লখনউ, ১২ জানুয়ারি (হি.স.): অযোধ্যায় শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দির নির্মাণের সংকল্প এখন প্রায় শেষের পথে। এই সংকল্পকে সাকার করার কৃতিত্ব রাম ভক্তদের। সেই রামভক্তদের মধ্যে একজন প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতীয় জনতা পার্টির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি লালকৃষ্ণ আডবাণী । তাঁর রাম রথযাত্রা সারা দেশে মন্দির মুক্তি আন্দোলনে নতুন প্রাণ দিয়েছিল।
আডবাণী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগ্রহী। এই মুহূর্ত আনার জন্য, রামলালার একটি বিশাল মন্দির তৈরি জন্য, এবং তাঁর সংকল্প পূরণ করার জন্য আডবাণী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ৷ মাসিক পত্রিকা ‘রাষ্ট্রধর্ম’-এর বিশেষ সংখ্যার জন্য লেখা একটি প্রবন্ধে তিনি এসব অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। এই বিশেষ সংখ্যাটি ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত হবে।
তাঁর রথযাত্রার কথা স্মরণ করে আডবাণী লিখেছেন, রথযাত্রার পর প্রায় ৩৩ বছর কেটে গেছে। ১৯৯০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে রথযাত্রা শুরু করার সময় আমরা জানতাম না ভগবান রামের প্রতি যে বিশ্বাস নিয়ে এই যাত্রা শুরু করা হচ্ছে তা দেশে আন্দোলনের রূপ নেবে। সে সময় রথযাত্রায় আমার সহকারী ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সারা রথযাত্রায় তিনি আমার সঙ্গেই ছিলেন। সেই সময়েই রাম তাঁর মন্দিরের সংস্কারের জন্য তাঁর একান্ত ভক্তকে বেছে নিয়েছিলেন। আডবাণী নিজেই বিশ্বাস করেন যে অযোধ্যা আন্দোলন ছিল তাঁর রাজনৈতিক যাত্রার সবচেয়ে নির্ধারক রূপান্তরমূলক ঘটনা, যা তাঁকে ভারতকে পুনরায় জানার এবং এই প্রক্রিয়ায় নিজেকে পুনরায় বোঝার সুযোগ দিয়েছে।
বলা হয়, রথযাত্রা যতই এগোচ্ছিল, ভিড়ও তার সঙ্গে যোগ হচ্ছিল। জনসমর্থন গুজরাট থেকে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত এবং পরবর্তী সমস্ত রাজ্যে ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যাত্রার সময় ‘জয় শ্রী রাম’ এবং ‘সৌগন্ধ রাম কি খাতি হে, মন্দির ওয়াহি বানায়েঙ্গে’ এই গগণভেদি স্লোগান অনুরণিত হতে থাকত। তিনি লিখেছেন, ‘রথযাত্রার সময় অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছিল যা আমার জীবনকে প্রভাবিত করেছিল। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে অচেনা গ্রামবাসীরা রথ দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে আমার কাছে আসতেন। তারা প্রণাম করতেন। এরপর রামের জয়জয়াকার করে চলে যেতেন।’ এটি একটি বার্তা ছিল, যে সারা দেশে অনেক লোক রয়েছে যারা রাম মন্দিরের স্বপ্ন দেখেছেন। তারা জোরপূর্বক তাদের বিশ্বাসকে আড়াল করে জীবনযাপন করছিলেন। ২২ জানুয়ারি, ২০২৪-এ মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে, সেই গ্রামবাসীদের চাপা ইচ্ছাও পূরণ হবে।
এ ছাড়া তিনি আরও বলেন, যে কোনও ঘটনা বাস্তবে ঘটার আগেই মানুষের মন ও মস্তিষ্কে রূপ নেয়। তখন আমার মনে হয়েছিল, যে নিয়তি ঠিক করেছে যে একদিন অবশ্যই অযোধ্যায় শ্রী রামের একটি বিশাল মন্দির তৈরি হবে। ব্যস, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
তিনি আরও বলেন, ‘রথযাত্রা শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমি একজন সারথি। রথযাত্রার প্রধান বার্তাবাহক ছিলেন রথ নিজেই এবং পূজার যোগ্য ছিলেন কারণ এটি মন্দির নির্মাণের পবিত্র উদ্দেশ্য পূরণ করতে শ্রী রামের জন্মস্থান অযোধ্যায় যাচ্ছিল।’ তাঁর লেখায়া তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীকেও স্মরণ করেছেন। প্রাণ প্রতিষ্ঠার জমকালো অনুষ্ঠানে তাঁর অনুপস্থিতি অনুভব করছেন তিনি।
আডবাণী বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন মন্দির উদ্বোধন করবেন, তিনি আমাদের ভারতের প্রতিটি নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করবেন। আমি প্রার্থনা করি, এই মন্দিরটি সমস্ত ভারতীয়কে শ্রী রামের গুণাবলী গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করবে।
উল্লেখ্য, লালকৃষ্ণ আডবাণী ১৯৯০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রা বের করেছিলেন। এই রথযাত্রা রামভক্তদের অবদমিত বিশ্বাসকে জাগ্রত করেছিল।