তিনদফা দাবিতে এআইডিএসও-র বিক্ষোভ করিমগঞ্জে, স্মারকপত্র ডিসিকে

করিমগঞ্জ (অসম), ৭ জুন (হি.স.) : বুধবার আজ তিনদফা দাবির ভিত্তিতে এআইডিএসওর পক্ষ থেকে ছাত্র বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেওয়া হয় করিমগঞ্জে । সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নজরুল মূর্তির পাদদেশ থেকে জেলাধিপতির কার্যালয় পর্যন্ত মিছিল করে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু মিছিল শুরুর প্রাক্কালে জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মিছিল বের করতে বাধা প্রদান করে এবং সেখানে পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ আই ডি এস ও”র নেতৃবৃন্দের বাচশা হয় এবং পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি সম্মিলিত পোস্টার ব্যানার নিতে বাধা দান করে ।

তৎক্ষণাৎ সংগঠনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে জেলাধিপতির কার্যালয়ের সম্মুখে বিক্ষোভ প্রদর্শন সংগঠিত করার এবং সেই অনুসারে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় দলের কর্মকর্তারা এবং ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দরা স্লোগানে স্লোগানে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তুলে জোরালো কন্ঠে বলতে থাকে মেট্ৰিক ও হায়ার সেকেন্ডারি পাস সকল ছাত্র ছাত্রীদের বিনামাশুলে ভর্তির ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।ছাত্র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মেট্রিক পরীক্ষা তুলে দেওয়া চলবে না।শিক্ষার ব্যবসায়ীকরণের লক্ষ্যে তিন বছরের পরিবর্তে চার বছরের স্নাতক কোর্স চালু করা চলবে না।

ছাত্র আন্দোলনে পুলিশি হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে জেলাধিপতি কার্যালয়ের সামনে সংগঠনের জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ স্থানীয় জনসাধারণ এবং ছাত্রদের সামনে আজকের এই কার্যসূচীর বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন এবং কার্যসূচিতে যে পুলিশী হস্তক্ষেপ করা হয় তা সবিস্তারে বর্ণনা করেন এবং করিমগঞ্জ জেলার ছাত্র ছাত্রীদের কিছু বিশেষ সমস্যা ও রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন করে নিয়ে আসা কিছু পরিবর্তনের পরিপেক্ষিতে উদ্ভূত সমস্যা সম্পর্কে নেতৃবৃন্দরা কিছু বক্তব্য তুলে ধরেন।

করিমগঞ্জ জেলায় উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকার ফলে ছাত্র ছাত্রীদের মেট্ৰিক ও হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে পড়াশোনা করতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। বহু ছাত্ৰ-ছাত্ৰী সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট সংখ্যক আসন না থাকায় ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। অনেকে গ্ৰামাঞ্চল থেকে শহরে এসে ভর্তি হলেও আর্থিক অসুবিধার জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। ফলে মাঝপথেই শিক্ষাঙ্গন থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়।

নেতৃবৃন্দরা এও লক্ষ্য করছেন যে অসম সরকার আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে মেট্রিক পরীক্ষা তুলে দিয়ে নবম শ্ৰেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সেমিস্টার প্ৰথা প্ৰবৰ্তন ও স্নাতক স্তরে চার বছরের ডিগ্রি কোর্স চালু করতে চাইছে। আসামের মতো একটি রাজ্যে যেখানে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য শিক্ষকের পদ খালি পড়ে রয়েছে। বহু কলেজে শিক্ষক ও কর্মচারীদের পদ শূন্য সেখানে এধরনের ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়াই তো অসম্ভব হয়ে পড়বে। পাশাপাশি নবম শ্রেণি থেকে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হলে ছাত্র ছাত্রীদের বছরে দু’বার পরীক্ষার জন্য ফিজ দিতে হবে এবং নতুন বই খাতা কিনতে হবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল অধ্যয়ন ও পুনঃঅধ্যয়নের মধ্য দিয়ে জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে যে কোর্স চালু ছিল তা সংকোচিত হলে প্রকৃত জ্ঞান লাভের পরিবর্তে ছাত্র ছাত্রীরা কিছু তথ্য জানার বাইরে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা থেকে বঞ্চিত থাকবে যা ভবিষ্যতে তাদেরকে পঙ্গু করে দেবে। স্নাতক স্তরে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। দরিদ্র পরিবারের ছাত্ৰ-ছাত্রীরা বাড়তি এক বছরের বোঝা বইতে না পেরে বহু ছাত্ৰ-ছাত্ৰী কার্যত উচ্চ শিক্ষা লাভের আগ্রহ হারাবে। তাই এই সর্বনাশা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ডি এস ও নেতারা ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানায। নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা সম্পাদিকা সঞ্চিতা শুক্ল এবং জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য জয়দীপ দাস।

ছাত্র সংগঠন এ আই ডি এস ও”র করিমগঞ্জ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো সমাধানে উদ্যোগী হতে জোরালো দাবি উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে জেলাধিপতির নিকট একটি স্মারক পত্র প্রদান করা হয় । এতে দাবী করা হয় মেট্ৰিক ও হায়ার সেকেন্ডারি পাস সব ছাত্র ছাত্রীর বিনামাশুলে ভর্তির ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মেট্রিক পরীক্ষা তুলে দেওয়া চলবে না। শিক্ষার ব্যবসায়ীকরণের লক্ষ্যে তিন বছরের পরিবর্তে চার বছরের স্নাতক কোর্স চালু করা চলবে না।

স্নারকপত্র প্রদানের সময় জেলাধিপতি মৃদুল কুমার যাদব জানান তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির সমস্যা কে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখবেন এবং এই স্মারকপত্রটি শিক্ষা মন্ত্রীর নিকট পাঠাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *