নয়াদিল্লি, ০৫ জানুয়ারি ।। আগামী ৬ জানুয়ারি আসামের হোটেল রেডিশনে “প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করার জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির একটি বৈঠক আয়োজিত হতে চলেছে৷ বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন, কেন্দ্রীয় মৎস পশুপালন ও দুগ্ধ (এমওএফএএইচএন্ডডি) মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিং৷ এছাড়াও থাকবেন, কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত রাজ মন্ত্রক, মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধ (এমওএফএএইচএন্ডডি) মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রী জর্জ কুরিয়ান, এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক ও এমওএফএএইচএন্ডডি এবং পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক এসপি সিং বাঘেল।
এই সম্মেলনে অন্যান্য বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন আসামের মৎস্যচাষ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল, অরুণাচল প্রদেশের মৎস্যমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল ডেনওয়াং ওয়াংসু ; মেঘালয়ের পশুপালন মন্ত্রী আলেকজান্ডার লালু হেক, মিজোরামের মৎস্যচাষ মন্ত্রী পু লালথানসাঙ্গা; মণিপুরের মৎস্যমন্ত্রী শ্রী এইচ ডিঙ্গো সিং; ত্রিপুরার মৎস্যমন্ত্রী সুধাংশু দাস; সিকিমের কৃষি ও মৎস্যচাষ মন্ত্রী পূরণকুমার গুরুং; এবং নাগাল্যান্ডের মৎস্যচাষ মন্ত্রী এ পাংজুং জামির। এই ইভেন্টটি হাইব্রিড মোডে পরিচালিত হবে।
পিএমএমএসওয়াই-এর আওতায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার প্রধান কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্বনির্ভর মৎস্য চাষ ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে। এনএফডিপি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, কেসিসি কার্ড, সেরা এফএফপিও এবং মৎস্যচাষ স্টার্ট-আপের জন্য পুরষ্কার সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৎস্যজীবীদের শংসাপত্র বিতরণ করা হবে।
এই ক্ষেত্রের বিকাশের গতি অব্যাহত রাখতে এবং বজায় রাখতে ভারত সরকারের মৎস্য বিভাগ সিকিমের সোরেং জেলার মৎস্যচাষ ক্লাস্টারকে জৈব মৎস্যচাষ ও জলজ চাষ কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হবে । সিকিমের এই জৈব মৎস্য ক্লাস্টার বিভিন্ন অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক সুবিধা প্রদান করবে এবং সুস্থায়ী জলজ চাষে নেতৃত্বের ভূমিকায় তুলে ধরতে পারবে৷
আইসিএআর (মৎস্যচাষ) এর ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল ডঃ জে কে জেনার একটি প্রযুক্তিগত অধিবেশন “উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মৎস্য ও জলজ চাষে সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক একটি উপস্থাপনা থাকবে এই ইভেন্টে৷ অধিবেশনটি এই অঞ্চলে মৎস্য ও জলজ চাষ খাতের নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলি যেমন সম্পদ ব্যবস্থাপনা, পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, বাজারে প্রবেশাধিকারের সমস্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মত বিষয়গুলি আলোকপাত করবে। ডঃ জেনা এই অঞ্চলের অনন্য পরিবেশগত ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার জন্য উপযুক্ত সম্ভাব্য সমাধান এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতিগুলিও তুলে ধরবেন এবং এই গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলির স্থায়ী উন্নয়ন এবং বৃদ্ধিকে সহযোগিতা করার জন্য ব্যবহারিক কৌশল সম্পর্কে তুলে ধরবেন৷
এই সম্মেলনটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (এনইআর) মৎস্য ও জলজ চাষের বিকাশকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে। এটি আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, উদ্ভাবনী সমাধানগুলি শেয়ার করে নিতে এবং এই অঞ্চলের অনন্য জলজ সম্পদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থায়ী অনুশীলনগুলি তুলে ধরার সুযোগ প্রদান করবে। এই সম্মেলনটি মৎস খাতের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, উন্নত কৌশলকে উৎসাহিত করবে এবং বাজার সংযোগকে জোরদার করবে, উৎপাদনশীলতাকে বাড়াবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।
এই যুগান্তকারী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, সরকার মৎস্য উৎপাদনে উত্তর পূর্বাঞ্চলকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, সুস্থায়ী অনুশীলনকে উৎসাহিত করা এবং এই অঞ্চল জুড়ে জেলে সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রাকে জোরদার করার লক্ষ্য নিয়েছে।
প্রেক্ষাপট
ভারতীয় মৎস্য ও জলজ পালন খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যা প্রায় ৩ কোটি জেলে ও কৃষকের জীবিকা নির্বাহ করে। ২০১৯ সালে এর জন্য একটি সম্পূর্ণ মন্ত্রক এবং মৎস্য অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে এই খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই পদক্ষেপটি মৎস্য খাতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছে এবং ২০১৫ সাল থেকে এই খাতে বিনিয়োগ ৩৮,৫৭২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
সমৃদ্ধ জলজ জীববৈচিত্র্য এবং বিশাল জলসম্পদের জন্য বিখ্যাত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (এনইআর) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করণ এবং জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। মাছের বৈচিত্র্যের জন্য বিশ্বব্যাপী হটস্পট হিসাবে বিখ্যাত, এই অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্র মাছের বিভিন্ন প্রজাতির বিস্তৃত পরিচর্যা করে, মৎস্যচাষকে তার অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে গড়ে উঠেছে। প্রায় ৪২২ টি মাছের প্রজাতি এখানে পাওয়া গেছে৷ ২০১৪-১৫ সাল থেকে নীল বিপ্লব এবং প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার (পিএমএমএসওয়াই) অধীনে ২,১১৪.৭৩ কোটি টাকার সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে এই অঞ্চলটির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এর ফলে হ্যাচারি, বৈজ্ঞানিক মাছ চাষের কৌশল এবং পরিকাঠামোর অগ্রগতির পাশাপাশি মাছের উৎপাদন ২০১৩-১৪ সালে ৩.৭৮ লক্ষ মেট্রিক টন থেকে ২০২৩-২৪ সালে ৬.৪১ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।