ্বিতীয় রাজধানী করবে। ডিব্রুগড়ে একটি নতুন বিধানসভা ভবন নির্মাণ করে রাজ্যের দ্বিতীয় রাজধানী করা হবে। এছাড়া একটি রাজভবন তৈরি করে তেজপুরকে সাংস্কৃতিক রাজধানীতে রূপান্তরিত করা হবে। কেবল তা-ই নয়, শিলচরে একটি মিনি সচিবালয় এবং মুখ্যসচিবের কার্যালয় তৈরি করে গুয়াহাটির সঙ্গে প্রশাসনিক দূরত্ব কমাবে তাঁর সরকার। তাছাড়া এ বছরই গুয়াহাটিকে শিলচরের সাথে সংযোগকারী এক্সপ্রেস হাইওয়ে নির্মাণ করে তা কার্যকর করা হবে। এই এক্সপ্রেস হাইওয়ে কার্যকর হয়ে গেলে, গুয়াহাটি এবং শিলচরের মধ্যে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সময় কমে যাবে। এছাড়া আরও বেশ কিছু প্রস্তাবিত প্রকল্প রূপান্তরের পরিকল্পনার রূপরেখা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কংগ্রেসকে ঠুকে মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা বলেন, ‘বড় বড় কথা বলে কংগ্রেস। অথচ ড. ভিমরাও আম্বেদকরকে ভারতীয় সংবিধান প্রণয়নকারী গণপরিষদের বাইরে রেখেছিলেন নেহরু। ড্রাফটিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নেহরু একজন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ স্যার আইভর জেনিংসের নাম ঠিক করেছিলেন। আম্বেদকরকে একজন সমস্যা সৃষ্টিকারী হিসেবে অভিহিত করেছিলেন তিনি (নেহরু)।’
ড. শৰ্মা বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধী আম্বেদকরের অতুলনীয় যোগ্যতা এবং দক্ষতার প্রতি আস্থা রেখে নেহরুর অবস্থানের বিরোধিতা করেছিলেন। গান্ধীজির সিদ্ধান্তের বৈধতা প্রমাণ করে, আম্বেদকরের নেতৃত্বে খসড়া কমিটি ভারতকে একটি সংবিধান দিয়েছে যাতে ন্যায়বিচার, সমতা এবং ভ্রাতৃত্বের নীতি ছিল। গণপরিষদে আম্বেদকরের অন্তর্ভুক্তি ছিল অত্যন্ত প্রত্যাহ্বানপূর্ণ।’
হিমন্তবিশ্ব বলেন, ‘তিনি গণপরিষদে নির্বাচিত ২৯৯ জন প্রতিনিধির প্রথম তালিকায় ছিলেন না। পূর্ববঙ্গের দলিত নেতা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল আম্বেদকরকে তাঁর নিজের জায়গায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়ার পরই তিনি এই ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার অংশীদার হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।’
৭৬-তম প্ৰজাতন্ত্ৰ দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আগে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা ডিব্রুগড়ের থানা চারিয়ালিতে সংস্থাপিত মহাত্মা গান্ধীর পূর্ণাবয়ব মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে গতকাল ডিব্রুগড় এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে আজ সকালে ডিব্রুগড়ে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে ২০টি গাছের চারা রোপণ করে পরিবেশ সংরক্ষণে তাঁর উৎসর্গ প্রদর্শন করেছেন।
সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্ৰী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জরুরি প্রয়োজন তুলে ধরেন এবং মজবুত ভবিষ্যৎ গড়তে নাগরিকদের অবদান রাখার আহ্বান জানান।
পুলিশ, আধাসেনা, এনসিসি, স্কাউট অ্যান্ড গাইডস, এসএসবি প্রভৃতি নিরাপত্তা বাহিনীর চমৎকার মার্চপাস্ট ছাড়াও খানিকর ময়দানে স্থানীয় শিল্পী এবং স্কুলছাত্রীদের দেশাত্মবোধক সাংস্কৃতিক জমকালো অনুষ্ঠান ছিল। এক প্রাণবন্ত পরিবেশ, যা রাজ্যের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক এবং দেশপ্রেমিক উদ্দীপনাকে প্রতিফলিত করেছিল। হাজার হাজার নাগরিক আজকের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন।