ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং সিকিম দ্রুত অগ্রগতি করতে থাকা রাজ্যের তালিকায়

নয়াদিল্লি, ৫ জানুয়ারি : বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বেসরকারি ক্ষেত্রসহ রাজ্যগুলিকে অবশ্যই উন্নততর পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার (লজিস্টিক) ব‍্যবসার স্বার্থে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সরবরাহের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সংযোগ স্থাপনে আঞ্চলিক এবং শহর-পর্যায়ের পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার পরিকল্পনা বিকাশের প্রয়োজনীয়তা  রয়েছে। নয়াদিল্লিতে ৩ জানুয়ারি, ২০২৫ -এ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে  ‘রাজ্যস্তরে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার সহজলভ্যতা সংক্রান্ত ২০২৪’ এর প্রতিবেদনের  (এল ই এ ডি এস ) আবরণ উন্মোচন করে একথা বললেন কেন্দ্রীয় বানিজ্য ও শিল্পোদ‍্যোগ মন্ত্রী পিযুষ গোয়েল।

তিনি পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার যোগানে সবুজ লজিস্টিকের প্রতি উৎসাহ প্রদানের পন্থাপদ্ধতি রূপায়ণ, কর্মশক্তি সংযোজনা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণেও জোর দেন। এতে ভবিষ্যতে আরোও বেশি সাফল‍্য নিশ্চিত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা, যান্ত্রিক শিখন, তথ‍্য বিশ্লেষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ নতুনতর প্রযুক্তি গ্রহণের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। রসদ যোগানের ক্ষেত্রকে উজ্জীবিত করতে দক্ষতা বিকাশেও জোর দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
শ্রী গোয়েল আরও বলেন, দেশে লিঙ্গগত অন্তর্ভূক্তিকরণে মনযোগী হওয়া জরুরি। আর সেই লক্ষ্যেই এক্ষেত্রে মহিলাদের বেশিমাত্রায় অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করতে হবে বলে জানান তিনি। এই বিষয়ে রাজ্যগুলিকে অবশ্যই পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে  সরকারি বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বের পিপিপি মডেলে শিথিলতা দেখাতে হবে। দেশের অভ‍্যন্তরে কন্টেনারের গোদাম এবং সেজন‍্য খরচ সাশ্রয় ও স্বচ্ছতার প্রশ্নে নিলামের মাধ‍্যমে জমি সহজলভ‍্য করতে জন‍্য রাজ‍্যগুলির প্রতি মাল্টি-মোডাল হাবগুলির দিকে নজর দিতে আর্জি জানান তিনি।

তিনি ২০৪৭ এর মধ্যে বিকশিত ভারতের জন‍্য দেশকে প্রস্তুত করতে এল ই এ ডি কর্মকাঠামোর আওতায় দীর্ঘস্থায়ীত্ব, সক্ষমতা ও কার্যকারিতা, সহজলভ্যতা এবং স্বচ্ছতা, একইসঙ্গে রূপান্তরণ প্রক্রিয়ার ডিজিটায়ন বা সাংখ‍্যিকীকরণের বিষয় গ্রহণের ব‍্যাপারে রসদ যোগান ক্ষেত্রের প্রতি আর্জি জানান।

এই প্রসঙ্গে তিনি  রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে অগ্রবর্তী পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংস্কারে এল ই এ ডিএসের তাৎপর্য সংক্রান্ত বিষয়ে আলোকপাত করেন।  

অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পোদ‍্যোগ প্রতিমন্ত্রী শ্রী জিতিনপ্রসাদ এবং শিল্পোদ‍্যোগ প্রোৎসাহন এবং আভ‍্যন্তরীণ ব‍্যবসাবাণিজ‍্য সংক্রান্ত দপ্তর(ডিপিআইআইটি) এর সচিব শ্রী অমরদীপ সিংহ ভাটিয়াও অংশগ্রহণ করেন। শ্রী ভাটিয়া ষষ্ঠ বারের জন‍্য প্রকাশিত এল ই এ ডি এস ২০২৪ এর প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলিতে বিলেষভাবে আলোকপাত করেন।

প্রসঙ্গতঃ এল ই এ ডি এস ২০২৪ এর প্রতিবেদনে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা  সংক্রান্ত চারটে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের সক্রিয়তার মাত্রা যাচাইয়ের চেষ্ট করা হয়েছে। পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা যোগানের পরিকাঠামো, পরিষেবা, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণগত পরিবেশ এবং নতুন চালু হওয়া সুস্থায়ী রসদ যোগান ব‍্যবস্থা। এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রসদ যোগান পরিষেবায় এই স্তম্ভগুলির আওতায় যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলিতেও আলোকপাত করা হয়।

এক্ষেত্রে উপকূলীয় অঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ‍্যে সাফল্যঅর্জনকারীদের তালিকায় গুজরাট,কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা এবং  তামিলনাডুর নাম রয়েছে। এক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি করতে থাকা রাজ্যগুলির মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং গোয়ার নাম রয়েছে। প্রত্যাশী রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গের নাম। স্থলদেশ আবদ্ধ রাজ্যগুলির মধ্যে সফল রাজ্যের তালিকায় হরিয়ানা, তেলেঙ্গানা, উত্তর প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের নাম উল্লেখযোগ্য। দ্রুত উন্নতি করতে থাকা রাজ্যের তালিকায় বিহার, হিমাচলপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব এবং রাজস্থানের নাম রয়েছে। প্রত্যাশী রাজ্যের তালিকায় রয়েছে ছত্তিশগড় ও ঝাড়খন্ড। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মধ্যে সাফল্যের তালিকায় রয়েছে আসাম এবং অরুণাচল প্রদেশের নাম। দ্রুত অগ্রগতি করতে থাকা রাজ্যের তালিকায় রয়েছে ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং সিকিম। উত্তর পূর্বের একমাত্র প্রত্যাশী রাজ্য মণিপুর। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির তালিকায় সফল দিল্লি ও চন্ডিগড়। দ্রুত অগ্রগতির তালিকায় রয়েছে দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও  দিউ। এছাড়া জম্মু-কাশ্মীর, লাক্ষাদ্বীপ এবং  পুদুচেরিও  রয়েছে। প্রত্যাশীর তালিকায় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং লাদাখ রয়েছে।

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পোদ‍্যোগ মন্ত্রী শ্রী পিযুষ গোয়েল গতিশক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পিএম গতিশক্তি পাঠ‍্যক্রমে’রও সূচনা করেন। এতে পনেরো ঘন্টায়  দক্ষ পরিকাঠামো পরিকল্পনা এবং  জাতীয় বিকাশ সংক্রান্ত এক পাঠ‍্যক্রম সাজানো হয়েছে। আই-গোট কর্মযোগী প্ল‍্যাটফর্ম এবং ইউজিসি স্বয়ম পোর্টালে এই পাঠ‍্যক্রম পরিচালিত হবে। সারাদেশে কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান সিটিআই এবং  প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এটিআই এর পাঠ‍্যক্রমেও সুসংহত ভাবে একে রাখা হয়েছে।

ডিপিআইআইটির সংশ্লিষ্ট উদ‍্যোগের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে ভারতীয় রসদ যোগানের বাস্তু ব্যবস্থাকে প্রতিযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়তাকে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে এবং আরো সক্ষম, সুস্থায়ী ও বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার উপযুক্ত পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা  গড়ার স্বার্থে উদ্ভাবনকে স্বীকৃতি দিয়ে শক্তিশালী করা, যাতে ২০৪৭ এর মধ‍্যে ভারতকে বত্রিশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হিসেবে দেশবাসীর স্বপ্নের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *